ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

কোহলি বিপদে পড়া মানেই মুস্তাফিজ অন্যগ্রহের

প্রকাশিত: ১১:১৩ এএম, ০৭ মে ২০১৬

ফিজ শব্দের অর্থ সোঁ সোঁ শব্দ করা। ঝড়ো বাতাসে যেভাবে সোঁ সোঁ শব্দ করে সেটাও ফিজ হিসেবে বলা হয়। সাধারণ একটি ইংরেজি শব্দকে অসাধারণ বানিয়ে ফেললেন মুস্তাফিজুর রহমান। তার বলের গতিতে শব্দটা অনুরননিত হয়। ফলে সানরাইজার্স হায়দারাবাদ তার নামই দিয়ে দিল `দ্য ফিজ`।

শোয়েব আখতার কিংবা ব্রেট লি`দের মতো এতটা গতির ঝড় অবশ্য মুস্তাফিজ তোলেন না। কিন্তু ১৪০ থেকে ১৪৫ কিলোমিটারের যে গতিতে তিনি বল করেন, তাতে স্লোয়ার দিলে গতিটা কত ওঠার কথা, বড় জোর ১৩০ এর কাছাকাছি। ক্রিকেটের ইতিহাসে স্লোয়ার দেয়ার বোলারদের গতি বিশ্লেষণ করলে এটাই উঠে আসবে।

কিন্তু মুস্তাফিজ এমনই এক বোলার, যিনি স্লোয়ার দেবেন, তবে গতির কোন পরিবর্তন হবে না। কার্টার দেবেন, গতির কোন পরিবর্তন হবে না। এমনকি ইয়র্কার দিতে গেলেও হাতের স্টাইল কিংবা গতিতে কোন পরিবর্তন আনবেন না। এমনই এক বিস্ময়কর বোলার তিনি। এ কারণেই এখনও পর্যন্ত ব্যাপক রহস্যময় এবং ধীরে ধীরে তুমুল জনপ্রিয় এক বোলারে পরিণত হচ্ছেন সাতক্ষীরার অজ পাড়া গাঁয়ের এই তরুণটি।

অভিষেকের পর থেকেই ঝড় তুলছেন। হৃদয় কেড়ে নিচ্ছেন তাবৎ ক্রিকেট বিশ্বের সকল ক্রিকেটপ্রেমীর। ভারতীয়রা ক্রিকেটে `ব্রিটিশ` জাতি। অথ্যাৎ একটু নাক উঁচা। তাদের চোখের সামনে অন্য কোন দেশের কেউ বড় তারকা হয়ে উঠবে, সেটা যেন বরদাস্তই করতে চাইবে না তারা। সেখানে মুস্তাফিজ অভিষেকেই নাকানি-চুবানি খাইয়েছেন পুরো ভারতবর্ষকে।

আইপিএলের কল্যাণে সেই মুস্তাফিজই এখন ভারতীয়দের চোখের মনি। ভারতীয় সমর্থকরা তো এমনও প্রস্তাব দিচ্ছেন, পান্ডিয়া-বুমরাহকে নাও, মুস্তাফিজকে দাও। সানরাইজার্স হায়দারাবাদের হয়ে যে ম্যাজিক্যাল স্পেলে বোলিং করে যাচ্ছেন, তাতে পুরো ক্রিকেট বিশ্বেরই নজর কেড়ে নিয়েছেন তিনি । তাকে নিয়ে নিবন্ধের পর নিবন্ধ রচনা করছে বিদেশি মিডিয়াগুলো। নিবন্ধ প্রকাশের মিছিলে যোগ দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় মিডিয়া গালফ নিউজ।

পত্রিকাটির প্রধান ক্রিকেট লেখিয়ে কে আর নায়ার মুস্তাফিজকে নিয়ে স্পেশাল ফিচার লিখেছেন, `মুস্তাফিজুর : অ্যা স্পিডস্টার উইথ দ্য ফিজ`- এই শিরোনামে। সেখানেই তিনি মুস্তাফিজকে নিজ চোখে দেখার বর্ণনা দেন। বাংলাদেশের ওয়ান্ডার বয়ের অভিষেকের এক বছর আগেই মুস্তাফিজকে দেখেছেন তিনি। যখন অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলার জন্য আরব আমিরাত গিয়েছিলেন তিনি।

ওই সময় যদিও মুস্তাফিজ খুব বেশি নজর কাড়তে পারেননি। তবে এক ম্যাচে ৩ উইকেটের একটি স্পেলের কারণেই কে আর নায়ার তাকে মনে রেখেছেন। এর একবছর পর যখন পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হলো এবং আফ্রিদি ও হাফিজের উইকেট নিয়ে শুরু করণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিযাত্রা, তখনই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন- এই ছেলে একটি-দুটি ম্যাচে ঝলক দেখানোর জন্য আসেনি। সে লম্বা রেসের ঘোড়া।

এরপর তো ভারতের বিপক্ষে অভিষেকেই নিলেন ৫ উইকেট। পরের ম্যাচে নিলেন ৬ উইকেট। ভারতকে সিরিজ হারালো বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্যগাথা এগিয়ে চললো। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক। নিজের প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিলেন ৪ উইকেট। হলেন ম্যাচ সেরা। দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলছেন তিনি এখনও। দ্য ফিজ- নামটা তাই স্বার্থক।

