ভিডিও EN
  1. Home/
  2. তথ্যপ্রযুক্তি

রিয়েলমির বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

জাগো নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৬:৫৯ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের বাজারে যাত্রা শুরুর পর থেকেই, তরুণ প্রজন্মের চাহিদা ও পছন্দকে বিবেচনায় রেখে দুর্দান্ত ডিজাইন, স্পেসিফিকেশনের স্মার্টফোন ও এওআইটি পণ্য বাজারে আনার মধ্য দিয়ে দেশের স্মার্টফোন ইকোসিস্টেমের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে রিয়েলমি।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী ১০ কোটি স্মার্টফোন বিক্রির অনবদ্য মাইলফলক স্পর্শ করার পাশাপাশি ক্যানালিসের প্রতিবেদন অনুসারে দেশের বাজারে স্মার্টফোন নির্মাতা হিসেবে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে। এ উপলক্ষে এই স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে কথা বলেছেন রিয়েলমি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিম শাও।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের বাজারে রিয়েলমির কেমন প্রবৃদ্ধি হয়েছে? বর্তমানে আপনাদের সার্বিক পরিস্থিতি কী?
উত্তর: সবাইকে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, সম্প্রতি বাংলাদেশের স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে স্মার্টফোন নির্মাতা হিসেবে আমরা শীর্ষস্থান অর্জন করেছি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এদেশে যাত্রা শুরুর পর এই প্রথম আমরা বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজারে শীর্ষস্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এটি অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে, এ মাইলফলকে পৌঁছাতে রিয়েলমির সময় লেগেছে মাত্র এক বছর তিন মাস। এ তথ্য চলতি বছরের আগস্টে ক্যানালিস এস্টিমেটস (সেল ইন শিপমেন্ট), স্মার্টফোন অ্যানালাইসিস শীর্ষক রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে। পারফরম্যান্সের বিবেচনায় অন্যান্য বাজারের মতো স্থানীয় বাজারেও আমরা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে রিয়েলমির বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২৫৮ শতাংশ।

প্রশ্ন: রিয়েলমি কীভাবে বিশ্বব্যাপী ১০ কোটি হ্যান্ডসেট বিক্রির মাইলফলক অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে? প্রতিষ্ঠানটি এত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে কীভাবে?
উত্তর: দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও মাত্র তিন বছরে বিশ্বব্যাপী ১০ কোটি স্মার্টফোন বিক্রির সাফল্য অর্জনের পেছনে তিনটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম কারণই হলো–তরুণ প্রজন্মের চাহিদা বিবেচনায় রেখে বাজারে পণ্য আনা। রিয়েলমি একটি তরুণ-প্রজন্ম কেন্দ্রিক ব্র্যান্ড এবং এটিই আমাদের সাফল্য এনে দিয়েছে। আমরা তরুণ প্রজন্ম ও পেশাদারদের জন্য অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নতমানের অত্যাধুনিক স্মার্টফোন ও এওআইটি পণ্য তৈরি করেছি।

দ্বিতীয়ত, লাইট অ্যাসেট ও শর্ট চ্যানেল মডেলের ফলে রিয়েলমি আন্তর্জাতিকভাবে এত দ্রুত প্রসারিত হতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমান বিশ্ব ডিজিটাল সেবার উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল; তাই আমরা বিশ্বব্যাপী ফিজিক্যাল আউটলেট নির্মাণের পরিবর্তে অনলাইনে পণ্য বিক্রির দিকে বেশি মনোনিবেশ করেছি।

তৃতীয়ত, রিয়েলমিতে কর্মরত সবার ‘ডেয়ার টু লিপ’ দর্শনের ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে এবং বাজার সম্পর্কে তাদের সঠিক ও বাস্তবধর্মী ধারণা রয়েছে। ফলে, তারা তাদের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের প্রয়োজন সম্পর্কে অবগত এবং তাদের চাহিদা ও প্রয়োজনকে বিবেচনায় রেখে স্মার্টফোন ও অন্যান্য পণ্য বিকাশে কাজ করেন।

প্রশ্ন: রিয়েলমির পরবর্তী পদক্ষেপ কী? আগামী ৩ বছরে আপনি রিয়েলমিকে কোথায় দেখতে পাচ্ছেন?
উত্তর: আমরা দুটি বিষয়ের ওপর কাজ করব; সম্প্রসারণ কৌশল ও পণ্য উন্নয়ন কৌশল। ২০২৩ সালের মধ্যে আমরা ৩০ কোটি হ্যান্ডসেট চালু করার পরিকল্পনা করছি। ২০২২ সালের মধ্যে আরও ১০ কোটি হ্যান্ডসেট শিপিং করে ও ২০২৩ সালের মধ্যে একই মাইলফলক সম্পন্ন করে আগামী তিন বছরে আমরা দুইবার ১০ কোটির মাইলফলক স্পর্শ করতে চাই।

