বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অবস্থান
ডিজিটাল মার্কেটিং কিংবা অনলাইন মার্কেটিং বলতে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রমোশনাল ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য পটেনশিয়াল কাস্টমার বা কনজিউমার অনলাইনের মাধ্যমে খুঁজে পাওয়াকেই বোঝায়। কন্টেট মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, পেইড বিজ্ঞাপন, ই-মেইল মার্কেটিং, ভিডিও মার্কেটিং, ওডিও মার্কেটিং, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অংশ। এটি শুধু অনলাইন, ই-মেইল, সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা ওয়েবসাইট অ্যাডভার্টাইজমেন্টের মাধ্যমে হয়ে থাকে না বরং মাল্টিমিডিয়া মেসেজ ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অংশ। ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবসায়িক সেক্টরের জন্য একটি আশির্বাদ। কেননা ব্যবসাকে সহজলভ্য ও আইটেম কাস্টমাইজভাবে পণ্যের বণ্টন অনলাইনের মাধ্যমে দ্রুত করা সম্ভব হচ্ছে।
ডিজিটাল মার্কেটিং কী
বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে আমরা খুব দ্রুত অনলাইন কাস্টমার খুঁজে পাওয়াকে বুঝি। তবে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্বন্ধে আমাদের পূর্ণাঙ্গ ধারণা খুব বেশি নেই বললেই চলে। ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে মূলত ডিজিটালপণ্য একজন ক্রেতা কেন কিনবেন, তার কারণগুলো খুঁজে পেতে সাহায্য করে। সোশ্যাল মিডিয়া বুস্টিং, ক্যাম্পেইন ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। কেননা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা ও ব্যবহারের হার বেড়েই চলেছে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মদক্ষতা, সঠিক জ্ঞান এবং সেবার মান উন্নয়ন আপ টু ডেট রাখা সহজ হচ্ছে। এর প্রভাবে এক জায়গায় থেকে গ্রাহকের কাছে না গিয়েও সব তথ্য দেওয়া-নেওয়া যায়। ফল হিসেবে মার্কেটিং কস্ট কমানো যায়। কম সময়ে বিশাল এলাকায় সহজে ব্যবসা করা যায়। ব্র্যান্ড ডেভেলপমেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যার যতো ব্র্যান্ড ভ্যালু; তার ততো মার্কেট চাহিদা। এর জন্য অনেক ক্যাম্পেইন ও উৎসবের দরকার হতো। কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং আসার পর এসব আলাদাভাবে করতে হচ্ছে না। সব কিছু একই প্ল্যাটফর্মে করা সম্ভব।
বাংলাদশে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অবস্থান
ডিজিটাল মার্কেটিং যে কোনো প্রচলিত কোম্পানির নতুন পণ্য মানুষের কাছে দ্রুতগতিতে পৌঁছে দিতে পারে। কেননা প্রযুক্তির প্রতি নির্ভরশীলতা বেড়েই চলেছে। কম্পিউটার ও তথ্য গবেষণা বিজ্ঞানী ফাইজা ইসলাম নাহিন মনে করেন, বাংলাদেশের ডিজিটাল মার্কেটিং ই-কমার্স সাইটের সাথে জড়িত। যেখানে এসইও, ওয়েব ডিজাইনিং, ই-মেইল মার্কেটিং, কনটেন্ট মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, রেপুটেশন ম্যানেজমেন্ট এর অংশ হিসেবে প্রাধান্য পাচ্ছে। ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে গবেষণা অনেক বেড়েছে। ডিজিটাল মার্কেটিং দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে ব্যবসাকে অনলাইনে দ্রুত সময়ে প্রসারে ডিজিটাল মার্কেটিং ছাড়া কোনো উপায় নেই। কোনো গ্লোব্যাল ব্যবসাকে এক দেশ থেকে অন্য দেশে দ্রুত পৌঁছে দিতে এর বিকল্প নেই।
