আঞ্চলিক ভাষায় কনটেন্ট বানিয়ে ভাইরাল সাদ্দাম মাল
ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিমনা ছেলেটা বড় হয়ে যে, দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করবে এর কিছুটা হলেও আঁচ করতে পেরেছিল তার নিজ জন্মস্থান পটুয়াখালীর কুয়াকাটার প্রান্তিক এলাকা হোসেনপাড়ার মানুষ। বলছি বর্তমানের সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম এবং বেশ কয়েকটি টেলিভিশনের নাটকে সিরিজ অভিনয়ের মাধ্যমে কনটেন্ট তৈরি করে দেশব্যাপী সারা জাগানো কনটেন্ট ক্রিয়েটর সাদ্দাম মালের কথা। নিজের নামের সঙ্গে পূর্বপুরুষের মাল পদবী যুক্ত হওয়ায় নিজের অভিনয় এবং নামের সঙ্গে বেশ মিল খুঁজে পায় দর্শকরা।
হোসেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার সময় থেকেই দেখতে ছোট্ট কালো ছেলেটি ছিল সবার থেকে আলাদা নিজের সহপাঠি, এলাকার মানুষ সবার সঙ্গে তার সাধারণ কথাবার্তাই ছিল কমেডিয়ান, বাৎসরিক স্পোর্টস, এলাকার সাংস্কৃতিক মঞ্চ অভিনয় থেকে শুরু হয় তার এই অভিনয় জগৎ। এরপর শুরু হয় কয়েকজন স্থানীয় যুবকদের নিয়ে গড়া কুয়াকাটা শিল্পী গোষ্ঠীর মঞ্চ অভিনয় সেখান থেকে জাতীয় পর্যায়ে নকশী কাথাঁর মাঠ নাটকে অভিনয়ে ছিল তার দারুণ ভূমিকা।
স্থানীয়ভাবে কাজ করলেও তার জীবনের বড় পরিবর্তন শুরু হয় কোভিড-১৯ এর সময়ে আবু বকর নামে তার এক ভাতিজার পরামর্শে এক ভাতিজা, ভাগিনা আর কয়েকজন ছোট ভাই স্থানীয় কয়েকজন যুবকদের নিয়ে শুরু হয় তার আঞ্চলিক ভাষায় কনটেন্ট নির্মাণ। বেশ দ্রুত সময়ের মধ্যেই তার অভিনীত কনটেন্টগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে ফেজবুক ও ইউটিউবে। বরিশালের ভাষায় তৈরি করা এই কনটেন্টগুলো প্রথমে বরিশালের দর্শক পরে ধীরে ধীরে দেশব্যাপী তার জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করে।
সাদ্দাম মাল যে শুধু অভিনয় করেন তা নয়, ক্যামেরার পেছনেও তিনি ভালো চিত্রটা খুঁজে বের করা, গল্প লেখা, শুটিংয়ের স্থান নির্ধারণ করা সবকিছুতেই যেন সাদ্দাম মালের রয়েছে অতুলনীয় গুণ। তার এই অভিনয় জগতে প্রাথমিক দিক দিয়ে আর সহযোগী তারই আপন ভাগিনা এস.এম আলমাস, ভাতিজা আবু বকর আবির, সাগর ও আরিফ নামের আরও দুই ছোট ভাইসহ আট থেকে দশ জনের একটি টিম কাজ করে আসছে পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে আরও অনেকে যুক্ত হয়ে কাজের সুযোগ পেয়েছে।
তার তৈরি কনটেন্টের মধ্যে দেশব্যাপী সারা ফেলে ক্রিমিনাল জামাই নামের একটি কনটেন্ট। প্রথমে একটি পর্ব প্রচার হলে যখন সেটি দর্শকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় হয় তখন এটির বেশ কয়েকটি পর্ব প্রচারিত হয়। আর এই ক্রিমিনাল জামাইয়ের মাধ্যমে তিনি দর্শকদের কাছে মোতালেব নামে বেশ পরিচিতি লাভ করে। কারণ ওই ক্রিমিনাল জামাই কনটেন্টে সাদ্দাম মাল মোতালেব নামে জামাইয়ের অভিনয় করেন। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
