স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা
শিবু দাশ সুমিত
আপনি বা আমি সঠিক মানেই যে অন্য কেউ ভুল তা কিন্তু নয়। প্রত্যেকেরই ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আছে। একটি বিষয়ে বিভিন্ন জনের চিন্তা-ভাবনা বা দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন ভিন্ন হতেই পারে। অন্যকথায় একে জীবনদৃষ্টিও বলা যেতে পারে। স্টিফেন রিচার্ডস কোভের লেখা ‘দ্য সেভেন হ্যাবিটস অব হাইলি ইফেক্টিভ পিপল’ বইটিতে ‘প্যারাডাইম শিফট’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি মানুষেরই আলাদা আলাদা প্যারাডাইম আছে। এটি স্বাভাবিকও বটে। ধরুন আপনি ও আপনার বন্ধু কোনো সিনেমা বা নাটক দেখলেন। সিনেমা বা নাটকটি আপনার ভালো লাগলো কিন্তু আপনার বন্ধুটির সেটি পছন্দ হলো না। সিনেমা বা নাটকের বিষয় কিন্তু একই। তবে বৈপরীত্য হওয়ার কারণ কী?
জন্মের সময় মানবশিশুর মস্তিষ্ক পুরোপুরি ফাঁকা থাকে। আমাদের চারপাশের পরিবেশ, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী তাদের ভালো লাগা-মন্দ লাগা, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, সুন্দর-কুৎসিত অনুভব করা ব্যাপারগুলো ধীরে ধীরে আমাদের মস্তিষ্কের মাঝে ঢোকাতে থাকেন। একটু বড় হলে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আমরা নতুন নতুন তথ্য সম্পর্কে জানতে পারি। বিভিন্ন সময়ে আহরণ করা এসব তথ্য নিয়েই আমরা ব্রেইনকে সমৃদ্ধ করছি। মূলত এসব তথ্যের ওপর নির্ভর করেই পরে আমরা যে কোনো বিষয় বা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্তে আসতে পারি। একেই বলা হয় প্যারাডাইম। মানুষের চিন্তায় প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটে। ঘটে বিবর্তন। আপনি ১০ বছর আগে কোনো বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বা যেভাবে চিন্তা করেছিলেন, ১০ বছর পর এসে মনে হচ্ছে সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল না বা বিষয়টাকে এভাবে চিন্তা করলে বোধ হয় ভালো হতো। এর অর্থ দাঁড়ায়, আপনার চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন ঘটেছে।
অর্থাৎ আপনার মধ্যে প্যারাডাইম শিফট হয়েছে। ২০০৮ সালে যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাটি সামনে আসে, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন এটি কোনোভাবেই অর্জন সম্ভব নয়। তবে ২০২১ সালের মধ্যেই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠনের যে প্রতিশ্রুতি এসেছিল; তা এখন দৃশ্যমান। বর্তমানে বহুল আলোচিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ অর্জনের যে রূপরেখা দেওয়া হয়েছে; তাতে বলা হচ্ছে জীবনব্যবস্থা হবে প্রযুক্তিনির্ভর, যেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের নাগরিক সেবা থেকে শুরু করে সব কিছুই স্মার্টলি করা যাবে। এতে সহজ হবে মানুষের জীবনযাত্রা, হাতের মুঠোয় থাকবে সবকিছু।
সম্প্রতি প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটে গেছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষ কাজে লাগিয়ে পরিবর্তিত-পরিবর্ধিত হবে শিল্প ও অর্থনীতির সব ক্ষেত্র। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব পৃথিবীকে আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বগ্রামে পরিণত করবে। জেমস ওয়াটের বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে এসেছিল প্রথম শিল্প বিপ্লব। যাকে কার্ল মার্কস বলেছিলেন, চালিকাশক্তি হিসেবে যান্ত্রিক শক্তি দ্বারা মানুষের কায়িক শক্তির প্রতিস্থাপন।
আরও পড়ুন: ফোনে বাংলা লেখার জনপ্রিয় ৫ অ্যাপ
দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের মূল আবিষ্কার ছিল বিদ্যুৎ। এই বিপ্লবের ফলে শ্রমিককে যন্ত্রের কাছে নেওয়ার পরিবর্তে যন্ত্রকে শ্রমিকের কাছে নেওয়া বেশি উপযোগী হয়। ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেটের ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে আসে তৃতীয় শিল্প বিপ্লব। সঙ্গে যুক্ত হয় অন্য তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন উপাদানও। তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের ঠিক ৫০ বছর পরই উত্থান হতে যাচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও ‘দ্য ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন’ বইতে ক্লাউস সোয়াব ২০১৬ সালে সর্বপ্রথম চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কথাটি ব্যবহার করেন। নিজের লেখা প্রবন্ধে বলেছেন, ‘আমরা চাই বা না চাই, এতদিন পর্যন্ত আমাদের জীবনধারা, কাজকর্ম, চিন্তাচেতনা যেভাবে চলেছে, সেটা বদলে যেতে শুরু করেছে। এখন আমরা এক প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।’ চতুর্থ শিল্প বিপ্লব পূর্বে ঘটে যাওয়া অন্য বিপ্লব থেকে কিছুটা আলাদা। কারণ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিল্প বিপ্লব শুধু মানুষের শারীরিক পরিশ্রমকে প্রতিস্থাপন করেছে। কিন্তু চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মানসিক পরিশ্রমকে প্রতিস্থাপন করবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উৎকর্ষ সাধন করেই ২০৪১ সালের মধ্যে অর্জিত হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।
স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে এমন এক বাংলাদেশকে বোঝানো হচ্ছে- যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আর্থিক ও কৃষিখাতের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে স্মার্ট পদ্ধতিতে। এটি নিশ্চিত করতে সরকারি ব্যবস্থাপনার ডিজিটাইজেশন এবং এর উন্নয়নে একটি দক্ষ ও স্বচ্ছ বাস্তবায়ন কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমন্বিত কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনের স্তম্ভ হবে চারটি:
১. স্মার্ট সিটিজেন
২. স্মার্ট সোসাইটি
৩. স্মার্ট ইকোনমি
৪. স্মার্ট গভর্নমেন্ট।
বাংলাদেশে বর্তমানে তরুণ-তরুণীর সংখ্যা ৪ কোটির বেশি, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫% এর কাছাকাছি। আগামী ২০-৩০ বছর ধরে বাংলাদেশে এই উৎপাদনশীল জনগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবে। এ ছাড়া এখন আমাদের নির্ভরশীল জনসংখ্যার চেয়ে কর্মক্ষম জনসংখ্যার পরিমাণ বেশি। জনসংখ্যার ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী এখন শতকরা ৬৮ ভাগ। এই কর্মক্ষম জনসংখ্যাই হলো একটি দেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনমিতিক লভ্যাংশ। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুফলকে কাজে লাগাতে হলে প্রতিটি নাগরিককে (সিটিজেন) প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ ও উপযোগী করে তুলতে হবে। শুধু অজ্ঞতার কারণে নাগরিকরা সরকারের অসংখ্য সুবিধাদি গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং সরকারও নাগরিকদের কাছ থেকে ধার্যকৃত কর পাচ্ছে না। এ ছাড়াও প্রবাসে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে যদি দক্ষতা ও স্মার্টনেসকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে একদিকে যেমন রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়বে, অন্যদিকে দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের নাগরিকদের স্মার্টনেস তথা স্মার্ট নাগরিক হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
আমাদের পুরো সমাজটাই হবে প্রযুক্তিবান্ধব। অর্থাৎ আমাদের সোসাইটিতে প্রত্যেক নাগরিক তার স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্য সেবাগুলো মুহূর্তের মধ্যে দেশের যে কোনো স্থান থেকে সহজেই গ্রহণ করতে পারবেন। স্মার্ট সোসাইটি বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে প্রত্যন্ত ও শহুরে অঞ্চলের মধ্যে কোনো বৈষম্য থাকবে না। পরিসংখ্যান বলছে, এ দেশের প্রায় ৬ কোটি মানুষ বর্তমানে শহরে বসবাস করে। সময় যত যাবে এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়বে। এতে শহরগুলো অচিরেই বসবাস অযোগ্য হয়ে যাবে। তাই স্মার্ট সোসাইটির মাধ্যমে উন্নত রাস্তাঘাট, সুপেয় পানি, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, কম্পিউটার ও দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করাসহ আধুনিক শহরের সব সুবিধাদি দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে বা প্রতিটি সমাজকে স্মার্ট করে গড়ে তোলা হবে। প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রত্যেক সমাজে বসবাসকারী নাগরিকদের জীবন আরও বেশি সহজ ও ঝামেলামুক্ত করার মাধ্যমে অর্জিত হবে স্মার্ট সোসাইটি।
আরও পড়ুন: চ্যাটজিপিটি কী, কীভাবে ব্যবহার করবেন?