নতুন পণ্য বিকাশের কৌশলের অংশ হিসেবে রিয়েলমি তাদের ফ্ল্যাগশিপ পণ্যের মাধ্যমে মিড এবং হাই-অ্যান্ড মার্কেট মনোনিবেশ করবে। আমরা আশাবাদী যে, জিটি সিরিজ আমাদেরকে বাজারে প্রতিযোগিতা করতে উপযোগী করে তুলবে।

দ্বিতীয়ত, রিয়েলমি ‘১+৫+টি কৌশল’ -এর মাধ্যমে লাইফস্টাইল পণ্য তৈরি করবে। এ কৌশলে ১ মানে স্মার্টফোন, ৫ মানে ৫টি প্রধান এওআইটি পণ্য (ট্রু ওয়্যারলেস হেডফোন, স্মার্ট ওয়্যারেবলস, স্মার্ট টিভি, ট্যাবলেট ও ল্যাপটপ) এবং টি মানে হলো টেক লাইফ। অর্থাৎ, ১ স্মার্টফোন, ৫টি এআইওটি পণ্য ও টেকলাইফের সমন্বয়ে হবে রিয়েলমি এআইওটি ইকোসিস্টেম এবং রিয়েলমি হবে স্মার্ট হোম ব্র্যান্ড। এ পণ্য বৈচিত্র্য কৌশল রিয়েলমি’র লাইট অ্যাসেট ও শর্ট চ্যানেল মডেল দ্বারা সমর্থিত। তাছাড়া, যেহেতু আমরা এখন বাংলাদেশের বাজারের শীর্ষে, আমরা এ অবস্থান ধরে রাখতে চাই এবং দেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের জন্য আরও চমক আনতে যা যা করতে হবে, তার সবই করবে রিয়েলমি।

প্রশ্ন: এ বছর আপনারা কোনো ধরনের স্মার্টফোন বাজারে আনবেন? স্মার্টফোন প্রোডাক্ট লাইন নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?
উত্তর: কিছুদিন পূর্বে রিয়েলমি স্মার্টফোনের জিটি সিরিজ এনেছে বাজারে, যা ফ্ল্যাগশিপ মোবাইল হিসেবে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। এ সিরিজ হবে রিয়েলমি’র ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন সিরিজ এবং ভবিষ্যতে এটি সেরা রিয়েলমি পণ্যের অভিজ্ঞতার প্রতিনিধিত্ব করবে। এর পাশাপাশি, বাংলাদেশের বাজারের জন্য রিয়েলমি একটি ‘অল ইন ৫জি’ কৌশল অবলম্বন করেছে, যার অর্থ হল আমরা বিভিন্ন মূল্যে ৫জি পণ্য তৈরি করবো এবং কম ব্যয়বহুল পণ্যগুলোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ অব্যাহত রাখব, যেন আরও ব্যবহারকারী ‘লিপ-ফরওয়ার্ড’ প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারেন।

বাংলাদেশসহ বৈশ্বিক বাজারে আরও ৫জি পণ্য আনতে আমরা আমাদের চ্যানেলগুলোকে আরও বিস্তৃত করবো ও আরও অপারেটর রিসোর্সেস একত্রিত করবো। সেই লক্ষ্যে, আমরা এরই মধ্যে বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটের সঙ্গে চুক্তি করেছি যাতে ফাইভজি ফোনগুলো আরও সহজলভ্য হয় ও সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছায়। আমি বাংলাদেশের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের আশ্বস্ত করতে পারি যে, এই বছর ও পরের বছরটি আমাদের ব্যবহারকারীদের জন্য খুবই আকর্ষণীয় হতে যাচ্ছে, কারণ আমরা ৫জি স্মার্টফোন ও এওআইটি পণ্যের মাধ্যমে তাদের জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

প্রশ্ন: এআইওটি পণ্য নিয়ে রিয়েলমি’র ভিশণ ও মিশন কী? ভবিষ্যতে কী কী পরিকল্পনা রয়েছে? রিয়েলমি’র এআইওটি পণ্য নিয়ে কী প্ল্যান আছে? রিয়েলমি এরই মধ্যে এআইওটি পণ্য ও স্মার্ট টিভি এনেছে বাজারে, আমরা আর কী আশা করতে পারি?
উত্তর: যেমনটি বলেছিলাম, আমাদের ভিশন হচ্ছে তরুণদের জন্য এআইওটি ভিত্তিক স্মার্ট ও টেক ট্রেন্ডসেটিং লাইফস্টাইল তৈরি করা। আমাদের মিশন হলো, তরুণ প্রজন্মের জন্য লিপ-ফরওয়ার্ড পারফরম্যান্স ও ট্রেন্ডসেটিং ডিজাইন অভিজ্ঞতা নিশ্চিতে তাদের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে স্মার্ট পণ্য পৌঁছে দেওয়া। উন্নত ‘১+৫+টি’ পণ্য কৌশলের মাধ্যমে রিয়েলমি এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।

