ভিডিও EN
  1. Home/
  2. তথ্যপ্রযুক্তি

বাংলাদেশে অনলাইন নিউজ পোর্টাল, সংবাদ উৎস ও গ্রহণযোগ্যতা

আরিফুল ইসলাম আরমান | প্রকাশিত: ০৬:৩৬ এএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

আরিফুল ইসলাম আরমান

সময়ের সাথে সাথে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। প্রযুক্তির আলো ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। দেশজুড়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে দ্রুতগতির ইন্টারনেট। আজকের সংবাদ জানতে আগামীকালের সংবাদপত্রের জন্য অপেক্ষা করার সময় নেই। যখনই ঘটনা তখনই সংবাদ। দ্রুত অগ্রসরমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল। কম খরচে এবং সহজলভ্য দ্রুতগতির ইন্টারনেটের কারণে এই মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আগ্রহও ক্রমশ বাড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ইলিনয়েস স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৭৪ সালে ‘নিউজ রিপোর্ট’ নামে প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল প্রকাশিত হয়। এরপর বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংবাদপত্র তাদের অনলাইন সংস্করণ চালু করে। তবে ২০০০ সালে যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত ‘সাউথপোর্ট রিপোর্টার’ আধুনিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে পরিচিতি পায়।

সে হিসেবে খুব কম সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশে অনলাইন নিউজ পোর্টালের যাত্রা শুরু হয়েছে। ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করে দেশের প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ২৪.কম। বিশিষ্ট সাংবাদিক আলমগীর হোসেন ছিলেন এর প্রধান সম্পাদক ও অন্যতম উদ্যোক্তা। তবে আর্থিক সংকটের কারণে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে বিডিনিউজের মালিকানা কিনে নেন বিবিসি’র সাবেক সাংবাদিক তৌফিক ইমরোজ খালেদী। এর কিছু সময় পরেই যাত্রা শুরু করে আরেক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য এডিটর ডট নেট।

news120150213204932

২০০৭ সালে আলমগীর হোসেন আবারও শুরু করেন নতুন একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও বার্তা সংস্থা একাত্তর নিউজ সার্ভিস (ইএনএস)। তবে যাত্রা শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই এটিও বন্ধ হয়ে যায়। বিডিনিউজের পরে অনলাইন সাংবাদিকতায় জনপ্রিয় হয়ে উঠে অনলাইন নিউজ পোর্টাল শীর্ষ নিউজ ডট কম। ২০০৯ সালের ১৯ আগস্ট যাত্রা শুরু করা শীর্ষ নিউজের সম্পাদক একরামুল হক ২০১১ সালের শেষ দিকে গ্রেফতার হওয়ার পর পোর্টালটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১ জুন নতুনভাবে আপডেট শুরু করে শীর্ষ নিউজ।

news220150213204935

২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আলমগীর হোসেন আবারও শুরু করেন নতুন অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। এর কয়েক মাস পরেই সাংবাদিক সরদার ফরিদ আহমেদের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করে বার্তা টুয়েন্টি ফোর ডট নেট। গণমাধ্যম বিষয়ক সংবাদ প্রকাশের জন্য এই পোর্টাল বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। আর্থিক সংকটের কারণে ২০১২ সালের শেষ দিকে বন্ধ হয়ে যায় বার্তা টুয়েন্টি ফোর ডট নেট। এরপর তারই নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা লাভ করে নতুন বার্তা ডট কম।

news320150213204939

এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে দেশে বেশ কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলামেইল২৪.কম, প্রিয়.কম, দ্য রিপোর্ট ডট কম, পরিবর্তন ডট কম, রাইজিংবিডি.কম।

অনলাইনে সংবাদ পরিবেশনের এই চলমান প্রতিযোগিতায় যুক্ত হয়েছে কিছু প্রিন্ট সংবাদমাধ্যমও। এর মধ্যে রয়েছে পাঠকের নজর কাড়া কয়েকটি প্রিন্ট পত্রিকার বাই প্রোডাক্ট হচ্ছে প্রথম আলো, মানবজমিন, সমকাল, কালের কণ্ঠ, ইত্তেফাক ও বাংলাদেশ প্রতিদিন। ইলেকট্রনিক মাধ্যমেরও রয়েছে অনলাইন ভার্সন। এগুলোর মধ্যে আছে এনটিভি, সময়, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও দেশ টিভির অনলাইন ভার্সন।

অনলাইন সংবাদপত্রগুলো এখন তাৎক্ষণিক ঘটনার সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি জাতীয়, রাজনীতি, অর্থনীতি-ব্যবসা, খেলাধুলা, মুক্তমত, শেয়ারবাজার, বিনোদন, লাইফস্টাইল, আইন, ধর্ম, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সাহিত্য, শিশুসাহিত্য, ফিচার, ধর্ম-দর্শন, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, মতামতসহ বিশেষ প্রতিবেদন ও সাক্ষাৎকার প্রকাশ করছে।

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিউজ পোর্টাল

ঘটনা-১
২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এ রায় মেনে নেয়নি কিছু ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের বিরাট একটি অংশ। এদেরই একজন ডা. ইমরান এইচ সরকার ওই দিন দুপুর ১২টা ১৭ মিনিটে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন- শাহবাগে একটা সমাবেশ ও গণমিছিল হবে, শাহবাগ মোড়ে, ৩টা ৩০ মিনিটে। দু’টি ব্যানার নিয়ে সেদিন ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা দাঁড়িয়ে যান শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে। ফেসবুকে দেয়া এ আহ্বান সূত্রে তাদের সঙ্গে যোগ দেন শতাধিক মানুষ। বিকেল ৪টায় শুরু হয় মিছিল।

sahbag20150213205645

ফেসবুকের সূত্র ধরে এরই মধ্যে ব্রেকিং নিউজ হিসেবে এ সংক্রান্ত ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করে বাংলানিউজ। এরপর বিডিনিউজ, বাংলামেইল, প্রথম আলো অনলাইনও একই বিষয় নিয়ে সংবাদ দেয়। সরাসরি সম্প্রচার শুরু করে একাত্তর ও সময় টেলিভিশন।

