ভিডিও EN
  1. Home/
  2. তথ্যপ্রযুক্তি

‘ব্লু হোয়েল’ খেলা ২ জন শনাক্ত, তদন্তে গোয়েন্দারা

আদনান রহমান | প্রকাশিত: ১০:০৫ এএম, ০৯ অক্টোবর ২০১৭

ভারত ও চীনসহ ইউরোপের দেশগুলোতে অসংখ্য শিশু, কিশোর-কিশোরীর আত্মহত্যার নেপথ্যের কারণ ‘ব্লু হোয়েল’। সম্প্রতি রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডে আত্মহত্যা করা এক ছাত্রীর মৃত্যুর কারণ প্রাণঘাতী এ গেম। এমন ধারণা ওই ছাত্রীর পরিবারসহ অনেকের। বিষয়টি তদন্তে নেমেছেন সাইবার ক্রাইম ইউনিটের গোয়েন্দারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ‘ব্লু হোয়েল’ গেম নিয়ে ইতোমধ্যে গবেষণা শুরু করেছে কাউন্টার টেরোরিজমের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ (সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং)। এখন পর্যন্ত তারা দুজনকে গেমটি খেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার প্রমাণ পেয়েছেন। ওই দুই আইডি থেকে ব্লু হোয়েলের নির্দেশনা অনুযায়ী হাতে ক্ষত করে (বীভৎস) ক্যাপশনসহ ছবি পোস্ট করা হয়। আইডি দুটি অদ্ভুত নামে খোলা, কোনো মানুষের নামে নয়।

সাইবার ক্রাইম বিভাগের পক্ষ থেকে ওই দুই আইডিতে মেসেজ দেয়া হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের গেম খেলা বন্ধ করতে বলা হয়। মেসেজ পেয়ে একটি আইডি বন্ধ হলেও অপরটি এখনও খোলা

সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিংয়ের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, দুটি আইডি থেকে ছবি দেখে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের খেলা ও আইডি বন্ধের জন্য বলি। হতে পারে তারা গেমটি খেলে। আবার এও হতে পারে তারা খেলে না। কিন্তু তারা যেসব বীভৎস কর্মকাণ্ডের ছবি দিয়েছে তাতে অন্য তরুণরা গেমটি খেলতে উদ্বুদ্ধ হতে পারে। এসবের প্রচারও এক ধরনের অপরাধ।

‘তাদের মাধ্যমে যাতে কেউ নিজের শরীরে ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য আমরা আইডি বন্ধের জন্য বলি। অন্যথায় তাদের আইডি অ্যাড্রেস ট্র্যাকিং করে আইনের আওতায় আনার হুমকি দেই। তাদের মধ্যে একটি আইডি বন্ধ হয়েছে আরেকটি এখনও খোলা রয়েছে’- যোগ করেন তিনি।

এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নিউজ পোর্টাল ‘ডিএমপি নিউজ’-এ গেমটি নিয়ে সতর্কতামূলক বার্তা দেয়া হয়েছে। অনলাইনে ব্লু হোয়েল গেম খেলা বা এ গেমের লিঙ্ক দেয়া-নেয়া বা সে চেষ্টা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে পোর্টালে উল্লেখ করা হয়েছে। যারা এগুলোর যেকোনো একটি করবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।

সম্প্রতি ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, পুলিশের হেফাজতে থাকা দশম শ্রেণির এক ছাত্র জানিয়েছে, বন্ধুর মাধ্যমে আগ্রহের বশেই ‘ব্লু হোয়েল’ গেমটি ডাউনলোড করি। কিন্তু মাঝ পর্যায়ে যখনই খেলা বন্ধ করে দিতে চাইতাম, তখনই তার বাবাকে হত্যার হুমকি দিত। এমনকি মাঝে একবার তার বাবার ওপর আক্রমণও করেছিল অজ্ঞাতরা।

jagonews24

গত ৫ অক্টোবর সকালে রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডের নিজ বাসার পড়ার রুম থেকে স্কুলছাত্রী অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণা’র আত্মহত্যা করা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে ব্লু হোয়েলের নির্দেশনায় সে আত্মহত্যা করেছে কি না- সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। মেয়েটার শরীরে ব্লু হোয়েলের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

তবে অনেকেই বলছেন, ওই শিক্ষার্থী ব্লু হোয়েল গেমের নির্দেশনা অনুযায়ী আত্মহত্যা করেছে। ওই ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) বা মামলা করেনি স্বর্ণার পরিবার।

স্কুলছাত্রী স্বর্ণার মৃত্যুর রহস্য খুঁজতে এবার ছায়া তদন্ত করবে সাইবার ক্রাইম ইউনিট। এডিসি নাজমুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, মেয়েটির পরিবার এখনও অপমৃত্যুর মামলা করেনি। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা তার ডেস্কটপ ও মোবাইল ডিভাইস এনে পরীক্ষা করব।

‘মিশন কমপ্লিট হওয়ার পর ব্লু হোয়েল গেমটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আনইন্সটল বা মুছে যায়। তবে মেয়েটি যদি ব্লু হোয়েল খেলে থাকে তাহলে কোনো না কোনো ক্লু পাওয়া যাবে’- যোগ করেন তিনি।

ঘাতক এ গেমের ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১৮০ জন আত্মহত্যা করেছেন। গেমটির আসল অ্যাডমিনকে আটক করা হলেও বিভিন্ন দেশে এর অ্যাডমিন থাকায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। ফলে গেমের প্রভাব এখন ছড়িয়ে পড়ছে সারাবিশ্বে।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেই একটি আত্মহত্যার ঘটনায় মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। ভারতীয় প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বে গড়া বেঞ্চ ওই মামলা পরিচালনা করছেন। আইনজীবী সি আর জয় সুকিন আরজি জানান, অনলাইনে যেন এ গেম পাওয়া না যায় এবং এ গেম খেলার ওপর সরকার যেন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

‘এটি এমন কিছু ডেয়ার বা চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে, যা পরে খেলোয়াড়কে আত্মহত্যার প্রবণতার দিকে নিয়ে যায়’- বলেন সি আর জয় সুকিন আরজি।

এআর/এমএআর/আরআইপি

আরও পড়ুন