রোবট প্রযুক্তি দেশে ছড়িয়ে দিতে এই উদ্যোগ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোবটের ব্যবহার শুরু হয়েছে অনেক আগেই। সৌদি আরবে তো একটি রোবটকে নাগরিকত্বই দেয়া হলো। বিশ্বের প্রথম রোবট পরিচালিত রেস্তোরাঁর যাত্রা শুরু করে চীন।
প্রযুক্তিতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার প্রচেষ্টা বাংলাদেশেরও। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীতে যাত্রা শুরু হয়েছে দেশের প্রথম রোবট রেস্টুরেন্টের। যেখানে কাস্টমারের অর্ডার করা খাবার টেবিলে পৌঁছে দিচ্ছে রোবট। চীনা এ প্রযুক্তি দেশে ছড়িয়ে দিতে এ উদ্যোগ বলছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক।
কীভাবে রোবট রেস্টুরেন্টের ধারণা আসল এবং কেন এ উদ্যোগ জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক তরুণ উদ্যোক্তা রাহিন রাইয়ান নবী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে চীন সফরে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি রেস্টুরেন্টের খাবার সরবরাহ করছে রোবট। বিষয়টি আমার ভালো লাগে এবং আকৃষ্ট হই। আমাদের দেশে রোবট পরিচালিত কোনো রেস্টুরেন্ট নেই। তাই নতুন কিছু করার উদ্যোগ হিসেবেই রোবট রেস্টুরেন্ট করার চিন্তা আসে।’
রেস্টুরেন্টের পরিচালক তরুণ উদ্যোক্তা রাহিন রাইয়ান নবী
‘সেই আগ্রহ থেকেই আমি ও আমার ভাই দুইজনে পরিকল্পনা করি। পরে রোবট প্রস্তুতকারী সংস্থা এইচ জেড এক্স ইলেকট্রনিক টেকনোলজি কোম্পানির সঙ্গে কথা বলি। তারা আমাদের সহায়তার আশ্বাস দেয়। এইচ জেড এক্স কোম্পানির প্রযুক্তির সহায়তায় আমরা দেশে প্রথম রোবট রেস্টুরেন্ট চালু করেছি। এটি দেশে রোবট প্রযুক্তি ব্যবহারের নতুন এক মাইলফলক এবং নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে বলে আমি মনে করি’-বলেন তিনি।
এদিকে রাহিন রাইয়ান নবীর মা রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদা শাম্মী বলেন, ছেলেদের ইচ্ছা ও আগ্রহ থেকেই পারিবারের সবার সহযোগিতায় নতুন ধারার এ রেস্টুরেন্ট চালু করা হয়েছে। এ উদ্যোগের পেছনে শিশুদের বিনোদন ও খাবারের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কারণ এখন আমাদের শিশুদের তেমন বিনোদনের জায়গা নেই। এখানে আসলে শিশুরা বিনোদনের পাশাপাশি খাবারও খেতে পারবে। তাই স্বাস্থ্যসম্মত সুস্বাদু খাবারের পাশাপাশি বিনোদনমূলক রোমাঞ্চকর পরিবেশে খাবার পরিবেশনে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।
তিনি বলেন, রেস্টুরেন্ট চালুর পর থেকেই ব্যাপক সারা পাচ্ছি। আমাদের রোবট রেস্টুরেন্ট দেখতে এসেছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তার আগমনে আমরা আরও অনুপ্রাণিত হয়েছি। রাজধানীতে আরও কয়েকটি শাখা চালু করার ইচ্ছা আমাদের রয়েছে।
মাহমুদা শাম্মী বলেন, শুধু নিজেরাই রোবট রেস্টুরেন্ট করব তা নয়। এটি ছড়িয়ে দিতে চাই। অর্থাৎ দেশে রোবটের প্রযুক্তি বিস্তার করতে চাই। চীনা কোম্পানি এইচ জেড এক্স কোম্পানির সঙ্গে আমাদের প্রযুক্তির সহায়তাবিষয়ক চুক্তি হয়েছে। কেউ যদি এ ব্যবসা করতে চান তাহলে তাকে রোবট প্রযুক্তিবিষয়ক সব ধরনের সহায়তা দেব। প্রতিটি রোবটে ব্যয় হবে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার ডলার। আশা করছি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এ ধরনের রোবট প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে সরকার সব ধরনের সহায়তা করবে।
রোবট রেস্টুরেন্টে মানুষের ভিড়
পরিচালক রাহিন রাইয়ান বলেন, রোবট রেন্টুরেন্ট সব বয়সের মানুষের জন্য অত্যন্ত রোমাঞ্চকর পরিবেশও তৈরি করবে। বিশেষ করে শিশুরা সবচেয়ে বেশি রোমাঞ্চিত হবে।
‘খাবারের দাম সাধ্যের মধ্যেই রাখা হয়েছে, যাতে সব শ্রেণির মানুষই এখানে আসতে পারেন। শিশুদের জন্য আমাদের বিশেষ কিছু খাবার রয়েছে। আমরা খাবারের মান ও পারিবারিক পরিবেশ অবশ্যই বজায় রাখব, যাতে করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যে কেউ এখানে খেতে আসতে পারেন’-বলেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সর্বসাধারণের সুবিধার্থে প্রাথমিক অবস্থায় শিশুদের ‘কিডমিল’ এবং দেশীয় খাবারের সেট ফুড পরিবেশন করা হচ্ছে, যার মূল্য ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজধানীর মিরপুর রোডে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন এবং আসাদ গেটের কাছে প্রধান সড়কের ফ্যামিলি ওয়ার্ল্ড টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় রোবট রেস্টুরেন্টটির অবস্থান। এখানে খাবারের অর্ডার নেন মানুষ আর টেবিলে কাস্টমারদের খাবার সরবরাহ করে রোবট।
রোবট রেন্টুরেন্টটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন আনোয়ারুন নবী মজুমদার। এছাড়াও অন্য দুই পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালক করছেন তাসিন রওনাক নবী এবং সাজিন ওমায়ার নবী।
এসআই/জেডএ/এমএস