বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠান হতে চায় সালেহ আহমদের এক্সনহোস্ট
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৭০ দেশে ডোমেইন হোস্টিং সেবা প্রদান করছে এক্সনহোস্ট। এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানির সাথে পার্টনারশিপ গড়েছে বাংলাদেশের এই প্রতিষ্ঠানটি।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে কর্পোরেট ওয়েবসাইটের জন্য ডোমেইন, ওয়েব হোস্টিং, ভার্চুয়াল সার্ভার, ডেডিকেটেড সার্ভার ও ক্লাস্টার সার্ভার সলিউশন দিচ্ছে এক্সনহোস্ট। দেশি এবং বিদেশি কর্মীদের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা কাস্টমার সাপোর্ট নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন।
এক্সনহোস্ট’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সালেহ আহমেদ। স্বপ্ন তার আরো বহুদূর যাবার। তার সেই স্বপ্নের গল্প জানাচ্ছেন আরিফুল ইসলাম আরমান
উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প
সালেহ আহমেদ সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকসহ স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। ছোটবেলা থেকে চাকরির প্রতি আগ্রহ ছিল না তার। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই কেনেন কম্পিউটার। স্কুল থেকেই কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ ছিল অনেক। সেই আগ্রহের কারণেই কলেজে ভর্তি হয়ে কম্পিউটারে হাতেখড়ি হয় ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে যান তিনি। তখন থেকে কিছু একটা শেখার নেশা জাগে মনে। সেই নেশার তাগিদে ওয়েব ডেভেলপমেন্টে হাতেখড়ি। যেহেতু ওয়েবসাইট তৈরি করার পর হোস্টিংয়ের প্রয়োজন হয়, সেই চিন্তা থেকেই হোস্টিং ব্যবসার আগ্রহ। অতঃপর যেই ভাবা সেই কাজ।
শুরুর গল্প
২০০৯ সালের শেষের দিকে সৌদি আরব থেকে একব্যক্তি তাদের থ্রি স্টার হোটেলের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করতে সালেহ আহমেদের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি কাজটি করতে রাজি হয়ে গেলেন। তিনি প্রথমে ৫০% টাকা নিয়েই পরিচিত একজনের কাছ থেকে ডলার কিনে ডোমেইন রিসেলার একাউন্টে ফান্ড আপলোড করেন এবং সেই সাথে একটা রিসেলার হোস্টিং কেনেন। তখন obosor.com নামে ডোমেইন হোস্টিং সার্ভিস চালু করেন। এভাবেই শুরু হয়ে গেল কাজ।
প্রতিবন্ধকতা থাকবেই
সালেহ আহমেদ প্রথমেই যে সমস্যার সম্মুখীন হন তা হচ্ছে- পেমেন্ট দেয়া এবং নেয়া। ডোমেইন এবং হোস্টিং বিল দেয়ার জন্য ফ্রিল্যান্সার কারো সাহায্য নিতে হতো। তারপর যে সমস্যার সম্মুখীন হন- সঠিক কোম্পানি চিনতে না পারায় প্রথম মাসেই ওয়েবসাইটের ডাটাসহ ৩ হাজার টাকা লোকসান। কারণ যে কোম্পানি থেকে সার্ভিস নেন, সে কোম্পানি এক মাস পর বন্ধ করে দেয় কোনো ঘোষণা ছাড়াই। হোস্টিং কেনার ক্ষেত্রে প্রথমেই কম দামকে প্রাধান্য দেয়ায় এই সমস্যায় পড়েছিলেন তিনি। এছাড়া কেনার আগে কোম্পানির অতীত সম্পর্কে খোঁজ-খবর না নেয়াও তার জন্য বোকামি ছিলো। আর শুরুতেই বাস্তবতা চিন্তা না করে, শুধু লাভের কথাই চিন্তা করেছিলেন। আর ব্যবসায়িক কোনো জ্ঞান না থাকাও একটা বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করেছে। কীভাবে মার্কেটিং করবেন, কাস্টমারের কাছে পৌঁছাবেন সে সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না তার।