গবেষক ও তথ্য উপদেষ্টা এফ এম তোফায়েল আহমেদ জানান, এফিলিয়েট মার্কেটিং ই-কমার্স সাইটগুলোতে বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তবে ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস, লিড জেনারেশন, নতুন প্রোডাক্ট বাজারে আনা, টার্গেট কাস্টমার খুঁজে পাওয়া এবং পুরাতন কাস্টমারকে পুনরায় সংযুক্ত করা ইত্যাদি নিয়ে গবেষণাও বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। অনলাইনে উচ্চ প্রতিযোগিতার মধ্যে ডিজিটাল বিপণন প্রচার অভিযান ভালোভাবে চিন্তা করা উচিত। মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য শুধু লোভনীয় অফার ক্যাম্পেইনে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। সুতরাং জনগণের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। তাই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা অতি বাঞ্ছনীয়। কৌশলগত দিক থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার মাধ্যমে ডেটা সুরক্ষা এবং অনলাইনের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে তোলা যায়।
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের গুরুত্ব
আর্ফিয়াস আল-দ্বীন বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা থেকে উত্তরণের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে ডিজিটাল মার্কেটিং। এর মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আনা সম্ভব। এখানে বৈদেশিক বিনিয়োগ পাওয়ারও প্রবল সম্ভাবনা আছে। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে অনেক দেশ উন্নতির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে খুব অল্প সময়েই। তবে নেতিবাচক প্রভাব এর প্রসারকে সামগ্রিক অর্থে ব্যাহত করতে পারে। ঘরে বসেই আয় করার সহজ পদ্ধতি ডিজিটাল মার্কেটিং। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার খুব বেশি প্রয়োজন নেই। আমরা প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে কাজের মাধ্যমে ডলার কারেন্সি আনতে পারি। যেটা পরিবার ও রাষ্ট্রের বিশেষ উপকারে আসবে।’
মো. তরিকুল ইসলামের মতে, মানুষের অনলাইন সেবা ব্যবহারের প্রতি আগ্রহ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। সেজন্য বিভিন্ন অনলাইন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে দিন দিন বিশেষ গুরুত্বের জায়গা তৈরি করে নিতে পারছে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- ওয়েবসাইটের ট্রাফিক আনা, ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বা ভিজিটিংই পারে পণ্য বিক্রিতে সাহায্য করতে। তাই এ ট্রাফিক আনার দুটি মাধ্যমই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে জানা যায় খুব সহজে। একটি হলো পেইড মাধ্যম। যেখানে বিভিন্ন প্ল্যাফর্মকে টাকার বিনিময়ে বুস্ট করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। অন্যটি হচ্ছে অরগানিক মাধ্যম। যেখানে সার্চ প্লাটফর্ম ব্যবহার করেই সাধারণ মানুষ নিজ নিজ পছন্দের প্রোডাক্ট খুঁজে নেয়।
ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে সমালোচনা
ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলেই ক্রেতাদের ভরসা অর্জনের পাশাপাশি নতুন নতুন পণ্য বাজারে লাভজনকভাবে নিয়ে আসতে সম্ভব। ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণার সঙ্গে কিছুটা নেতিবাচক ধারণা আছে। বিভিন্ন অনলাইন প্রতারণা ও কাঙ্ক্ষিত সেবা না দেওয়ায় নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে নাতাসা ইয়াসমিন আফিফা বলেন, ‘ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের যথেষ্ট ধারণা না থাকায় অনলাইন ব্যবসায়ীরা এর ওপরে বিভিন্ন কোর্স ও তথ্যসেবা অন্বেষণ করেই চলেছে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শেখানোকে সময়ের সঙ্গে গুরুত্ব দেওয়া খুবই প্রয়োজন। ডিজিটাল সেবা যে শুধু কোম্পানির পণ্য বিক্রির জন্য নয় বরং গ্লোব্যালি এক দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য অন্য দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরারও একটি মাধ্যম।’
সুতরাং বলা যায়, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে একটি মূলধারার বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা, ব্যবসায়িক মনোভাব ও ধৈর্য রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নতুন কোনো ক্রেতাকে ডিজিটালপণ্যের সঙ্গে যুক্ত করা।
এসইউ/এএসএম