যেসব ফিচার নিয়ে এলো উইন্ডোজ ১১
অবশেষে বাজারে এলো উইন্ডোজ ১১। গত ৫ অক্টোবর মাইক্রোসফটের কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেমের নতুন ভার্সন উইন্ডোজ ১১ চালু করা হয়েছে। যারা উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করছেন, তারা বিনা মূল্যেই নতুন ভার্সনটিতে আপগ্রেড করতে পারবেন। নতুন নতুন সব ফিচার নিয়ে এখন গ্রাহকের কাছে উইন্ডোজ ১১।
মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ প্রধান বলেন, ‘নতুন ভার্সনটি ব্যবহারকারীদের জন্য পরিচ্ছন্ন এবং সহজতর করে তৈরি করা হয়েছে। প্রযুক্তি সম্পর্কে সবচেয়ে কম জানা মানুষও নতুন এ সিস্টেম সহজেই আপগ্রেড করতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ ব্যবহারকারীরা এরইমধ্যে উইন্ডোজ ইনসাইডার ট্রায়াল প্রোগ্রাম ব্যবহার করে নতুন অপারেটিং সিস্টেমটি পরীক্ষা করেছেন। এতে তারা কোনো সমস্যা দেখতে পাননি। সিস্টেমটি এখন আপগ্রেডের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’
উইন্ডোজ ১১-এর নকশায় সুনির্দিষ্ট পরিবর্তন আনা হয়েছে। টাস্কবারের একেবারে কেন্দ্রে ডিফল্ট আকারে থাকবে স্টার্ট মেন্যু। পাশাপাশি থাকবে অন্যান্য আইকন। স্টার্ট বাটনে ক্লিক করলে এটি বারবার ব্যবহৃত অ্যাপস সম্বলিত একটি মেন্যু সামনে নিয়ে আসবে। কিছু ক্ষেত্রে এটি স্মার্টফোনের অ্যাপ মেন্যু কিংবা লঞ্চারের মতো মনে হতে পারে।
উইন্ডোজ ১০-এর স্টার্ট মেন্যুতে যে ‘টাইলস’ আছে, নতুন অপারেটিং সিস্টেম থেকে সেটি বাদ দিয়েছে মাইক্রোসফট। মূলত উইন্ডোজ ৮-এ স্টার্ট মেন্যু থেকে এটি পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছিল। এর কারণে বহু ব্যবহারকারী সমস্যায় পড়েছিলেন। এবার আর এটিকে বাদ দেওয়া হয়নি।
তবে উইন্ডোজ ১১ তৈরির ক্ষেত্রে মানুষ কীভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করে, সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে। ব্যবহারকারীরা কোথায় ক্লিক করতে চান, কম্পিউটারের কোন অংশে তাদের নজর থাকে। তা এতদিন গবেষণার পর স্টার্ট বাটনের অবস্থান ঠিক করা হয়েছে। উইন্ডোজ ১১-এর ক্ষেত্রে স্টার্ট বাটন আছে স্ক্রিনের একেবারে মাঝখানে।
পুরো সিস্টেমে গোলাকার নকশা করা হয়েছে। এর মেন্যু এবং ফোল্ডার দেখার ব্যবস্থা সহজ করা হয়েছে। উইন্ডোগুলোকে সাজানো এবং গ্রিডে ভাগ করার অপশনটি নতুন ও আরও উন্নত। ২০০৭ সালের উইন্ডোজ ভিস্তার গুরুত্বপূর্ণ একটি ফিচার উইজেট ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে তখন উইজেটকে স্ক্রিনে যে কোনো জায়গায় ইচ্ছেমতো রাখা যেত। কিন্তু এখন উইজেটগুলো বামপাশের একটি সাইডবারে থাকবে। এগুলো যুক্ত থাকবে মাইক্রোসফট সার্ভিসের সঙ্গে।
উইন্ডোজ ১১-এর ইন্টারফেস ও নকশায় পরিবর্তন ছাড়াও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্কাইপের স্থান নেওয়া মাইক্রোসফট টিমস এবং এক্সবক্স অ্যাপে যে সিস্টেম ইন্টেগ্রেশন করা হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপক প্রচারণা রয়েছে মাইক্রোসফটের বিজ্ঞাপনে। অ্যাপ স্টোরের উইন্ডোজ ভার্সন, মাইক্রোসফট স্টোরকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। এখান থেকে এখন তৃতীয় পক্ষকে তাদের অ্যাপ্লিকেশন বিক্রির সুযোগ দেওয়া হবে।
তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, উইন্ডোজ ১১-তে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের জন্য তৈরি অ্যাপসগুলোও চলবে। এটি হবে অ্যামাজন অ্যাপ স্টোরের মাধ্যমে।
প্রথম ব্যবহারকারীরা বলছেন, ‘নতুন ভার্সনের অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান ব্যবস্থাটি আগের চেয়ে দ্রুততর। তবে এটি ওয়েব অনুসন্ধানের ফলাফল প্রদর্শনের ক্ষেত্রে মাইক্রোসফটের নিজস্ব সেবা বিং এবং এজ ব্রাউজারকে অগ্রাধিকার দেয়।’
গেমারদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিও রেখেছে মাইক্রোসফট। এর নতুন ড্রাইভ প্রযুক্তি ডিরেক্ট স্টোরেজ গেম লোডের সময়ের ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা দেবে। তবে ফিচারটির সুবিধা নিতে প্রয়োজন হবে নতুন হার্ডওয়্যারের। ফলে সব কম্পিউটার নতুন এ সুবিধার সুযোগ নিতে পারবে না।
এ সুবিধা নিতে কম্পিউটারে এক ধরনের সিকিউরিটি চিপ থাকতে হবে, যেটাকে বলা হয় টিপিএম। শুধু আধুনিক কম্পিউটারগুলোতে এ চিপ যুক্ত করা হয়।
সম্প্রতি মাইক্রোসফট নতুন কিছু হার্ডওয়্যারও উন্মুক্ত করেছে, যেগুলো উইন্ডোজের নতুন ভার্সনটির সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে যেসব ব্যবহারকারী উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করছেন, তাদের কম্পিউটার সচল থাকলে নতুন এ হার্ডওয়্যারগুলোর জন্য খরচ করতে হবে না। উইন্ডোজ ১০-ই ২০২৫ সাল পর্যন্ত নিরাপত্তা আপডেট ও সাপোর্ট পেতে থাকবে।
মডেলটি মূলত নির্ভরযোগ্য এবং পিসির বয়স বিবেচনা করে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করবে। সাপোর্টিং সব মেশিন নতুন এ সংস্করণে আপডেট হতে সময় লাগবে ২০২২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এ ক্ষেত্রে যাদের পুরোনো হার্ডওয়্যার, তারা শেষের দিকে সুযোগ পাবেন। একদম প্রথমদিকে যেসব পিসি আপগ্রেডের সুযোগ পাবে, তার মধ্যে আছে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা এসার, আসুস, ডেল, এইচপি, লেনোভো ও স্যামসাং।
সূত্র: বিবিসি
কেএসকে/এসইউ/এএসএম