ভিডিও EN
  1. Home/
  2. তথ্যপ্রযুক্তি

সিত্রাং তাণ্ডবে এখনো অচল ১০৭৬ মোবাইল টাওয়ার

সিরাজুজ্জামান | প্রকাশিত: ০৯:৫৯ পিএম, ২৭ অক্টোবর ২০২২

উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় তাণ্ডব চালানো ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে মোবাইলফোন নেটওয়ার্কে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। এর প্রভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ১৯ জেলায় ৬ হাজার মোবাইল টাওয়ার ডাউন হয়ে যায়। সিত্রাং তাণ্ডবের তিনদিন পার হলেও এখনো অচল এক হাজার ১৭৬ মোবাইল টাওয়ার। ফলে এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকার মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা।

বাংলাদেশে এখনো মোবাইল টাওয়ারের ব্যাকআপ না থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। অন্যদিকে মোবাইল ফোনে টকটাইম ও ডাটা কেনা থাকলেও তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তারা ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকায় এসব প্যাকেজের সময় বাড়ানোর দাবি জানান। তবে শুক্রবার অথবা শনিবারের মধ্যে অচল এসব টওয়ার সচল হতে পারে বলে জানিয়েছেন টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।

গত সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাতে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। ঝড়ের প্রভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ১৯ জেলায় ৬ হাজার মোবাইল টাওয়ার ডাউন হয়ে যায়। এতে টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন এসব এলাকার বাসিন্দারা। তবে টাওয়ারে ব্যাকআপ না থাকায় এই অবস্থায় নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী।

জাগো নিউজকে মন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছে বিকল্প এমন কোনো ব্যবস্থা নেই যে টাওয়ারগুলো সচল রাখতে পারবো। ওইদিন ঝড়ের কারণে এসব বিষয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপও নেওয়া যায়নি। এখন টাওয়ারগুলো সচলের চেষ্টা চলছে। তবে এবিষয়ে স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ১৯ জেলায় চার মোবাইল অপারেটরের ১৩ হাজার ৯০২টি টাওয়ারের মধ্যে ছয় হাজার টাওয়ার একেবারেই অচল হয়ে যায়। বুধবার (২৬ অক্টোবর) রাত ১০টা পর্যন্ত চার হাজার ৮৩১টি টাওয়ার সচল করা হয়। বাকি এক হাজার ১৭৬টি টাওয়ার সচলের কাজ চলমান রয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে এগুলোও সচল করা সম্ভব হবে।

এবিষয়ে বিটিআরসি’র ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ঝড়ের কারণে বিদুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং জলোচ্ছ্বাসের কারণে টাওয়ারগুলো বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশকিছু টাওয়ারে ঝড়ের কারণে পানি ঢুকেছে এবং নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে সব টাওয়ার সচল করা সম্ভব হবে।

এদিকে, আজও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশকিছু জেলায় মোবাইল নেটওয়ার্ক বিঘ্নিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। তারা বলছেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল তিনটা মোবাইল নেটওয়ার্কে সমস্যা ছিল। এসময় মোবাইলে ডাটা থাকা সত্ত্বেও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেননি অনেকেই। তারা অভিযোগ করে বলেন, এসময় শুধু মেসেঞ্জারে মেসেজ আদান-প্রদান করা গেছে। মোবাইলে কল দিলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। যদিও এর কোনো কারণ জানাতে পারেনি বিটিআরসি। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এবিষয়ে কোনো গ্রাহক বিটিআরসিতে কোনো অভিযোগ করেননি। তারপরও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।

পটুয়াখালীর বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, গ্রামীণফোনে আমার ৮ জিবির প্যাকেজ নেওয়া আছে, মেয়াদ ৩০ অক্টোবর শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু নেটওয়ার্ক না থাকায় আমি ডাটা ব্যবহার করতে পারছি না। এমনকি ফোনে কথাও বলতে পারছি না।

কক্সবাজারের বাসিন্দা মইনুল হাসান জাগো নিউজ কে বলেন, নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে ডাটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। খুবই স্লো, কিন্তু ডাটার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। মোবাইল কোম্পানিগুলোর কাছে অনুরোধ করবো তারা যেন বিষয়টি বিবেচনা করে দেখে এবং সময় বাড়ায়।

গ্রাহক স্বার্থ নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশেনর সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যেসব এলাকায় মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না তাদের টাকা ও ডাটা ফেরত দেওয়া হোক। এটা শুধু ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকায় নয়, সারা বাংলাদেশের চিত্র প্রায় একই।

তিনি বলেন, বর্তমানে ইন্টারনেটের চাহিদা মোবাইল গ্রাহকদের মধ্যে বেড়েই চলেছে। তিন হাজার ৮৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করছেন গ্রাহকরা। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১০ কোটি ৭৫ লাখ। কিন্তু বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের ইন্টারনেট ব্যবহারে দুর্ভোগের শেষ নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় গ্রাহকের ডাটা আছে অথচ গতি (ডাউনলোড স্পিড) নেই।

মহিউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, আমরা যখন অব্যবহৃত ডাটা ফেরত দেওয়ার জন্য আবেদন করলাম, তখন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী নির্দেশ দিলেন গত আগস্ট থেকে ফেরত দিতে হবে। কিছু কিছু গ্রাহক অব্যবহৃত ডাটা ফেরত পেলেও অধিকাংশ গ্রাহক তা পায়নি। জ্বালানি সংকট ও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।

এক গ্রাহক অভিযোগ করে জাগো নিউজকে বলেন, সেপ্টেম্বরের ২৩ তারিখে ৩৯৯ টাকায় ২৫ জিবি ডাটা কিনেছি। তবে মোবাইলে ফেসবুক চালানো বা হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলতে গিয়েও গতি পাইনি। একইভাবে চলতি মাসেও একই পরিমাণ ডাটা কিনে চার দিন ব্যবহার করার পর এখন আর ব্যবহার করতে পারছেন না তিনি। ২৫ জিবি ডাটা থাকার পরও গতি একেবারে কম। একই অবস্থা আরও বেশ কিছু গ্রাহকের ক্ষেত্রে।

২০১৭ সাল থেকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তিগত অভিযোগ গ্রহণ করছে না। বিটিআরসি’র কাছে হাজার হাজার অভিযোগ থাকলেও নিষ্পত্তি করতে কমিশন ব্যর্থ হচ্ছে। এর ফলে গ্রাহকদের কমিশনের প্রতি আস্থা কমে যাচ্ছে।

এইচএস/কেএসআর/জেআইএম