ভিডিও EN
  1. Home/
  2. তথ্যপ্রযুক্তি

বাংলাদেশ জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে প্রবেশ করেছে

প্রকাশিত: ০১:১৭ পিএম, ০৪ আগস্ট ২০১৫

ছয় শতাংশ হারে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত এগোচ্ছে এর পোশাক শিল্প দিয়ে। এই অর্থনীতির ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে বিষয়টি জটিল হলেও, তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার উপর জোর দেওয়ায় দেশটি শ্রমনির্ভর অর্থনীতি থেকে এখন জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দিকে এগোচ্ছে।

চলতি বছরের জুন মাসে ভারতের আইটি জায়ান্ট ইনফোসিসের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে দেশের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি পার্ক নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যেখানে  ৬০হাজার  তথ্যপ্রযুক্তি পেশাদার কাজ করতে পারবে।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ মাইল উত্তরে অবস্থিত নতুন এই প্রযুক্তি পার্ক বাংলাদেশি এবং বিদেশি উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করবে। দেশের তরুণ, ডিজিটাল জ্ঞানসম্পন্ন জনশক্তি কাজের সুযোগ পাবে। গ্রাফিক ডিজাইন,ওয়েব এবং মোবাইল অ্যাপের উন্নয়নে বিশ্বে নেতৃত্ব দেয়াই বাংলাদেশের লক্ষ্য।

নাগরিকদের কর্মসংস্থান, বিদেশিদের আকৃষ্ট করা এবং বাংলাদেশকে একটি পাওয়ার হাউজ হিসেবে গড়ে তুলতে এই বিশাল তথ্য প্রযুক্তি পার্কের উদাহরণ হচ্ছে সাম্প্রতিক কাজের মধ্যে অন্যতম।

সরকারের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার নীতির ফলে এটা সম্ভব হচ্ছে। একই সাথে অনুকূল পরিবেশ থাকায় ঢাকাকে কেন্দ্র করে দেশে তথ্য প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যা কর্মসহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করছে এবং উদ্যোক্তা সম্মেলন প্রসারিত হচ্ছে।

স্টার্টআপ উইকেন্ড একটি বার্ষিক বৈশ্বিক ইভেন্ট, যেখানে উদ্যোক্তাদের ৫৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে স্টার্টআপ উইকেন্ড  অনুষ্ঠিত হয়েছে, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স  থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী একজন ছাত্র ‘ডুগডুগি’ নামের সাইটটি বানিয়েছেন। বাংলাদেশে এটিই একমাত্র বৈধ সংগীত সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান।

দেশে জ্ঞানের অভাব এবং তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতির অভাব দেখে, ঢাকার চার তরুণ চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তারা ব্যাংক ও তথ্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন চাকরি করতেন। ২০১৩ সালে তারা লাইট ক্যাসেল পার্টনার নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, বাংলাদেশের ব্যবসার ক্ষেত্রে বিশ্লেষণভিত্তিক সমাধান দিয়ে থাকেন তারা।

দ্রুত ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত বিশ্বের নজর কেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির মূলধনী  উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান 500 স্টার্টসআপস Chaldal.com নামের একটি অনলাইন কেনাকাটার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছেন, যেটি ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার হোয়ার্লটন স্কুল থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী এক বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই অনলাইন স্টোরটি ঢাকা শহরে নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী  ভোক্তাদের কাছে নির্দিষ্ট সময়ে সরবরাহ করছে।

সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের একটি দেশ বাংলাদেশ। এখানে প্রায় ১০কোটি মোবাইল ফোনের গ্রাহক আছে। প্রতিদিন নতুন গ্রাহক হচ্ছে ৫০হাজার মানুষ।২কোটি ৯লাখের বেশি মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তন আনছেন। একইসঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ই-কমার্সের পরিমাণ শতকরা ৫০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচন এবং গত বছরের পুনর্নির্বাচনের মূলনীতি ছিল বিভিন্ন সরকারি সেবা এবং তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক অর্থনীতির প্রসার। ২০১৪ সালে নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ‘ ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন ২০২১’ চালু করেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং শত শত সরকারি দফতরকে দ্রুত গতির নিরাপদ ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে BanglaGovNet নামে একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সরকারি বিভিন্ন সেবা নাগরিকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে, স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং  দুর্নীতি কমে আসবে।

বাংলাদেশের গ্রামীন গরীব শ্রেণির মানুষকে সামান্য সরকারি সেবা এবং তথ্য পাওয়ার জন্য বহুদূর যাতায়াত করতে হয়, এই পদ্ধতিতে শ্রমের অপচয় হয়। এ সমস্যা দূর করতে সরকার অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন নামে একটি অনলাইন কর্মসূচি চালু করেছে, এর ফলে সরকারি সেবাসমূহ নাগরিকদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। তারা ঘরে বসে সরকারি ওয়েবসাইটে প্রবেশ, বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল দেখা ও অনলাইনে বই পড়তে পারছেন। এছাড়া আরো অনেক সুযোগ-সুবিধা তারা বাড়িতে বসেই নিতে পারছেন।

সরকার জাতিসংঘভিত্তিক  ‘বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্স’ কর্মসূচির সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে। এই কর্মসূচির সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সরকার এবং ভিসার মতো বড় অর্থনৈতিক কোম্পানি জড়িত। বেটার দ্যান ক্যাশ এর মাধ্যমে নগদ ক্যাশকে ডিজিটাল ক্যাশে রুপান্তর করা হবে।এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার সমাজের বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজের অর্থ ডিজিটালভাবে দিতে  পারবে। এবং নাগরিকরাও সরকারের বিভিন্ন সেবার অর্থ ডিজিটালভাবেই পরিশোধ করতে পারবেন।

বাংলাদেশের ডিজিটাল বিস্তৃতি ইতোমধ্যে জনগণের জীবনমানের উন্নতি করেছে। গত জুনে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিনিয়োগ বাড়াতে আকৃষ্ট করবে।

এমনকি ২০১৩ সালের চেয়ে গত বছর বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের ৬০ শতাংশের বেশি মার্কিনিদের।

আর এসব কারণেই ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সাবেক প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠান টিআইই এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বাংলাদেশকে পরবর্তী অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে মন্তব্য করেছেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়ক হিসেবে প্রশংসা করেন তিনি।


সজীব ওয়াজেদ জয়, বাংলাদেশ সরকারের প্রধান তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে।

দ্য ডিপলোম্যাট ডটকম থেকে ভাষান্তর করেছেন জাগো নিউজের সহ-সম্পাদক সাইফুজ্জামান সুমন


এমআরআই