আমাদের দেশে এখনো কৃষিতে অনেক ক্ষেত্রে সনাতন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। স্মার্ট ইকোনমির আওতায় কৃষিতে ব্যাপকভাবে যান্ত্রিকীকরণ করার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে। ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশ ঘটানো হবে এবং মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প আরও সম্প্রসারণ করা হবে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত করে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রযুক্তির ম্যাক্সিমাম ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন করে রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন নতুন বাজার সন্ধান এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ডিজিটাল ডিভাইসের নিজস্ব বাজার সম্প্রসারণ করা হবে।
সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা ও কর্মকাণ্ড হবে পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর। প্রযুক্তির ব্যবহার হবে সর্বত্র। জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দিতে ১২ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ডিজিটাল সেন্টার থেকে বর্তমানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তিন শতাধিকের বেশি সেবা পাচ্ছে। দেশজুড়ে বিস্তৃত ৮৪৬৮টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনসাধারণ আরও দ্রুত ও সহজে যাতে সরকারি সেবা পেতে পারে, তা নিশ্চিত করাই হবে স্মার্ট গভর্নমেন্টের অন্যতম লক্ষ্য।
মূলত ক্লাউড কম্পিউটিং, ইন্টারনেট অব থিংস, রোবোটিক্স, ন্যানো-বায়োটেকনোলজি, থ্রিডি প্রিন্টিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, স্বয়ংক্রিয় পরিবহন ব্যবস্থা এবং ক্রমবর্ধমান জটিল কাজে কর্মরত কর্মীদের বুদ্ধিদীপ্ত সহায়তায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উৎকর্ষে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথ সুগম হবে। উদ্ভাবনীমূলক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে একটি জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিদীপ্ত, টেকসই উন্নয়নের স্মার্ট বাংলাদেশ। যেখানে থাকবে স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট একাডেমিক ওরিয়েন্টেশন, স্মার্ট হসপিটালিটিজ, স্মার্ট কমিউনিকেশন, স্মার্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কৃষি ইন্টারনেট, স্মার্ট পুলিশিং, স্বাধীন নগর প্রশাসন, স্মুথ ডিজিটাল কানেকটিভিটি।
‘প্যারাডাইম শিফট’ বিষয়ক একটি বহুল প্রচলিত গল্প দিয়ে শেষ করি। স্টিভ প্রতিদিনই মেট্রোতে করে অফিসে যান। বাসা থেকে তার অফিস প্রায় ঘণ্টাখানেকের পথ। প্রতিদিনের মতো সেদিন সকালেও স্টিভ অফিসে যাওয়ার উদ্দেশে মেট্রোতে চড়ে বসেছেন। ট্রেন কয়েক স্টেশন যেতেই হুড়মুড় করে এলোমেলো চুলের লম্বা এক লোক দুটো অল্প বয়সী ছেলে নিয়ে স্টিভের কামরাতেই উঠে পড়লেন। সাধারণত সকালের এ ট্রেনে সবাই খবরের কাগজ পড়তে পড়তেই যাত্রা করেন। আর পিনড্রপ সাইলেন্স বলতে যা বোঝায়, তা-ই বিরাজ করে ট্রেনগুলোয়। সাধারণত পাশাপাশি দুজন কথা বললেও তার পরের জন শুনতে পাবেন না তাদের কথাবার্তা।
আরও পড়ুন: ডার্ক ওয়েব
স্টিভের কপাল খারাপ, এলোমেলো চুলের লম্বা লোকটা চারপাশ দেখে ধপ করে তার পাশেই বসে পড়লেন। বাচ্চা দুটো ট্রেনে উঠেই শুরু করেছে চিৎকার-চেঁচামেচি, হৈ-হুল্লোড় আর দৌড়াদৌড়ি! একজন আরেকজনকে ধরতে ছুটছে, নয়তো হুমড়ি খেয়ে কারো উপরেই পড়ছে। সবার মতো স্টিভও খুব বিরক্ত হচ্ছিলেন এসব দেখে। আর মনে মনে বলছিলেন, কেমন বাবা, কোনো ম্যানারস জানে না! উদাস ভাবে সামনে তাকিয়ে আছে, আর ছেলে দুটো যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াচ্ছে! একপর্যায়ে ছোট ছেলেটি এক ভদ্রমহিলার হাতে থাকা বই নিয়ে ভোঁ-দৌড় দিলো। বড়টিও তাকে ধরার জন্য ছুটল।
স্টিভের ভাগ্যে আজ শনির দশা লেগেছে বলাই যায়। পা পিছলে ছোট ছেলেটি পড়লো স্টিভের হাতের ওপর। হাত থেকে পত্রিকা ছিঁড়ে নিচে পড়ে গেল। বড় জনও ছোটটাকে ধরতে একই সঙ্গে ওই স্টিভের ওপরই ঝাঁপিয়ে পড়লো। ছেলে দুটো সরে যেতেই অসম্ভব বিরক্তি নিয়ে স্টিভ খুক খুক করে কাশি দিয়ে বললেন, ‘কিছু মনে করবেন না। ছেলে দুটো কি আপনার সন্তান?’ লম্বা লোকটি মাথা নেড়ে বললেন, ‘হ্যাঁ!’ স্টিভ এবার সর্বোচ্চ বিরক্তি নিয়ে বললেন, ‘তাহলে ওরা যে ট্রেনে চড়ার পর থেকে এসব অনাচার করছে, আমাদের সবাইকে বিরক্ত করছে, আর আপনি কেমন বাবা, তাদের একটু থামতেও বলছেন না?’ এলোমেলো চুলের লোকটা কাচুমাচু করে ছলছল চোখে স্টিভের দিকে তাকালেন। নিচু স্বরে বললেন, ‘কি করার আর কী বলব, আমি যে ঠিক ভেবে পাচ্ছি না। আমরা হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরছি। ওদের মা এই একটু আগেই মারা গেছেন!’
তাই কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসার আগে একটু ভেবে দেখতে হবে। সময় নিয়ে যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে ঝুঁকি কিছুটা কমে বৈকি! কিছু মানুষ বনসাই গাছের মতো বয়সে বাড়ে কিন্তু মানসিকভাবে যেখানে ছিল চিরদিন সেখানেই রয়ে যায়। সুতরাং বাড়তে হবে সবদিক দিয়েই।
লেখক: সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নড়াইল।
এসইউ/জেআইএম