ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ে শাওনের মাসে আয় ৫ লাখ টাকা
পৃথিবী এখন প্রযুক্তিনির্ভর। ছোট-বড় প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ওয়েবসাইট। নিজেদের অলক্ষ্যেই অনেক সময় ত্রুটি রয়ে যায় সেসব ওয়েবসাইটে। এসব ত্রুটি অবহেলা করার উপায় নেই, সামান্য ত্রুটিতেই হয়ে যেতে পারে প্রতিষ্ঠানের মারাত্মক ক্ষতি। কারণ ওয়েবসাইটের কোনো ত্রুটি থেকেই অসাধু কেউ হাতিয়ে নিয়ে যেতে পারে প্রতিষ্ঠানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
ওয়েবসাইটের ত্রুটির প্রতি অসাদু কারও নজর পড়ার আগেই যারা কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেন কিংবা হ্যাক হয়ে যাওয়া ওয়েবসাইট যারা ফিরিয়ে আনেন, তারাই হলেন ইথিক্যাল হ্যাকার। আরও সহজ কথায় তারা হলেন ভালো হ্যাকার। যারা দেশ ও দেশের মানুষের পক্ষে কাজ করেন। দেশি-বিদেশি খারাপ এবং বিপজ্জনক হ্যাকারদের থেকে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটকে বা নেটওয়ার্ককে যারা নিরাপদ রাখতে সহায়তা করেন। তারাই হলেন ইথিক্যাল হ্যাকার।
শাওন মীর একজন ইথিক্যাল হ্যাকার। ইথিক্যাল হ্যাকিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন এবং সফলতাও দেখছেন। দেশের প্রসিদ্ধ ইথিক্যাল হ্যাকারদের একজন শাওন মীর।
আরও পড়ুন: সম্ভাবনাময় পেশা হ্যাকিং
ইথিক্যাল হ্যাকিং জগতে শাওন মীরের আগমনের পেছনে চমৎকার একটি গল্প রয়েছে। ২০১৭ সালের দিকে শাওনের একটি ফেসবুক আইডি ডিজেবল করে দেয় কেউ। তখন তিনি ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করে হ্যাকিং সম্পর্কে জানতে পারেন। যদিও ওই সময় তার ধারণা ছিল, হ্যাকিং মানেই কারও সোশ্যাল মিডিয়ার আইডি হ্যাক করা। পরে অবশ্য তিনি হ্যাকিংয়ের ভালো দিকগুলো জানতে পারেন। এরপরে প্রসিদ্ধ একটি আইটি প্রতিষ্ঠান থেকে ইথিক্যাল হ্যাকিং বিষয়ে কোর্স সম্পন্ন করেন শাওন।
শাওনের বাড়ি ফরিদপুরে। ফরিদপুর ইশান ইনস্টিটিউট থেকে এসএসসি পাশ করেছেন। ডিপ্লোমা করেছেন রাজবাড়ী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। বর্তমানে গ্রীন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ সিএসইতে বিএসসি পড়ছেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে শাওন বড়। বাবা থাকেন প্রবাসে।
ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে শাওন প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ আয় করেছেন প্রায় ৯৯৯ ডলার। মাসে গড়ে আয় করেন তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা। ২০২০ সালের আগস্টে তার ফ্রিল্যান্সিংয়ের শুরু। গত ২৬ মাসে তিনি ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করেছেন দেড় লাখ ডলারের বেশি। এছাড়া জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসগুলোর বাইরেও তিনি নিয়মিত কাজ করছেন।
ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ের বাংলা রিসোর্স খুব কম। এ কারণে ইথিক্যাল হ্যাকিং শিখতে শুরুর দিকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে শাওনকে। বিভিন্ন বিষয়ে নতুন নতুন সমস্যারও সম্মুখীন হয়েছেন। তবুও হাল ছাড়েননি। সবসময়ই শেখার চেষ্টা করেছেন। সময় পেলেই ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ের চর্চায় মগ্ন থেকেছেন।
কাজের সময়ের ওপর মূলত তার আয় নির্ভর করে। সাধারণত ঘণ্টায় তিনি ১০০ ডলার নিয়ে থাকেন। ফাইভারে এখন তিনি ‘এ লেভেল সেলার’। আপওয়ার্ক থেকে এ পর্যন্ত আয় করেছেন ৮০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৮৬ লাখ টাকা।
ইথিক্যাল হ্যাকার হলে স্বল্প সময়ে অধিক আয় সম্ভব বলে মনে করেন শাওন। তিনি বলেন, ইথিক্যাল হ্যাকার হতে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতা নেই। তবে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ যেমন পাইথন, ব্যাশের, গো, জাভাস্ক্রিপ্ট ইত্যাদি জানা থাকলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। তবে, হ্যাঁ অল্প দিনেই অনেক সফল হয়ে যাবেন এমন চিন্তা করা যাবে না।
নিজের কাজের পাশাপাশি শাওন এখন অনলাইনে কোর্সও করান। যে কেউ চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে ইথিক্যাল হ্যাকিং শিখতে পারেন। এজন্য ভিজিট করতে পারেন শাওন মীরের ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটে।
কেএসকে/জেআইএম