এগিয়ে যাওয়ার শুরু
বাংলা কমিউনিটি ফোরাম, ব্লগগুলোতে লেখালেখি করার কারণে অনেকের সাথে পরিচয় হয় সালেহ আহমেদের। ফলে অনেক শুভাকাঙ্খি তৈরি হয়। সেই সুবিধা কাজে লাগিয়ে অনলাইনে মার্কেটিং করতে থাকেন তিনি। তারপর ফেসবুক বাংলাদেশে জনপ্রিয় হতে শুরু করে। তিনি ফেসবুকে যুক্ত হন এবং বিভিন্ন গ্রুপে যোগ দেন। এতে ফ্রেন্ডদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। নিজেও ব্যবসার জন্য গ্রুপ খোলেন এবং সেই সুবিধা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন।
সফলতা-ব্যর্থতা
সালেহ আহমেদ এক্সনহোস্টকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে ওয়েব হোস্টিং ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। বর্তমানে এক্সনহোস্ট বাংলাদেশের সেরা একটি ডোমেইন হোস্টিং কোম্পানি হিসেবে সফলতা অর্জন করেছে। দেশে-বিদেশে মিলিয়ে তাদের ৩ হাজারের বেশি কাস্টমার। CloudLinux, cPanel, Cloudflare, Attracta এবং Softaculous এর মতো বিশ্বের নামিদামি কোম্পানির সাথে রয়েছে ব্যবসায়িক পার্টনারশিপ। মেসের একটি রুম থেকে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে ডিওএইচএস, মহাখালীতে রয়েছে নিজস্ব অফিস। বর্তমানে ছয়জন কর্মচারীসহ মোট আটজন কোম্পানিতে কাজ করেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে...
প্রথম থেকেই অনলাইন প্রচারণার মাধ্যমে এক্সনহোস্ট তার প্রচারণা করে আসছে। বর্তমানে অনলাইন প্রচারণার সাথে অফলাইন প্রচারণাও করছে তারা। অনলাইন প্রচারণার ক্ষেত্রে ফেসবুক, বিভিন্ন ফোরাম, ব্লগ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। আর অফলাইন প্রচারণার জন্য কম্পিউটার ম্যাগাজিন ব্যবহার করা হয়।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এক্সনহোস্ট'র ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে বিশ্বের নামকরা হোস্টিং প্রোভাইডার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা এবং দেশের অর্থনীতি এবং বেকারদের কর্মসংস্থানে অবদান রাখা। এই লক্ষ্যে ২০১৭-২০১৮ সালে যাতে কয়েক কোটি টাকা ইনভেস্ট করা যায় তার জন্য কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। যার মাধ্যমে কোম্পানিকে কয়েকশ কোটি টাকার কোম্পানিতে রূপান্তর করা।
নতুনদের জন্য
নতুনদের উদ্দেশ্যে সালেহ আহমেদ বলেন, ‘যেকোনো কিছু একাগ্রতা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে করলে সফলতা আসবেই। এই ব্যবসায় আসার আগে ব্যবসা সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। হোস্টিং ব্যবসা শর্টকাটে আয়ের কোনো রাস্তা নয়। প্রচুর ধৈর্য, কম্পিউটার এবং টেকনিক্যাল জ্ঞান থাকতে হবে। সততা এবং পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকলে আপনি হোস্টিং ব্যবসাকে পেশা হিসেবে নিতে পারেন। আর ঝুঁকি নেয়ার মতো মানসিকতাও থাকতে হবে।’
যোগাযোগ
বাসা-৩৯১, রোড-২৯, ডিওএইচএস, ঢাকা-১২০৬।
ওয়েবসাইট: www.exonhost.com
এসইউ/এএ/এইচআর