প্রশ্ন: ফাইভজি প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ কী? ফাইভজি পণ্য ও কৌশলের ক্ষেত্রে রিয়েলমির পরিকল্পনা ও পদক্ষেপগুলো কী?
উত্তর: এটি অনস্বীকার্য যে, এ বছরের শেষে বিস্তৃত আকারে ৫জি পণ্যের অন্তর্ভুক্তি ঘটবে। করোনা মহামারির ফলে তৈরি হওয়া নতুন ধারার জীবন পদ্ধতির ফলে আমরা উচ্চ-গতির নেটওয়ার্কের গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত হয়েছি এবং এটি ৫জি প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে গ্রহণ করার সম্ভাবনা বাড়িয়েছে। ফলে, ৫জি’র দ্রুত বিকাশ কমিয়ে আনবে ৫জি স্মার্টফোনের দাম এবং এর ফলে তৈরি হবে প্রয়োজনীয় ফাইভজি অ্যাপ্লিকেশন। বাংলাদেশে ৫জি গ্রহণের প্রস্তুতিও চলছে পুরোদমে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে রিয়েলমি বাংলাদেশকে সাহায্য করার প্রচেষ্টা বাড়িয়ে চলেছে। স্থানীয় বাজারে নিজেকে ৫জি পপুলারাইজার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে রিয়েলমি এরই মধ্যেই ফাইভজি গ্রহণকে ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে।

আমরা এরই মধ্যেই বিভিন্ন বাজারে ফাইভজি পণ্য ও অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছি। আগামী তিন বছরের মধ্যে তরুণ ব্যবহারকারীদের জন্য ১০ কোটি ৫জি মোবাইল ফোন আনার লক্ষ্য স্থির করেছি আমরা। সাশ্রয়ী মূল্যের ফাইভজি ফোন আনার পাশাপাশি, আমরা এআইওটি ২.০ পর্যায়ে প্রবেশ করেছি এবং এর মাধ্যমে আমরা তরুণ প্রজন্মের ক্রেতাদের জন্য আরও এআইওটি পণ্য বাজারে নিয়ে আসব।

প্রশ্ন: বিশ্বব্যাপী চিপের অভাব কি রিয়েলমির ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে? এতে কি রিয়েলমি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে?
উত্তর: বিশ্বব্যাপী চিপের অভাব এ খাতের প্রত্যেকের ওপর বড় একটি আঘাত হেনেছে এবং কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স ও অটো খাতসহ অনেক খাতের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। শিগগিরই এই সংকট নিরসনের হবে না, বরং আগামী বছর পর্যন্ত এটি স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রিয়েলমি এখনও পণ্যের দাম বাড়ায়নি, কারণ আমরা সব সময় আমাদের গ্রাহকদের সুবিধাকে প্রাধান্য দিই। যদি চিপের দাম এভাবে বাড়তেই থাকে, তবে আমরা আমাদের ব্যবহারকারীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে পণ্যের দাম পর্যালোচনা করব। আমাদের কৌশলের অগ্রভাগে রয়েছে তরুণ প্রজন্মের কাছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও ট্রেন্ডসেটিং ডিজাইন সমৃদ্ধ সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি; তাই আমরা বিশ্বাস করি, পণ্যের দাম পর্যালোচনার বিষয়টি ক্রেতাদের ওপর খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না।

ই-কমার্সের বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে দৃঢ় পারফরমেন্স এবং ট্রেন্ডি ডিজাইন সরবরাহকারী ডিভাইস হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ২০১৮ সালের মে মাসে রিয়েলমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। রিয়েলমির বিভিন্ন পণ্য প্রবর্তনের সাথে সাথে তাদের ‘পাওয়ার’ এবং ‘স্টাইল’ এজন্য ব্যাপক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ভারতে রিয়েলমি দীপাবলির সময় ৩ দিনের মধ্যে ১ মিলিয়ন মোবাইল ফোন বিক্রি রেকর্ড গড়েছিল।

রিয়েলমি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার লাজাদার বিক্রির রেকর্ডও ভেঙে এই প্ল্যাটফর্মের মোবাইল ফোন বিভাগে ১ নম্বর ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছিল। চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, মিশর ইত্যাদির মতো খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রিয়েলমে ৬১টিরও বেশি দেশের বাজারে প্রবেশ করেছে। ফেব্রুয়ারি ২০২০, রিয়েলমি বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করেছে। রিয়েলমি শক্তিশালী পারফরম্যান্স, আড়ম্বরপূর্ণ ডিজাইন, আন্তরিক পরিষেবাগুলো সরবরাহ এবং স্মার্টফোনের আরও সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এমআরএম/এমএস