ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

আতিথেয়তার শহর চাঁদপুর

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ | প্রকাশিত: ১২:১৩ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

স্টার আল কায়েদ জুট মিল দেখে পছন্দ হয়নি আমাদের। কারণ পিকনিক করার মতো সব ধরনের সুবিধা এখানে নেই। ইকরাম ভাইকে বিষয়টি বললেন সোহাগ ভাই। ইকরাম ভাই চিন্তায় পড়ে গেলেন। শুরু হলো বিকল্প স্পটের সন্ধান। ডাকাতিয়া নদী নৌকায় পার হয়ে এপারে আসতেই চোখে পড়ে ‘মুনিরা ভবন’। দারুণ মনোরম প্লেস। পিকনিক করার জন্য পারফেক্ট। স্থানীয় বিএনপির আহ্বায়ক মানিক ভাইয়ের বাংলো এটি। তিনি কি রাজি হবেন? এখন পর্যন্ত বাইরের কেউ এখানে পিকনিক তো দূরের কথা, অনুমতি ছাড়া ঢুকতেই পারেননি।

jago-cover

ইকরাম ভাই একটু চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি ফোন দিলেন বেশকয়েকবার। ফোন ধরেননি মানিক ভাই। ইকরাম ভাইয়ের সঙ্গে আমরা বাড়িটি ঘুরে ঘুরে দেখে মুগ্ধতা নিয়ে ফিরে এলাম। আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন মতলবের সাংবাদিক লাভলু ভাই। ইকরাম ভাই পত্রিকার কাজ থাকায় চলে গেলেন। আমরা দুপুরের খাবারের জন্য লাভলু ভাইকে অনুসরণ করতে থাকি। আতিথেয়তার শুরু এখানেই।

jago-cover

দুপুরের ভরপুর খাবারের পর ফিরে এলাম হোটেলে। বিকেলে ফোন করলেন কবি ও কথাশিল্পী মুহাম্মদ ফরিদ হাসান। সন্ধ্যায় চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর সাহিত্য আড্ডায় যাওয়ার জন্য বললেন। আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে গেলাম। সেখানে দেখা হলো চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জি এম শাহীন ভাইয়ের সঙ্গে। তার সঙ্গে চাঁদপুরে মুখোমুখি দেখা এই প্রথম। পরোক্ষভাবে পিকনিকের আয়োজনে অনেক কিছুই করে যাচ্ছেন তিনি।

jago-cover

প্রেসক্লাব ভবন দেখে আমরা অবাক। তিনতলা ভবনে মিলনায়তন, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, নামাজের স্থান, সংবাদ সম্মেলন কক্ষ মিলিয়ে বিশাল এন্তেজাম। জেলা শহরে এমন প্রেসক্লাব ভবন সচরাচর চোখে পড়ে না। প্রেসক্লাবে বসে কথা হচ্ছে সভাপতি শরীফ চৌধুরী এবং শাহিন ভাইয়ের সঙ্গে। কথা হচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ে। অবশেষে জানা গেল মুনিরা ভবনেই হচ্ছে আমাদের ফ্যামিলি ডে। আর সব আয়োজনের জন্য এবার তৎপর হয়ে উঠলেন শাহিন ভাই। বাবুর্চি, ডেকোরেশন, বাজার সবকিছুই ম্যানেজ করলেন ফোনে ফোনে। আমরা শুধু অতিথির মতো উপভোগ করে যাচ্ছি সব।

jago-cover

সন্ধ্যায় দেখা করতে এলেন জাহিদ নয়ন। তার সঙ্গে সন্ধ্যার পর গেলাম সাহিত্য আড্ডায়। আড্ডায় গিয়ে আরো অবাক হলাম। জেলা শহরে একটি আড্ডায় প্রায় ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ জন সাহিত্যকর্মী বসে আছেন। একজন কথা বলছেন, সবাই চুপচাপ শুনছেন। আমাকেও সুযোগ দেওয়া হলো কিছু বলার। আমি আমার মুগ্ধতার কথা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারলাম না। তাদের কাছ থেকে উপহার পেলাম বই, লিটলম্যাগ, সাহিত্যপত্র ইত্যাদি। তবে ব্যস্ততার কারণে বেশিক্ষণ আড্ডা দিতে পারিনি।

