টেলিযোগাযোগ খাতে লুটপাটের অডিট রিপোর্ট প্রকাশের দাবি
টেলিযোগাযোগ খাতে লুটপাটের অডিট রিপোর্ট প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। মঙ্গলবার রাজধানীর তোপখানা রোডস্থ নির্মল সেন মিলনায়তনে ‘টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি খাতে নৈরাজ্য-লুটপাট বন্ধ ও ফোর জি খাতের কতিপয় প্রতিবন্ধকতা নিরসনে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামেও সরকার ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে কাজ শুরু করেছে। বাস্তব পক্ষে বাংলাদেশ এখনও ইন্টারনেট ব্যবহারকারী পিছিয়ে পড়ার দেশের মধ্যে ৫৭তম, আর গতির দিকে বাংলাদেশ ১২২তম দেশ। ইন্টারনেটের মূল্যও অনেক বেশি। সরকারিভাবে ব্যান্ডউইথের দাম ৫৬ হাজার থেকে কমিয়ে ছয়শ’ টাকা করলেও অপারেটররা আজ পর্যন্ত দাম কমায়নি। ইতোমধ্যে সরকার ৪র্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা চালুর জন্য নীতিমালা অনুমোদন করেছেন। কিন্তু এ খাতে রয়েছে বিরাট চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, অপারেটরদের চরম নৈরাজ্য, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসার নেই কোনো নীতিমালা, ই-কমার্স ব্যবসারও একই অবস্থা। মানহীন নকল মোবাইল হ্যান্ড সেট নিম্নমানের আমদানি করা সফটওয়ার, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা, গ্রাহকদের হয়রানিসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। দেশে বর্তমানে সক্রিয় সিমের সংখ্যা প্রায় ১৪ কোটি। দেশের এ বিপুলসংখ্যক গ্রাহককে সেবা দিতে সক্রিয় রয়েছে মাত্র চারটি অপারেটর। ইতোমধ্যে সিটিসেল গ্রাহকদের বিনিয়োগের অর্থ ফেরৎ না দিয়ে কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। এ চার অপারেটর দফায় দফায় নানা অফার ও স্বয়ংক্রিয় টেকনোলজির মাধ্যমে অপারেটরদের ফাঁদে ফেলে টকটাইম ও ডেটা বিক্রির নামে প্রতারণা করে আসছে। অফার দেবার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার দুর্বলতায় গ্রাহকরা প্রতারিত হচ্ছে। আর সেই সুযোগে অপারটেররা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করছে।
ইন্টারনেটের গতির শর্ত না থাকায় শুধু ডেটা বিক্রির ফলে ধীরগতির ডেটা ক্রয়ের ফলে গ্রাহকরা অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করছে। অন্যদিকে এদের সহযোগী রিটেইলাররা গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করলেও প্রতিরোধে কোনো কার্যক্রম নেই উল্লেখ করে মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, দেশে বর্তমানে ইন্টারনেটের গতি কত তা পরিমাপের ব্যবস্থা নেই। তবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি ন্যূনতম ৫ এমবিপিএস হিসাব করে থ্রিজি ইন্টারনেটের গতি হিসাব করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে উচ্চ গতির ইন্টারনেট (যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান ওপেন সিগন্যালের) তথ্য অনুযায়ী বর্তমান বিশ্বে ফোর জি প্রযুক্তির গড় গতি ১৬.৬ এমবিপিএস। ভারতের ৬.১৩, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডে ৯.১৪, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ায় যথাক্রমে ৪৬.৬৪ ও ৪৫.৮৫ এমবিপিএস। এছাড়া নরওয়ে ও হাঙ্গেরিতে ৪২ এমবিপিএস। বর্তমানে বিশ্বের ১৮০টি দেশে ফোর জি চালু থাকলেও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে নবীন। বর্তমান সরকার দেশে ফোর জি চালুর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে ইন্টারনেটের সর্ব্বনিম্ন গতি ২০ এমবিপিএস নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু এ গতির জন্য যে তরঙ্গ প্রয়োজন, তা কি অপারেটরদের হাতে রয়েছে? বর্তমানে যে তরঙ্গ আছে তা সব ব্যান্ড মিলিয়ে রবির ৩৬.৪ মেগাহার্টজ, গ্রামীণ ফোনের ৩২ মেগাহার্টজ, বাংলালিংকের ২০ মেগাহার্টজ। প্রস্তাবিত গতির জন্য প্রয়োজন ৬০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। আমাদের দেশে টু জি ও থ্রি জি সেবার জন্য আলাদা তরঙ্গ ব্যবহৃত হয়। ফলে তরঙ্গ নিরপেক্ষ না থাকায় বর্তমান তরঙ্গ দিয়ে ফোর জি চালু সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে বিটিআরসি ৯০০, এক হাজার আটশ ও দুই হাজার একশত মেগাহার্টজ তরঙ্গের বিক্রির দরপত্র আহ্বান করেছেন।
এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে টেলিকম খাতে কি পরিমাণ লুটপাট হয়েছে তার অডিট রিপোর্ট প্রকাশ, ফোর জি সংবলিত হ্যান্ডসেটের ওপর আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার, নেট সমতার নীতিমালা প্রণয়নসহ ২০ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিস, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার, এনপিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির মহাসচিব কামরুল হাসান, মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
এএস/এএইচ/আরআইপি