ঘটনা-২
সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিনে ছেলেকে রান্না করে খাওয়ান মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৩ সালের ২৭ জুলাই শনিবার ইফতারের আগে প্রধানমন্ত্রী তনয় সজীব ওয়াজেদের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা একটি ছবিতে এ দৃশ্য দেখা যায়। ছবিতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী বা হাতে শক্ত করে পাতিল ধরে ডান হাতে কাঠের খুন্তি দিয়ে মাংস নাড়ছেন। তখন তার পরনে থাকা সাদা শাড়ির ওপর রান্নার অ্যাপ্রোন জড়ানো ছিল। এসময় তিনি চুলে খোঁপাও বেঁধেছেন বাঙালি বধূদের মতোই। আর চুলগুলো আটকানো ছিল দুটি ক্লিপ দিয়ে। আর এ ছবির ক্যাপশনে জয় লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী আমার জন্য মোরগ-পোলাও রান্না করছেন। আমি যত পোলাও খেয়েছি তার রান্নাই সবচেয়ে সেরা।

hasina20150213210156

ছবির সূত্র ধরে বিডিনিউজ গুরুত্ব সহাকারে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করে। একই সঙ্গে দেশের অন্যান্য অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোও সংবাদ প্রকাশ করে। যে সংবাদ সূত্র ছিল কেবলই সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাস।

সংবাদের গ্রহণযোগ্যতা

অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর কয়েকটির মাঝে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে রয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত আর অশুভ প্রতিযোগিতা। অনেক ক্ষেত্রে তথ্যের সত্যটা যাচাই ছাড়াই সংবাদ প্রকাশ করে শীর্ষস্থানীয় অনেক নিউজ পোর্টাল। যেহেতু পরবর্তীতে সংবাদ পরিবর্তন বা সম্পাদনার সুযোগ রয়েছে সেহেতু সবার আগে সংবাদ প্রকাশ করে পরে আবার তা পরিবর্তনও করছে অনেকে। এতে একদিকে পোর্টালের সৃজনশীলতা যেমন প্রকাশ পায় তেমনি অনেক ক্ষেত্রেই ফুটে ওঠে অনৈতিক সাংবাদিকতার চর্চাও। দ্রুত সংবাদ প্রকাশের ইঁদুর দৌড়ে জড়িয়ে প্রতিনিয়ত নিউজ পোর্টালগুলোতে ভুল উদ্ধৃতি বা তথ্য বিকৃতিও ঘটছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুজবকে ভিত্তি করে অনেক নিউজ পোর্টাল নানা রকম সংবাদ প্রকাশ করছে। যা সাংবাদিকতার নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শুধু তাই নয়, নিউজ পোর্টালের পাঠক বৃদ্ধির জন্য অনেক পোর্টাল অশ্লীল ছবি ও ভিডিও যুক্ত করে নানা রকম বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করছে। তবে এই ধরনের পোর্টালের প্রতি পাঠকের তাৎক্ষণিক আকর্ষণ থাকলেও স্থায়ী গ্রহণযোগ্যতা নেই বললেই চলে।

তারপরও একটি সংবাদ পরিবেশন মানসম্পন্ন হয়েছে কিনা সে বিষষে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। সেই মতভেদ অথবা বিভ্রান্তিকে কয়েকটি প্যারামিটারের ওপর নির্ধারণ করে বলা যেতে পারে একটি সংবাদের মান। যেমন: অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কোনো সংবাদের সোর্স কয়টি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো একটি খুনের ঘটনায় দায়িত্বরত পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট কোনো সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য থাকতে হবে। এছাড়া অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য থাকলে সংবাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত হয়। সংবাদমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদক সংবাদটি লিখেছেন নাকি ডেস্কে সংবাদটি তৈরি হয়েছে। এসবের ওপরই একটি সংবাদের নির্ভরযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা যেতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে অধিকাংশ অনলাইন নিউজ পোর্টালে দেখা যাচ্ছে ‘কপি-পেস্ট’-এর নগ্ন প্রতিযোগিতা। এবিষয়ে অবশ্য এখনও কোনো নীতিমালা তৈরি হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমগুলো এবিষয়ে অভিযোগ তুলতে পারে। কপিরাইট আইনে মামলারও সুযোগ রয়েছে।

বর্তমানে দেশের অনলাইন নিউজ পোর্টালের পাঠক সংখ্যার ৭০ ভাগই তরুণ-তরুণী। এই তরুণ-তরুণীদের নানাভাবে প্রভাবিত করছে নিউজ পোর্টাল গুলো। এর মধ্যে রয়েছে নেতিবাচক প্রভাবও। সেই অশুভ প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য অশ্লীলতামুক্ত নিউজ পোর্টালগুলোর দিকেই লক্ষ্য রাখতে হবে। একই সঙ্গে ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজ ছাড়া অন্য পেইজগুলো থেকে তথ্য নিয়ে সংবাদ হিসেবে প্রকাশ না করার ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দিতে হবে নিউজ পোর্টাল সংশ্লিষ্টদের।

- সহকারি বার্তা সম্পাদক, জাগোনিউজ২৪.কম