কনটেন্ট তৈরি করে পরিচিতির মাধ্যেমে দেশব্যাপী সারা ফেললে এক পর্যায়ে ডাক পান বিভিন্ন টেলিভিন এবং বাংলা সিনেমায় অভিনয়ের। শাকিব খান অভিনিত বাংলা সিনেমা রাজকুমার ছাড়াও বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনে-নিথর কোলাহল, ভাইরাল ভাই-৭পর্ব, ধারাবাহিক নাটক রসের হাঁড়ি বাড়াবাড়ি, হাউজ হাজবেন্ড ও ফাউল, জার্নি টু বরিশাল, লাল বাইসাইকেল, জাগরণী, ডিম, রোদ বৃষ্টির গল্প, ইলিশের গন্ধ, মেঘনার আকাশ নামে নাটকে অভিনয় করেন। বর্তমানেও রয়েছে তার অনেকগুলো টেলিভিশন কাজ যা এখনো প্রচার হয়নি।
অভিনয়ের যাত্রা নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তাকে উৎসাহ দিয়ে কাজে আটকে রাখার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তার সব দর্শকদের প্রতি, তার নিজ এলাকার মানুষের প্রতি। তবে সাদ্দাম মালের এই কাজের সঙ্গে যারা বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে প্রতিটি কাজকে আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে তাদের নিয়েই সামনের দিকে আরও সুন্দর কাজ উপহার দিতে চায় সাদ্দাম মাল।
তার তৈরি কনটেন্টগুলোতে দাড়িপাকা, মুরুব্বি চরিত্রে অভিনয় করেন সাদ্দাম মালের আপন ভাগিনা এস.এম আলমাস। নাম আলমাস হলেও দর্শকদের কাছে তিনি পরিচিত লাভ করেছেন চেয়ারম্যান হিসেবে, কারণ চেয়ারম্যান চরিত্রে বেশীরভাগ অভিনয়গুলো করেন আলমাস।
আলমাস জানান, আমার আপন মামা সাদ্দাম মাল তার সঙ্গেই আমার বেড়ে ওঠা, মানুষের ভালোবাসা নিয়ে এই পর্যন্ত আসা। তবে মামা আমার বড় হলেও কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে আমার অধিনস্ত হয়ে তাকে সবসময় অভিনয় করতে হয় যে কারণে তার আমার আসল সম্পর্কের কথা অনেকে জেনে অবাগ হোন। তিনি জানান, করোনাকালীন অলস সময়টাকে কাজে লাগাতে আমরা এই অভিনয়টা শুরু করি। সেখান থেকে আমরা আজ দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করতে পেরেছি। শুধু কনটেন্ট নয় আমরা এর মধ্যে বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছি। ধারাবাহিক নাটক হাবুর স্কলারশীপে কাজ করে আসছি। আমরা দর্শকের ভালোবাসা নিয়ে আরও অনেকদূর এগিয়ে যেতে চাই।
এছাড়াও সাগর, নিজাম ভাই, আরিফ হোসেন আপন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, আবু বকর আবির, নুরুন্নাহার রিয়া ( আখিনুর) সহ প্রায় ৮-১০ জনের একটি টিম কাজ করে এই কনটেন্ট তৈরিতে। এর বাহিরে ক্যামেরার পেছনেও কাজ করেন আরও ১০-১২ জনের একটি টিম তাদের সহযোগীতার জন্য।
সাদ্দাম মালের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রাথমিক দিকে শখ এবং ভালো লাগার জায়গা থেকে এই কনটেন্ট তৈরি শুরু করলেও এখন এটি পেশায় পরিণত হয়েছে তার। যে কারণে তার সংসার, ব্যক্তিগত আর ভবিষ্যৎ আয় সবকিছুরই উৎস এখন অভিনয়। অভিনয় দিয়ে মাসে কত টাকা আয় করেন এটা না জানালেও কনটেন্ট তৈরির টাকায়ই তার এবং প্রতিটি সহযোগীদের ভালোভাবেই চলছে সবকিছু বলে জানালেন তিনি।
তার কজের মাধ্যমে নিজ জন্মস্থান এবং দেশবাসীর মনে বেঁচে থাকতে চান সারাজীবন আর শেষ বয়সে একজন ভালো কৃষক হয়ে মিশে থাকতে চান মাটি ও মানুষের মাঝে।
কেএসকে/জিকেএস