নাসার ‘সূর্য ছোঁয়ার অভিযান’ আগস্টে
চন্দ্রের পর এবার সূর্য। নজিরবিহীন অভিযানের পথে যাত্রা শুরু করতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। মহাকাশ বিজ্ঞানে নয়া দিশা দেখিয়ে সূর্যের উদ্দেশে উড়াল দিতে চলেছে ‘পার্কার সোলার প্রোব’ মহাকাশযান। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগস্টের শুরুতেই সূর্যে অভিযান চালাবে সংস্থাটি। লক্ষাধিক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উপেক্ষা করে সূর্যের করোনা অঞ্চলে ২৪ বার প্রদক্ষিণ করবে মহাকাশযানটি।
ভারতীয় গণমাধ্যম জি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্ট মাসেই সূর্যের উদ্দেশে পাড়ি দেবে পার্কার সোলার প্রোব। সূর্যের বহির্বলয় ছুঁয়ে উড়ে যাবে মহাকাশযানটি। ইতিহাসে এই অভিযান নজিরবিহীন। এর আগে সূর্যের এত পাশ দিয়ে কোনো যান যায়নি। আকারে একটি গাড়ির সমান যানটিতে রয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। সূর্যের অভ্যন্তরে চলা জটিল প্রক্রিয়া ও বিকিরণ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করবে ‘পার্কার সোলার প্রোব’। আর সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে অনেক জটিল প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে বলেই মনে করছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।
নাসার ‘স্পেস ফ্লাইট সেন্টার’-এর বিজ্ঞানী অ্যালেক্স ইয়ং বলেন, ‘কয়েক দশক ধরেই সূর্য নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। খালি চোখে সূর্যকে যতটা স্থিতিশীল মনে হয়, তারাটি আদৌ তা নয়। তারাটিতে লাগাতার পরিবর্তন হচ্ছে। চলছে জটিল চুম্বকীয় প্রক্রিয়া। এবার আমরা অনেক জটিল প্রশ্নের উত্তর পেতে সক্ষম হব।’
সূর্যের ৪০ লক্ষ মাইল পাশ দিয়ে উড়ে যাবে নাসার মহাকাশযানটি। ভয়ানক উত্তাপ ও বিকিরণের মধ্যে দিয়েও পৃথিবীতে তথ্য পাঠাবে পার্কার সোলার প্রোব। তবে মার্কিন বিজ্ঞানীদের দাবি, অত্যাধুনিক ‘হিট শিল্ড’ যানটিকে অক্ষত রাখবে। আধুনিক কমিউনিকেশন প্যানেল পৃথিবীতে তথ্য পাঠাবে।
মানুষের তৈরি মহাকাশযানটি যদি সূর্যের করোনায় (সূর্যের একটি অঞ্চল যেটি সূর্যগ্রহণের সময় পৃথিবী থেকে দেখা যায়) প্রবেশ করে, তাহলে নয়া ইতিহাস গড়বে নাসা। সূর্যের প্রবল তাপ থেকে বাঁচতে ওই মহাকাশযান ও মহাকাশযানের যন্ত্রাংশগুলি প্রায় সাড়ে চার ইঞ্চি কার্বন কম্পোজিট দিয়ে পুরু বর্ম দিয়ে সুরক্ষিত থাকবে। সূর্যের আবহাওয়া কেমন- তা জানতে প্রায় ৬০ লক্ষ কি.মি. দূর থেকে নক্ষত্রটিকে প্রদক্ষিণ করবে নাসার মহাকাশযান। অভিযান সফল হলে, সৌরবায়ুর রহস্য, পৃথিবী প্রাণের উৎপত্তি নিয়ে বহু অজানা তথ্য জানা যাবে।
প্রসঙ্গত, সূর্যপৃষ্ঠের উষ্ণতা ৫৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। কিন্তু, পারিপার্শ্বিক অঞ্চলের উষ্ণতা প্রায় ২০ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সবকিছু ঠিকঠাক চললে আগস্টেই নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হবে বিশ্ব।
যে কারণে অভিযান
এই অভিযানের প্রথম কারণ হলো সূর্যের করোনা অঞ্চল নিয়ে গবেষণা করা। সূর্য এলাকায় কীভাবে তাপ বিকিরণ ঘটে, তা জানতে সহায়তা করবে এই অভিযান। বলা হয়ে থাকে, সূর্যের পৃষ্ঠভাগের তুলনায় করোনা অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩০০ গুণ বেশি।
দ্বিতীয়ত, সৌর বাতাসের গতি-প্রকৃতি জানা। সৌর বাতাস বলতে সূর্য থেকে ব্যাপকহার চার্জ কণা নির্গত হওয়া। তৃতীয়ত, অন্যান্য নক্ষত্র সম্পর্কে গবেষণা করতে সহায়তা করবে অভিযান থেকে প্রেরিত তথ্য-উপাত্ত।
অভিযান কবে
নাসা জানিয়েছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৬ আগস্ট স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ৮ মিনিটে সূর্যের উদ্দেশে মহাকাশে পাড়ি দেবে পার্কার সোলার প্রব। মার্কিন বিমানবাহিনীর সহায়তায় ‘ইউনাইটেড লঞ্চ এলায়েন্স’-এর ‘ডেল্টা-৪ হেভি’ রকেটে পাড়ি দেবে মহাকাশযানটি। ১৩ দিনের অভিযান শেষে ১৯ আগস্ট পৃথিবীতে ফিরে আসবে।
সূত্র: জি নিউজ, স্পেস.কম
এসআর/জেআইএম