বছর শেষে আলোচনায় সোফিয়া
মানুষের মতোই অভিব্যক্তি প্রকাশ করে সে। কথা বলার ফাঁকে মিষ্টি হাসি দিয়ে মুগ্ধতা ছড়াতেও জুড়ি নেই। চলতি বছরের শেষ দিকে দেশের প্রযুক্তি অঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত নাম ছিল ‘সোফিয়া’। না, কোনো মানুষ নয় সোফিয়া। হংকং ভিত্তিক কোম্পানি হ্যান্সন রোবোটিক্সের তৈরি মানুষের মতো আচরণকারী নারী রোবট ‘সোফিয়া’।
গত ৬-৯ ডিসেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত দেশের সবচেয়ে বড় তথ্যপ্রযুক্তি উৎসব ‘ডিজিটাল ওর্য়াল্ড’-এর প্রধান আকর্ষণ ছিল সোফিয়া। তাকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ ছিল আকাশচুম্বী। ৫ ডিসেম্বর ভোর ৪টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্ল্যাইটে বাক্সবন্দি হয়ে ঢাকায় পা রাখে কৃত্রিম মানবী সোফিয়া। ঢাকায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে তার খোঁজখবর নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন গণমাধ্যমকর্মীরা। সোফিয়াকে কোথায় রাখা হয়েছে, কি অবস্থায় রাখা হয়েছে এমন আরও তথ্য জানতে ঢাকার বিভিন্ন পাঁচ তারকা হোটেলে খোঁজ নিতে শুরু করেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের উদ্বোধনী দিন ৬ ডিসেম্বর সোফিয়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়। সোফিয়াকে কাছ থেকে এক নজর দেখতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লেগে যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। ‘টেক টক উইথ সোফিয়া’ শিরোনামে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল সেদিন। আসন সংখ্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ নিবন্ধন করে সেমিনারে আসার জন্য। মানুষের ভিড়ের চাপে সেশনটি সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছিল আয়োজকদের। কেউ কেউ রোবটটিকে দেখতে পেলেও বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়েছে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে। হল রুমে যত মানুষ তাকে দেখেছেন, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ অপেক্ষায় ছিলেন হলের বাইরে। আর রাস্তায় ছিল মানুষের দীর্ঘ লাইন।
৭ ডিসেম্বর রাত ১টায় হংকংয়ের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করে সোফিয়া। তার সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছিলেন তার নির্মাতা ডেভিড হ্যানসন ও একজন গাইড। সোফিয়া বাংলাদেশে ছিলো মাত্র ৪৫ ঘণ্টা। কিন্ত তাকে নিয়ে আলোচনার রেশ ছিল মাস জুড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক হয়ে উঠেছিল সোফিয়াময়। তার সঙ্গে অনেকে যেমন ছবি ও বিভিন্ন নিউজ শেয়ার করেছেন, তেমনই তাকে দেখতে না পারার হতাশাও ব্যক্ত করেছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ এই রোবটকে নিয়ে মজাও করেছেন। কয়েকটি টেলিভিশনে তাকে নিয়ে লাইভ প্রোগ্রাম করা হয়। মজার মজার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বাংলাদেশের মানুষদের মুগ্ধ করে সোফিয়া।
সবারই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল রোবট সোফিয়ার নানা দিক। তবে সোফিয়াকে বাংলাদেশে আনতে কত টাকা খরচ হয়েছে তা নিয়ে শুরু হয় নানা বিভ্রান্তি। ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা খরচ করে সোফিয়াকে আনা হয়েছে দাবি করে অনেকে ফেসবুকে সমালোচনাও করেন। এই বিভ্রান্তি দূর করতে সোফিয়ার বাংলাদেশ সফরের খরচের আদ্যোপান্ত নিয়ে জাগো নিউজ প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সোফিয়াকে বাংলাদেশের আনার পুরো খরচ বহন করে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ।
সোফিয়ার খরচের বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্ত খান জাগো নিউজকে বলেছিলেন, খুবই অল্প খরচে এটি আনা হয়েছে। যা আপনাদের ধারণায় নেই। সুনির্দিষ্ট কোনো অর্থের পরিমাণ না জানিয়ে তিনি বলেন, রোবট সোফিয়ার পেছনে এক কোটিরও কম টাকা খরচ হয়েছে।
সোফিয়াকে বাংলাদেশে আবার আনা হতে পারে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের বলেন, সোফিয়াকে বাংলাদেশে আনার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে দেশের মানুষকে পরিচয় করিয়ে দেয়া। সোফিয়াকে নিয়ে মানুষদের আগ্রহ দেখে আমরা অভিভূত। আইসিটি মন্ত্রণালয় বরাবরই নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে দেশের মানুষকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। ভবিষ্যতে প্রয়োজন দেখা দিলে সোফিয়াকে আবার আনা হতে পারে।
সোফিয়ার জন্ম হংকংয়ে ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল। হলিউড অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্নের আদলে সোফিয়াকে গড়ে তুলেছে রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হ্যান্সন রোবটিক্স। ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর তাকে প্রকাশ্যে আনা হয়। তাকে হাজির করা হয় সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত ফিউচার ইনভেস্ট ইনিশিয়েটিভ কনফারেন্সে। প্রদর্শনীতে উপস্থিত শত শত প্রতিনিধি রোবটটি দেখে এতোটাই মুগ্ধ হন যে সেদিনই তাকে সৌদি নাগরিকত্ব দেয়া হয়। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সোফিয়ার ছবি শেয়ার হতে থাকে। সোফিয়া নানা বিষয়ে অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিশাল তথ্যভাণ্ডারে যুক্ত থাকে সে। এছাড়া মানুষের সঙ্গী ও সহযোগী হিসেবেও কাজ করতে পারে সোফিয়া। তাই তো সোফিয়া নিছক একটি রোবট নয়, একজন কৃত্রিম মানবী।
এআরএস/এএ/আরআইপি