ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার, হলেন দাবার আন্তর্জাতিক মাস্টার

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০৮:৫৪ পিএম, ০৫ অক্টোবর ২০২৪

সৌখিন দাবাড়ু নাজিম রেজা একদিন মজা করে বলছিলেন, ‘নীড় যখন দাবা খেলে তখন ওর গায়ে মশা বসলেও টের পায় না। আমাদেরকেই মশা তাড়াতে হয়। ওর যখন দাবার বোর্ডে চোখ থাকে তখন দুনিয়ার আর কিছু খেয়াল থাকে না।’

মনন রেজা নীড়ের বাবা নাজিম রেজা এ কথা বলেছিলেন আজ থেকে ৫ বছর আগে, যখন উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদের রেকর্ড ভেঙ্গে নীড় দেশের সর্বকনিষ্ঠ জাতীয় দাবাড়ু হয়েছিলেন ৯ বছর বয়সে।

নিয়াজ মোরশেদ দেশের সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু হয়েছিলেন ১০ বছর বয়সে। মনন রেজা নীড় তখন নারায়ণগঞ্জের ফিলোসোফিয়া স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। তখন ছিলেন ক্যান্ডিডেট মাস্টার।

পাঁচ বছর পর মনন রেজা নীড় আবার ভাঙ্গলেন নিয়াম মোরশেদের রেকর্ড। শুক্রবার তিনি ফিদেমাস্টার থেকে হয়েছেন আন্তর্জাতিক মাস্টার। বর্তমানে দেশের পঞ্চম আন্তর্জাতিক মাস্টার নীড়। এ কৃতীত্ব দেখানোর পথে তিনি ভেঙ্গেছেন নিয়াজের সর্বকনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক মাস্টারের রেকর্ড।

নিয়াজ মোরশেদ আন্তর্জাতিক মাস্টার হয়েছিলেন ১৫ বছর ৫ মাস বয়সে, মনন রেজা হলেন ১৪ বছর ৩ মাস বয়সে। এখন তার চোখ গ্র্যান্ডমাস্টারে। এই হাঙ্গেরি সফরেই তিনি পেয়ে যেতে পারেন গ্র্যান্ডমাস্টারের প্রথম নর্ম।

মনন রেজা নীড়ের দাবাড়ু হওয়ার কোনো স্বপ্নই ছিলো না। ক্রিকেট আর ফুটবল ছিল প্রিয় খেলা। এমনকি দাবা খেলা শুরুর পরও তিনি বিকেল হলে ক্রিকেট না হয় ফুটবল নিয়ে মেতে থাকতেন। ক্রিকেটের প্রতি তার ঝোঁক বেশি ছিল।

ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে নীড় একদিন বাবার কাছে বায়না ধরেছিলেন ব্যাট-বল কিনে দেওয়ার। বাবা নাজিম রেজা তাকে ব্যাট-বল কিনে দেওয়ার জন্য দোকানে নিয়ে গিয়েছিলেন; কিন্তু মনন বাসায় ফিরেছিলেন দাবার বোর্ড হাতে নিয়ে। সেই নীড় এখন দেশের সর্বকনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক মাস্টার, তার মধ্যে অনেক দেখছেন দ্রুত গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার সম্ভাবনাও।

নাজিম রেজা বাসায় যখন কম্পিউটারে দাবা খেলতেন তখন মনন রেজা নীড় খুব আগ্রহ নিয়ে দেখতেন। তখন নীড়ের ধারণা ছিল, দাবা খেলাটা হয়তো কম্পিউটারেই খেলতে হয়। ক্রিকেটের ব্যাট-বল কিনতে গিয়ে দোকানে দাবার বোর্ড দেখে মনন তার বাবাকে বলেছিলেন, ‘এই খেলাতো কম্পিউটারের। বোর্ড বাইরে কেন?’

