ইউটিউব থেকে আয় করার উপায়
সাজেদুর আবেদীন শান্ত
ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবের জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। এখন এটি শুধু বিনোদন মাধ্যম নয়, ইউটিউব অনেকের আয়ের অন্যতম উৎসও বটে। ২০০৫ সালের মে মাসে ইউটিউব পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়।
বর্তমানে প্রতিদিন সারাবিশ্বে ৫০০ কোটি মানুষ ইউটিউবে ভিডিও দেখছেন। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, একজন দর্শকের ইউটিউব দেখার গড় সময়কাল ৪০ মিনিট। দর্শক বিবেচনায় ইউটিউব পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম সাইট। বিশ্বের সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোর মধ্যেও ইউটিউব দ্বিতীয়।
ইউটিউবের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। তাই বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে ইউটিউব আজ এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী মাধ্যম।
ইউটিউবের মাধ্যমে ঘরে বসেই অনলাইনে আয়ের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। অনেকেই ইউটিউবকেই পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন এবং তারা সফল ইউটিউবার হচ্ছেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ ইউটিউব থেকে আয় করতে অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন। চ্যানেল খোলার সাথে সাথেই আয় হয় না।
এখানে ইউটিউব থেকে আয়ের কিছু উপায় তুলে ধরা হলো:
ইউটিউব চ্যানেল: ইউটিউব থেকে আয় করতে প্রথমেই লাগবে একটা ইউটিউব চ্যানেল। গুগল একাউন্টের মাধ্যমে প্রথমে আপনাকে একটা ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হবে। ইউটিউব চ্যানেল বিনা মূল্যেই খোলা যায়। আপনি কোন ধরনের ভিডিও ছাড়তে চান এইটা ঠিক করে ব্রান্ড বা আপনার বিজনেসের নামে ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হবে।
আপনি যেহেতু ইউটিউব থেকে আয় করতে চাচ্ছেন এক্ষেত্রে আপনার ব্রান্ডের নামে ইউটিউব চ্যানেল খুললেই ভালো হবে। কারণ এখানে ইউটিউব এনালাইসিস অপশন পাওয়া যায়, যা ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেলে পাওয়া যায় না। এই অপশনটির মাধ্যমে খুব সহজেই আয় করা যায়। এরপর সুন্দর করে ইউটিউব চ্যানেলটিকে সাজাতে হবে।
প্রোফাইল পিকচার, কাভার ফটো, ওয়াটার মার্ক ব্যবহার করতে হবে। যা খুব সহজেই ইউটিউব স্টুডিও থেকে ব্যবহার করে সেট করে নিতে পারবেন। একটা চ্যানেলের আউট লুকিং ভালো হলে বেশি ভিউ পাওয়া যায়।
ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম: চ্যানেলটি গোছানো হলে ইউটিউব পার্টনারে যুক্ত হতে হবে। ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম হলো ইউটিউব থেকে আয় করার শ্রেষ্ঠ একটা উপায়। এটি বাদে ইউটিউব থেকে সরাসরি আয় করার আর কোনো উপায় নেই। ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম হওয়ার চারটি যোগ্যতা লাগে-
১. প্রাপ্ত বয়স্ক বা ১৮ বছর হওয়া।
২. চ্যানেলে অন্ততপক্ষে ১০০০ জন সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে।
৩. শেষ ১২ মাসে চ্যানেলের ৪,০০০ ভ্যালিড পাবলিক ওয়াচ আওয়ার থাকতে হবে।
৪. আপনার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে একটি গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট সংযুক্ত থাকতে হবে।
ওয়াচ টাইম হলো আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও কতজন দর্শক দেখছে।
এডসেন্স একাউন্ট: এরপর গুগল থেকে এডসেন্স একাউন্ট খুলতে হবে। এডসেন্স একাউন্ট খুলতে প্রয়োজন একটি গুগল একাউন্ট, ফোন নাম্বার ও ঠিকানা, যার সাথে আপনার ব্যাংক একাউন্ট যুক্ত আছে এবং সাইটের সাথে এডসেন্স যোগ করা।
যদি আগেই এডসেন্স একাউন্ট খোলা থাকে তাহলে আর একাউন্ট খোলার দরকার নেই। ওইটা দিয়েই ইউটিউবে যুক্ত করা যাবে। তবে এডসেন্সে ফোন নাম্বার, ঠিকানা ও ব্যাংক হিসাব নির্ভুল দিতে হবে কারণ এর মাধ্যমেই আপনার একাউন্টে টাকা ঢুকবে।
মনেটাইজেশন: গুগল এডসেন্স একাউন্ট খুলে মনেটাইজেশনের জন্য আবেদন করে অপেক্ষা করতে হবে। আবেদন করার ১ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে তারা ফলাফল দেবে যে আপনার চ্যানেলটি মনিটাইজেশন হবে কি না। যদি কারিগরি কোনো ত্রুটি ও আপনার চ্যানেলটি যদি তাদের নীতিমালা অনুযায়ী হয়ে থাকে তাহলে কোনো সমস্যা হবে না।
চ্যানেলটি তাড়াতাড়ি মনিটাইজেশন পাবে। মনিটাইজেশনের জন্য মনোনীত হওয়ার পর এবং ১০ ডলার জমা হলে তারা আপনার ঠিকানায় পিন নাম্বার পাঠাবে। পিন পাঠানোর চার মাসের মধ্যেই আপনার পিন নাম্বার দিয়ে নিউজের ঠিকানা নিশ্চিত করতে হবে। যদি নিশ্চিত না করেন তাহলে আপনার এডসেন্স একাউন্টটি নিষ্ক্রিয় হবে। ফলে আপনি আপনার চ্যানেল থেকে দেখানো বিজ্ঞাপনের টাকা পাবেন না।
ইউটিউব থেকে আয়কৃত টাকার উৎস: ইউটিউব থেকে আয়কৃত টাকার উৎসর পুরোটাই বিজ্ঞাপনভিত্তিক। ইউটিউবে ভিডিওর ফাঁকে ফাঁকে যে ভিডিওগুলো দেখায় তা থেকেই মূলত আয় হয়। ইউটিউব এই টাকাগুলো আপনাকে সিপিএম বা আরপিএম মাধ্যমে দিয়ে থাকে।
সিপিএম হলো কসট পার মাইল অর্থাৎ, এক হাজার বিজ্ঞাপনের জন্য ইউটিউব আপনাকে যা টাকা দিবে এবং আরপিএম হলো রিভিনিউ পার মাইল অর্থাৎ, ইউটিউব আপনাকে এক হাজার বার বিজ্ঞাপন দেখার জন্য যা টাকা দিবে। ইউটিউব আপনাকে এই দুই উপায়ে টাকা দিয়ে থাকে।
ইউটিউব সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রতিষ্ঠিত একটি মাধ্যম। এর সাহায্যে খুব সহজেই আয় করা যায়। তবে একটু ধৈর্যের প্রয়োজন। আর এটি যেহেতু সামাজিক সাইট তাই এখানে শিক্ষামূলক, সামাজিক নিরাপত্তামূলক, সচেতনতামূলক ভিডিও দেয়াই শ্রেয়।
লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী
এমএমএফ/এএসএম