ভিডিও EN
  1. Home/
  2. তথ্যপ্রযুক্তি

এইচএল৭ প্রযুক্তি দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে সাশ্রয়ী ও উন্নত করতে পারে

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৪:১৯ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

তানজিল আহমেদ

স্বাস্থ্যসেবা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার হলেও, বাংলাদেশের জনগণ এখনো উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পুরোপুরি উপভোগ করতে পারছে না। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে, আমাদের স্বাস্থ্যসেবা এখনো যথেষ্ট উন্নত নয় এবং সাশ্রয়ীও নয়। সাধারণত, উন্নত দেশগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়, যদিও তাদের ট্যাক্স ব্যবস্থা আমাদের তুলনায় অনেক উন্নত, যা দিয়ে তারা চিকিৎসা সেবা সহ অন্যান্য সুবিধা প্রদান করে। আমাদের দেশে স্বাস্থ্যসেবার অনেক উন্নতি হয়েছে, তবে আধুনিকায়ন এবং রোগীর সেন্সেটিভ স্বাস্থ্য ডাটা সুরক্ষার সিস্টেম এখনো সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি, যা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ডাটা এখনো সেন্ট্রালাইজড করা হয়নি, যার ফলে রোগের প্রাদুর্ভাব, বিস্তৃতি, চিকিৎসা ও মান পর্যবেক্ষণ করা যাচ্ছে না। ফলে স্বাস্থ্য ডাটা নিয়ে যারা গবেষণা করতে চান, তারা তা করতে পারছেন না। এর ফলে সামগ্রিক স্বাস্থ্য খাতের উন্নত ব্যাহত হচ্ছে। স্বাস্থ্য ডাটাকে সেন্ট্রালাইজড করার একটি আন্তর্জাতিক ফ্রেমওয়ার্ক হলো এইচএল৭, যা এই সমস্যার সমাধানে সহায়ক হতে পারে।

হেলথ লেভেল সেভেন ইন্টারন্যাশনাল (এইচএল৭) কী?

হেলথ লেভেল সেভেন ইন্টারন্যাশনাল (এইচএল৭) হলো স্বাস্থ্যসেবা তথ্য সংরক্ষণ, আদান-প্রদান এবং পুনরুদ্ধারের একটি আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড। একে স্বাস্থ্যসেবার একটি আন্তর্জাতিক নির্দেশিকা হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে।

হেলথ লেভেল সেভেন ইন্টারন্যাশনাল (এইচএল৭) কীভাবে কাজ করে?

এইচএল৭ একটি ডাটা মেসেজিং স্ট্যান্ডার্ড, যা স্বাস্থ্যসেবা সিস্টেমগুলোর মধ্যে একটি স্ট্যান্ডার্ড ডাটা আদান-প্রদানের ফরম্যাট প্রদান করে। এখানে সিস্টেম বলতে সফটওয়্যার, অ্যাপ্লিকেশন বা ডাটাবেসকে বোঝানো হচ্ছে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যসেবা সিস্টেম প্রচলিত রয়েছে; যেমন, কেউ ওরাকল ব্যবহার করে সিস্টেম পরিচালনা করে, আবার কেউ পিএইচপি বা জাভা দিয়ে তৈরি করা বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিক পরিচালনা করেন। কিছু প্রতিষ্ঠান টেলিমেডিসিন সার্ভিসের মাধ্যমে মোবাইল অ্যাপ ভিত্তিক স্বাস্থ্য প্ল্যাটফর্মও পরিচালনা করেন।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তাদের রোগীর স্বাস্থ্য ডাটা নিজেদের সার্ভারে স্টোর করতে পারে এবং একই ডাটাগুলো এইচএল৭ এর ডাটা মেসেজিং স্ট্যান্ডার্ড মেনে সরকারের সেন্ট্রাল সিস্টেমে টিসিপি/আইপি প্রোটোকলের মাধ্যমে পাঠাতে পারে। সেন্ট্রাল সিস্টেমে যখন ডাটা পাঠানো হয়, তখন তা এনক্রিপ্টেড অবস্থায় থাকে। সেন্ট্রাল সিস্টেম ডাটা তার ডাটাবেসে গ্রহণ করতে এইচএল৭ এর ফরম্যাট ব্যবহার করে ডিক্রিপ্ট করে এবং তারপর স্টোর করে। যখন অন্য কোনো ক্লিনিক বা হাসপাতাল একই রোগীকে দেখবে, তখন তার পূর্বের সব ডাটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে।

অর্থাৎ কোন প্রতিষ্ঠান কোন ধরনের স্বাস্থ্যসেবা সিস্টেম ব্যবহার করছে, তা দেখা জরুরি নয়; রোগীর কেবল এনআইডি নম্বর অথবা ফোন নম্বর দেওয়ার মাধ্যমে তার চিফ কমপ্লেইন, ভাইটাল সাইন, প্রেসক্রিপশন, টেস্ট রিপোর্টসহ সব ডাটা চলে আসবে যে কোনো হাসপাতালের সিস্টেমে।

আমাদের বর্তমান স্বাস্থ্যসেবার ডাটা রাখার পদ্ধতি

আমাদের দেশে সাধারণত রোগীর ডাটা প্রতিটি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের নিজস্ব ডাটা সেন্টারে সংরক্ষিত থাকে, যেখানে হাসপাতালগুলোর মধ্যে ডাটা আদান-প্রদানের কোনো ব্যবস্থা নেই। এর ফলে একজন রোগী যদি পাঁচটি হাসপাতালে যান, তবে প্রতিটি হাসপাতালেই নতুন করে রোগীর ফাইল তৈরি করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে একই টেস্ট বিভিন্ন হাসপাতালে পাঁচবার আলাদাভাবে করা হয়, যা অর্থ এবং সময়ের অপচয় ঘটায়। এতে রোগীর ভোগান্তি বেড়ে যায় এবং সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় রোগীরা তাদের পুরোনো মেডিক্যাল রেকর্ড হারিয়ে ফেলে, যার কারণে তাদের পুনরায় চিকিৎসা নিয়ে একই টেস্ট করতে হয়।

আমাদের স্বাস্থ্যখাতে কীভাবে (এইচএল৭) কাজে লাগানো যেতে পারে?

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির জন্য অর্থনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং শিক্ষাগত নানা ক্ষেত্রে রয়েছে, যেগুলো নিয়ে অর্থনীতিবিদ বা চিকিৎসকরা চিন্তা করতে পারেন। তবে তথ্যপ্রযুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে বললে, উন্নত বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার তুলনায় আমরা প্রযুক্তিগতভাবে অনেক পিছিয়ে আছি। রোগ নিয়ে গবেষণা হোক বা জনগণকে উন্নত সেবা প্রদান, উভয় ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যখাতে প্রযুক্তি ও ডিজিটালাইজেশনের কোনো বিকল্প নেই।

এইচএল৭ প্রযুক্তি স্বাস্থ্য ডাটা কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করবে এবং হাসপাতাল, ক্লিনিক, মোবাইল অ্যাপভিত্তিক টেলিমেডিসিনসহ সব প্ল্যাটফর্মকে একত্রিত করবে। এর ফলে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিগ ডাটা গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা আরও সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য হবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

লেখক: আইটি স্পেশালিষ্ট, সিইও সেবাঘর, ডিরেক্টর বিডিটাস্ক লিমিটেড

কেএসকে/জিকেএস

আরও পড়ুন