মননের বাবা যখন জবাব দিয়েছিল, ‘দাবা বাইরেরই খেলা, কম্পিউটারে ঢুকে গেছে।’ তখন মনন বললো, ‘তাহলে আমি দাবাই খেলবো, আমাকে দাবার বোর্ড কিনো দাও।’

আজকের আন্তর্জাতিক মাস্টার মনন রেজা নীড়ের আনুষ্ঠানিক দাবা খেলা তখন থেকেই। বাবার কাছেই শিখেছিলেন। দাবা খেলায় নীড়ের মনোযোগ দেখে বাবা নাজিম রেজা তাকে ভর্তি করিয়েছিলেন স্থানীয় কোচ নাজমুল হাসান রুমীর অধীনে। কিছুদিন অনুশীলনের পর ২০১৬ সালে ওকে প্রথম ঢাকার প্রতিযোগিতায় নিয়ে যাই সাব-জুনিয়র দাবায়। প্রথম অংশ নিয়েই হয়েছিল সপ্তম।

পরে এলিগেন্টস একাডেমিতে গ্র্যান্ডারমাস্টার এনামুল হোসেন রাজিবের কাছে প্রশিক্ষণ নেন। রাজিবের প্রশিক্ষণেই ২০১৯ সালে ৪৫তম জাতীয় ‘বি’ দাবায় সেরা দশের মধ্যে থেকে রেকর্ড গড়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন নারায়ণগঞ্জের ক্যান্ডিডেটমাস্টার মনন রেজা নীড়। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৯ বছর।

গত পাঁচ বছরে ঘরে-বাইরে অনেক কৃতিত্ব দেখিয়েছেন মনন। ক্যান্ডিডেট মাস্টার থেকে ফিদেমাস্টার হয়েছিলেন, এখন আন্তর্জাতিক মাস্টার। এ বছরই তিনি ১৪ বছরে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।

২০১৯ সালে মনন রেজা নীড় নিয়াজের রেকর্ড ভেঙ্গে সর্বকনিষ্ঠ জাতীয় দাবাড়ু হওয়ার গল্পটাও অন্যরকম। বলতে গেলে, নাটকীয়ভাবে তিনি জাতীয় ‘বি’ দাবায় খেলেছিলেন। নিজ জেলা নারায়ণগঞ্জ দলে কোয়ালিফাই করতে পারেনি মনন। পরে চট্টগ্রামের একটা কোটা খালি থাকায় মননকে ওই জেলা দলে খেলার সুযোগ করে দেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম। আর সুযোগ পেয়েই মনন রেজা নিজের নাম লিখিয়েছে ইতিহাসের পাতায়।

এপ্রিলে থাইল্যান্ডে আন্তর্জাতিক মাস্টারের প্রথম নর্ম অজন করেছিলেন। দ্বিতীয় নর্ম পেয়েছিলেন জুলাইয়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে। তৃতীয় নর্মের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন নীড়। আর তাতেই ৭ মাসের মাথায় হাঙ্গেরিতে হওয়া টুর্নামেন্টের অষ্টম রাউন্ডে ভারতের আন্তর্জাতিক মাস্টার পান্ডা সুমিতকে হারিয়ে কাঙ্খিত তৃতীয় নর্ম পেয়ে হয়ে গেলেন দেশের সর্বকনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক মাস্টার।

আন্তর্জাতিক মাস্টার হতে তিনটি নর্মের পাশাপাশি ২৪০০ রেটিং লাগে। মননের আছে তার চেয়েও বেশি। তাই ফিদেমাস্টার খেতাব নিয়ে হাঙ্গেরি যাওয়া মনন রেজা নীড় ফিরছেন আন্তর্জাতিক মাস্টার হয়ে। এত অল্প সময়ের মধ্যে আগে কেউ আন্তর্জাতিক মাস্টারের তিনটি নর্ম অর্জন করেননি।

দেশের সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ। ২১ বছর বয়সে তিনি উপমহাদেশের প্রথম এই খেতাব অর্জন করেছিলেন। নিয়াজের আরেকটি রেকর্ড ভাঙ্গতে হলে মনন রেজাকে ২০৩০ সালের মধ্যে গ্র্যান্ডমাস্টার হতে হবে। হাতে যে সময় তাতে নিয়াজ মোরশেদের শেষ রেকর্ডটি ভেঙে ফেলতেও পারেন মনন রেজা নীড়।

আরআই/আইএইচএস