এজেন্টের ব্যাংক হিসাব খোলার নির্দেশনা মানছে না গ্রামীণফোন
মোবাইলে লেনদেন স্বচ্ছ, সু্ষ্ঠু ও নিরাপদ রাখার জন্য গ্রামীণফোন কোম্পানির মোবিক্যাশ এজেন্টকে আলাদা ব্যাংক হিসাব খোলা ও পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্ত নির্দিষ্ট সময়ের পর ছয় মাস অতিবাহিত হলেও সেই নির্দেশ মানছে না গ্রামীণফোন।
তবে নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ হওয়ার পরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও তিন মাস সময় দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে।এ সময়ের মধ্যে হিসাব খোলা না হলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মোবিক্যাশের ৩০ হাজার ৫শ এজেন্টকে আলাদা ব্যাংক হিসাব খোলা ও পরিচালনার জন্য সম্প্রতি তিন মাস সময় দিয়ে গ্রামীণফোনকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের চিঠিতে বলা হয়েছে, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসে লেনদেন স্বচ্ছ, সু্ষ্ঠু ও নিরাপদ রাখা ও হিসাবায়ন সহজ করার জন্য ছয় মাস সময়ের মধ্যে চুক্তিবন্ধ প্রতিটি ব্যাংকের জন্য এজেন্টদের পৃথক পৃথক হিসাব খোলা ও পরিচালনা করতে বলা হয়েছিল। যার সময়সীমা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী তিন মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পুনরায় পারামর্শ দেয়া হলো। একই সঙ্গে প্রতি মাসে এর অগ্রগতি প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, এজেন্টের মাধ্যমে সেবা দেয়ার জন্য ছয়টি ব্যাংকের সঙ্গে গ্রামীণফোনের চুক্তি রয়েছে। এখন মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিতে হলে সবক’টি ব্যাংকেই এসব এজেন্টের হিসাব থাকতে হবে। এজেন্টদের মাধ্যমে সেবা দিতে গ্রামীণফোনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ব্যাংকগুলো হলো-ডাচ-বাংলা, মার্কেন্টাইল, ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, আইএফআইসি ও ইউসিবিএল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের লীড কমিউনিকেশন্স স্পেশালিস্ট সৈয়দ শওকত ইমাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আমরা একটি প্রযুক্তিগত সমাধান তৈরি করেছি এবং তা তারা অবগত। কিন্তু এরপরও কেন চিঠি দিয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ডিসিএমপিএস/পিএসডি/৫৭/২০১০-৪৯৫ পত্র দিয়ে গ্রামীণফোনকে মোবিক্যাশের মাধ্যমে তিন ধরনের সেবার অনুমোদন দিয়েছে। এগুলো হলো-ট্রেন ও ক্রিকেট টিকিট ক্রয় এবং পরিসেবা বিল পরিশোধ। আর মোবাইল ব্যাংকিং বিষয়ে এ-সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা হয়েছে, এ সেবা অবশ্যই ব্যাংকের মাধ্যমে দিতে হবে। সেলফোন অপারেটররা শুধু প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে।
দ্বিতীয়বারের মতো কেন গ্রামীণফোনকে চিঠি দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. ইস্কান্দার মিয়া বলেন, মোবিক্যাশের এজেন্টগুলো নির্ধারিত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কোন চুক্তি করেনি। আমরা ছয় মাসের সময় দিয়েছিলাম সেটা হয় নাই। এরপর আরও তিন মাসের সময় দেয়া হয়েছে। অনেকেই মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চায়, তবে সেটা তো নিয়মের বাইরে হতে পারবে না।
উল্লেখ্য, এর আগে অনুমোদহীনভাবেই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদান শুরু করেছিল গ্রামীণফোন। প্রচার করেছিল মোবিক্যাশের বিজ্ঞাপনও। যদিও এগুলো এখন বন্ধ রয়েছে। তারা এখন অনুমোদিত সেবার মধ্যে সীমিত রয়েছে। সে সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও গ্রামীণফোণের এবং জরুরি বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোবিক্যাশের পরবর্তী কোনো সেবা ও প্রচারণার ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লিখিত অনুমোদন নেবে বলে গ্রামীণফোন জানিয়েছিল।
নীতিমালা অনুযায়ী, মোবিক্যাশের সব এজেন্টের সঙ্গে ব্যাংকের পৃথক চুক্তি থাকবে। পাশাপাশি এজেন্টগুলোও ধীরে ধীরে ব্যাংকের সেবা প্রদান বন্ধ করে দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মোবিক্যাশ এজেন্টের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করতে হলে এজেন্টকে পৃথক হিসাব খোলার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রথমে গ্রামীণফোন মোবিটাকা ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার করে সেবা চালুর অনুমোদন চায়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্য নামে সেবা চালু করে তিন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেয়। গ্রামীণফোন মোবিক্যাশ নামে সেবা চালু করে তিন ধরনের সেবার অনুমোদন নিয়ে নিজেরাই হিসাব খুলে ব্যাংকিং সেবা প্রদান শুরু করে। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপে তা বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
প্রান্তিক জনগণের কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং চালু হয়। তবে এ-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন হয় একই বছরের ২০ ডিসেম্বর। যা মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব ব্যাংককে মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশনা অমান্য করলে লাইসেন্স বাতিল হবে বলে জানানো হয়।
এ-সংক্রান্ত নীতিমালায় বাংলাদেশ ব্যাংকের স্পষ্ট নির্দেশনা-এ সেবা অবশ্যই ব্যাংকের মাধ্যমে দিতে হবে। সেলফোন অপারেটররা শুধু প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে।
এসআই/এএইচ/বিএ