কে আর নায়ার তার নিবন্ধটি সাজিয়েছেন আরব আমিরাত ক্রিকেটের অধিনায়ক আমজাদ জাভেদের মন্তব্য দিয়ে। যারা মুস্তাফিজকে মোকাবেলা করে গেছেন সম্প্রতি শেষ হওয়া এশিয়া কাপে। আমজাদ জাভেদ গালফ নিউজকে বলেন, `মুস্তাফিজ এমন এক বোলার যাকে খেলা সত্যিই কঠিন। কারণ, একই অ্যাকশন এবং প্রায় ১৪০ কিলোমিটারের একই গতিতে সে স্লোয়ার দিতে পারে, কার্টার করতে পারে এমনকি ইয়র্কারও দিতে পারে।  যে কারণে তার স্লোয়ার বোঝা খুবই কঠিন। বিষয়টা বোঝা যায় বিরাট কোহলির মত ব্যাটসম্যানও যখন তার বলে খুব সমস্যায় পড়ে, তখন বুঝতেই হবে সে আসলেই ভিন্নগ্রহের এক বোলার। যা হওয়া অন্য কারও পক্ষে সম্ভব নয়। আমার বিশ্বাস, তার এই অসাধারণ বোলিংরহস্য চলতেই থাকবে।`

গালফ নিউজের ক্রিকেট লেখক কে আর নায়ার বলেন, অনেক সমস্যা মোকাবেলা করেই তাকে খেলতে হচ্ছে আইপিএলে। ক্রিকেট জীবনটাই তার শুরু হয়েছিল কষ্টের মধ্য দিয়ে। তার বড় ভাই মোখলেসুর রহমান পল্টু তাকে প্রতিদিন ৪০ কিলোমিটার মোটর সাইকেলে করে বাড়ি থেকে নিয়ে যেতেন সাতক্ষীরা শহরে। সেখানে গিয়ে তিনি ট্রেনিং নিতেন। যে কারণে ঠিকভাবে পড়ালেখাও করা হয়ে ওঠেনি মুস্তাফিজের।

এ কারণে মাতৃভাষা বাংলা ছাড়া তিনি আর কোন ভাষাই বুঝতে পারেন না। সানরাইজার্স হায়দারাবাদে মুস্তাফিজের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে তার যোগাযোগের বেশ সমস্যা হয়। তাতেও কিন্তু মুস্তাফিজের প্রতিভা বিকাশে কোন কিছু বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কারণ, মাঠে যখন তাকে ওয়ার্নার বোলিংয়ের জন্য ডাকেন, তখন মুস্তাফিজ নিজেই সাজিয়ে নেন তার ফিল্ডিং এবং দুর্দান্ত সব বোলিং করে যাচ্ছেন তিনি। এমনকি ডেথ ওভারে নিজেকের অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রমাণ করেছেন তিনি।

দলের বোলিং কোচ মুত্তিয়া মুরালিধরন সম্প্রতি জানিয়েছেন, সতীর্থরা কী বলছেন সেগুলো বোঝার জন্য মুস্তাফিজ গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করছেন। ঘটনাচক্রে মুস্তাফিজের আইডল হলেন পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ আমির। যদিও বর্তমান সময়ে এসে তুলনা শুরু হয়ে গেছে মুস্তাফিজ সেরা নাকি আমির সেরা?

মুস্তাফিজের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো- খুব অল্প সময়ে পেয়ে যাওয়া অনেক বড় খ্যাতি। এই খ্যাতির তোড়ে না আবার ভেসে যান তিনি, এটা অনেককেই তাকে নিয়ে শঙ্কায় ফেলে দিচ্ছেন। তিনি যদি এসবের দিকে না তাকিয়ে নিজের লাইন-লেন্থ এবং তার বোলিংয়ের যে তীক্ষ্ম দিকগুলো রয়েছে- সেগুলো ধরে রাখতে পারেন এবং খেলে যেতে পারেন, তাহলে নিশ্চিত অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা এবং সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারি বোলারে পরিণত হবেন তিনি।

ভারতীয় রঙ্গিন জার্সির অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি পর্যন্ত ব্যাখ্যা করেছেন, কেন মুস্তাফিজ এতটা ভয়ঙ্কর। তিনি বলেন, `এমনিতেই বাম হাতি হওয়ার কারণে তিনি একটু বেশি সুবিধা পাচ্ছেন ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে। তার ওপর তার বলে বেশ কয়েকধরনের বৈচিত্র্য, তাকে বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর বোলারে পরিণত করেছে। এ কারণেই এতটা সফল বোলারে পরিণত হয়েছেন তিনি।`

মুস্তাফিজের হাতে অস্ত্রের অভাব নেই। স্লোয়ার, কার্টার, ইয়র্কার, এক্সট্রা বাউন্স- কী নেই! এসব কারণেই তো এবি ডি ভিলিয়ার্স, হাশিম আমলা, ক্রিস গেইল, রোহিত শর্মা, স্টিভেন স্মিথ, কেন উইলিয়ামসন, বিরাট কোহলি এবং শেন ওয়াটসনদের মত বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানরা উইকেট দিতে বাধ্য হয়েছেন দ্য ফিজ মুস্তাফিজকে।

আইএইচএস/এবিএস

আরও পড়ুন