জমানো টাকায় সারা দেশ ঘুরেছি : সাদিদ
সাদিদ আল আমাজের জন্ম মাগুরায়। পড়াশোনা করছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি ঘুরে বেরানো তার নেশা। সম্প্রতি ঘুরেছেন দেশের সবক’টি জেলা। তার সেই ভ্রমণের আইডিয়া এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফয়সাল খান-
জাগো নিউজ: কখন থেকে ভ্রমণ করছেন?
সাদিদ আল আমাজ : ভ্রমণের পালাটা শুরু হয়েছিল ছোটবেলা থেকেই। বাবা-মায়ের কোলে চড়ে ঘুরতে যেতাম তখন। তারপর স্কুল এবং বিভিন্ন সংগঠনের পিকনিকে চলে যেতাম। বাবা-মা কখনোই বাধা দিতেন না। তারাও চাইতেন আমি ঘুরি, শিখি।
জাগো নিউজ : সারা দেশ ঘোরার আইডিয়া কোথায় পেলেন?
সাদিদ আল আমাজ : সারা দেশ ঘোরার ইচ্ছে আমার কখনোই ছিল না। কিন্তু ঘোরার ইচ্ছে ছিল। আর এভাবে ঘুরতে ঘুরতেই হয়ে গেছে। অনেকটা একাকিত্ব বা আশপাশের মানুষের প্রতি অভিমান থেকেই একা একা সারা দেশ ঘুরে ফেলেছি। কারণ আমার ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু বন্ধুদের সময় হতো না, আবার বন্ধুদের সময় হলে আমার সময় হতো না। ভার্সিটির পরীক্ষা, ক্লাস থাকতো। তাই চাইলেও যেতে পারতাম না। তারপর একদিন একা শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে সবকিছু ছেড়ে বেরিয়ে গেলাম।
জাগো নিউজ : ৬৪ জেলা ভ্রমণের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কী ছিল?
সাদিদ আল আমাজ : ঠিক ও রকমভাবে কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নিয়ে আমি যাত্রা শুরু করিনি। আমি কম খরচে আমার দেশটাকে দেখতে চেয়েছিলাম। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বন্ধুদেরও দেখাতে চেয়েছিলাম। সবার তো সব জায়গার যাওয়ার সুযোগ হয় না। তাই তাদের সঙ্গে আমার ভ্রমণের ছবি ও গল্প শেয়ার করে তাদেরকেও আমার সঙ্গী করে নিয়েছিলাম। মূলত কম খরচে ভ্রমণ আর বাংলার সৌন্দর্য দু’চোখ ভরে দেখার পিপাসাই ছিল আমার ভ্রমণের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
জাগো নিউজ : আপনার এ ভ্রমণে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পেয়েছেন কী?
সাদিদ আল আমাজ : না। আমি কখনোই কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পাইনি। বরং কেউ কখনো শুনলে আমার এ নেশাকে পাগলামি ভেবে হেসেছে। নিজের জমানো কিছু টাকা এবং পরিবারের সাপোর্ট ছিল। এভাবেই হয়ে গেছে।
জাগো নিউজ : ভ্রমণের ক্ষেত্রে পরিবারের সহযোগিতা পাচ্ছেন কেমন?
সাদিদ আল আমাজ : আমার বাবা সরকারি চাকরিজীবী। তাই চাকরি এবং নিজের ইচ্ছের সুবাদে তিনি অনেক আগেই সারা দেশ ঘুরে ফেলেছেন। সে ক্ষেত্রে বলতে গেলে, আমি অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। বাবা-মা সবসময় আমাকে সাপোর্ট দিয়েছেন। আমি কোন জেলায় গেলে বাবা আমাকে ফোন দিয়ে বলে দিতেন, কোন কোন জায়গায় ঘুরতে হবে। সে সব জায়গায় কিভাবে যেতে হয়।
জাগো নিউজ : ভ্রমণ করতে গিয়ে কোনো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন?
সাদিদ আল আমাজ : সব কাজেই তো বাধা থাকবে, তাই না? আর এটা তো ভ্রমণ। বাধা বলতে- অনেকবারই টাকার জন্য থেমে যেতে হয়েছে। কিছুদিন অপেক্ষা করে টাকা গুছিয়ে আবার শুরু করেছি। মন খারাপ হয়েছে, কষ্ট পেয়েছি, ভেঙে পড়েছি কিন্তু থেমে যাইনি কখনোই। আমি জানতাম, আমি আমার জার্নি শেষ করতে পারবো এবং আমি শেষ করেছি।
জাগো নিউজ : মধুর কোনো স্মৃতি থাকলে বলুন-
সাদিদ আল আমাজ : মধুর স্মৃতি তো অনেক আছে। তার মধ্যে একটা ছোট্ট ঘটনা বলি- তখন আমি বাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। সকাল বেলা মাত্র ট্রেন থেকে নেমেছি। স্টেশন থেকে বেরিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি একটি দোকানে এক লোক একটি ছোট্ট ছেলেকে মারছেন। ছেলেটির বয়স বড়জোর ৬-৭ বছর হবে। যে যার মতো রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নেই! আমি দৌড়ে গিয়ে থামালাম তাকে। জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কী হয়েছে? এভাবে মারছেন কেন?’ তিনি বললেন, ছেলেটার বাবা-মা ওর ৩ বছর বয়সে মারা যান। তিনি সম্পর্কে ছেলেটির চাচা। ওকে দেখাশোনা করেন। মাঝে মাঝে দোকানের ক্যাশে বসান। কিন্তু ও টাকা চুরি করে। এর আগেও কয়েকবার করেছে। তাকে বললাম, ‘ছেলেটাকে স্কুলে দিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘গরিব মানুষের আবার স্কুল।’ তারপর তাকে অনেকক্ষণ ধরে বোঝালাম। শেষ পর্যন্ত তিনি ছেলেটাকে স্কুলে দিতে রাজি হলেন।
তারপর আমি যখন চলে আসবো; তিনি তখন জিজ্ঞাসা করলেন, আমি এমন হাফপ্যান্ট, টিশার্ট আর কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কোথায় যাই? তখন তাকে আমার ভ্রমণের বিস্তারিত বললাম। তিনি বেশ অবাক হলেন। আমি চলে আসার সময় জোর করে এক বোতল জুস আর এক প্যাকেট বিস্কুট দিলেন পথে খাওয়ার জন্য! আমি জানি না তাদের সঙ্গে আর কখনো দেখা হবে কিনা। কিন্তু আমার খুব করে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় যে, তিনি ছেলেটাকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। ছেলেটি প্রতিদিন সকালে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে যাচ্ছে।
জাগো নিউজ : ভ্রমণ নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সাদিদ আল আমাজ : আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা একটাই- সেটি হচ্ছে, এভারেস্টের চূড়ায় ওঠা। সারা দুনিয়াকে নিজের পায়ের নিচে রাখতে পারার মতো অভিজ্ঞতা আর কী-ই বা হতে পারে?
এসইউ/পিআর