jago-cover

কাজের ফাঁকে ফাঁকে বড় স্টেশন, ত্রিমোহনা, রক্তধারা, ইলিশ চত্ত্বর, ওয়ান মিনিট আইসক্রিম, ইলিশের আড়ৎসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে দেখালেন শাহিন ভাই। সন্ধ্যায় সম্পদ সাহার দোকানের মিষ্টি এবং ওয়ান মিনিট আইসক্রিম দারুণ লেগেছে। মনে হয়, এখনো জিহ্বায় লেগে আছে। এসময় সঙ্গে ছিলেন প্রেসক্লাবের সভাপতি শরীফ চৌধুরী। রাতে শাহিন ভাইয়ের সৌজন্যে বিশাল আপ্যায়ন। মেঘনা নদীর তাজা ইলিশ ভাঁজি, চিংড়ি ফ্রাই, সবজি, ডাল মিলিয়ে জম্পেশ খাওয়া-দাওয়া হলো। চাঁদপুরের এ আতিথেয়তা কখনোই ভোলার নয়।

jago-cover

একদিন একরাত থাকার পর হোটেল গ্রান্ড হিলশা ছেড়ে দিলাম। বারোটা বাজার পর উঠলাম সড়ক বিভাগের রেস্ট হাউজে। শাহিন ভাই ফোনে ফোনে বলে দিলেন কেয়ারটেকারকে। শাহেদ ভাই পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন। সোহাগ ভাই গেলেন ইজতেমা দেখতে। এবছর বৃহদাকারে ইজতেমা হচ্ছে চাঁদপুরে। শাহিন ভাই তাকে নিয়ে গেলেন।

jago-cover

ইজতেমা দেখা শেষে সোহাগ ভাই এলেন রুমে। কাল সকালে জাগো নিউজের বিরাট আয়োজন। ফ্রেশ হয়েই তিনি আমাদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন বাজার করার উদ্দেশে। সন্ধ্যায় বড় স্টেশনে চা খেয়ে কিছু সময় কাটিয়ে রাতে পাল বাজার থেকে মুরগি, চাল, তরকারিসহ যাবতীয় কেনাকাটা শেষ করা হয়। শাহিন ভাইয়ের চমৎকার ব্যবস্থাপনায় শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন শাহেদ ভাইও। তিনি চমৎকার একজন মানুষ। অকপটে সব কাজেই হাত লাগান। আমরা অতিথি বলে কষ্টই করতে দেন না। প্রেসক্লাব সভাপিত শরীফ চৌধুরীর সঙ্গে আড্ডা দিয়েও অনেক ভালো লাগলো।

jago-cover

দেখতে দেখতে ঘনিয়ে এলো ফ্যামিলি ডের কাঙ্ক্ষিত সময়। ১ ডিসেম্বর ২০১৭। সকাল থেকেই ব্যস্ততা। রান্না-বান্নাসহ বিভিন্ন আয়োজনে ব্যস্ত সবাই। মুনিরা ভবনের জগলুল ভাইও হাতের অসুস্থতা নিয়ে এগিয়ে এলেন সাহায্য করতে। মুনিরা ভবনের সাতাশজন কর্মচারীর কর্মদক্ষতায় আমরা অতিথি হয়েই থাকলাম। দুপুর একটার দিকে চলে এলো পূবালী-৭। ঘাটে ভিড়তেই সবাই নেমে পড়লেন। মুনিরা ভবন জেগে উঠলো জাগো নিউজের কর্মবীরদের পদচারণায়।

jago-cover

দিনভর খেলাধুলা, খাওয়া-দাওয়া, হাসি-আনন্দ শেষে বিকেলের আলো কমে আসার সাথে সাথে ঢাকার উদ্দেশে ফিরতে হলো আমাদের। সবার হয়তো অনেক ভালো লেগেছে। আমারও লেগেছে। তবে লঞ্চে ওঠার পর বিষাদে ছেয়ে গেল মন। তিন দিনের সফরে চাঁদপুরের অকৃত্রিম ভালোবাসায় বুকের বামপাশটা চিনচিন করে উঠল। সোহাগ ভাইও কেবিনে গিয়ে ঝিম মেরে শুয়ে রইলেন। আনোয়ার ভাই চেয়ারে বসে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন আকাশের দিকে। আমি লঞ্চের একেবারে চূড়ায় উঠে দু’হাত প্রসারিত করে হৃদয়ভরা ভালোবাসা জানিয়ে বিদায় নিলাম অতিথিপরায়ণ চাঁদপুর থেকে।

এসইউ/এমএস

আরও পড়ুন