ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

থমথমে ক্রীড়াঙ্গন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের অপেক্ষা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০৯:৩৬ পিএম, ০৭ আগস্ট ২০২৪

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শুরু হয়েছে বিভিন্ন স্তরে রদবদল। প্রশাসন ও বিভিন্ন সার্ভিসেস সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদের পরিবর্তন আসছে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠণের আগেই। সবার ধারণা, বৃহস্পতিবার রাতে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাপক পরিবর্তন আসবে বিভিন্ন সেক্টরে। ক্রীড়াঙ্গনের মানুষদের কৌতুহল কেমন পরিবর্তন তারা দেখবেন এই অঙ্গনে!

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলে ক্রীড়াঙ্গনকে পরিণত করা হয়েছে রাজনৈতিক মানুষের আখড়া হিসেবে। প্রকৃত ক্রীড়া সংগঠকদের দূরে ঠেলে দিয়ে বিভিন্ন ফেডারেশন ও সংস্থায় বসানো হয়েছে রাজনৈতিক লেবাসধারী মানুষকে। খেলাধুলার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকার পরও বিভিন্ন ফেডারেশনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে আছেন আওয়ামী লীগের দলীয় লোকজন। এখন মানুষ পরিবর্তন চায়।

সরকার পতনের পর গা ঢাকা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের লোকজন। দলীয় আনুকল্য নিয়ে যারা ফেডারেশনের চেয়ার দখল করেছিলেন তাদের এখন দেখা নেই। বুধবার বিকেলে স্টেডিয়াম পাড়ায় ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ফেডারেশন ও সংস্থা তালাবদ্ধ। দু’একটি খুললেও শেখানে শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা নেই। স্টাফ ও অগুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা ভয়ে ভয়ে ফেডারেশনে বসে আছেন। অনেক ফেডারেশনের কর্মকর্তারা আছেন দখল আতঙ্কে।

সরকারের পতনের পর এই চারদিনে নির্বাহী কমিটির কোনো সদস্য আসেননি বাফুফে ভবনে। মঙ্গলবার পর্যন্ত বেতনভূক্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভবনে আসেননি কেউ। বাসায় বসেই তারা অফিসের কাজ করেছেন।

তবে বুধবার থেকে স্বশরীরে অফিস করতে শুরু করছেন কর্মচারীরা। তাও সীমিত আকারে। প্রতি বিভাগের দুই-একজন করে অফিসে এসেছেন। নির্বাহী কমিটিতে যারা আছেন তাদের কাউকেই ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি, সহসভাপতিদের কাউকেই চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। ভবনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অফিস স্টাফরাও যোগাযোগ করতে পারছেন না কর্মকর্তাদের সঙ্গে। কারো ফোন বন্ধ, কেউ কেউ ফোনও ধরছেন না।

এমন অবস্থার মধ্যেই মঙ্গলবার একদল ফুটবল অনুরাগী বাফুফে ভবনের সামনে গিয়ে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী ও নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণের পদত্যাগ দাবী করে এসেছেন। ওই সময় বাফুফে ভবনে ছিলেন নারী ফুটবল দলের ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু। তিনি অবশ্য বাফুফের বর্তমান নির্বাহী কমিটির কেউ নন। আগের কমিটির সদস্য ছিলেন।

শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগ চাওয়া ফুটবল সমর্থকদের তিনি প্রধান ফটকের সামনে বুঝিয়ে ভেতরে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখেন। কারণ, ভবনের চতুর্থ তলায় মেয়েদের ক্যাম্প রয়েছে। শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগ চাওয়া সমর্থকরা অক্টোবরে হতে যাওয়া বাফুফের নির্বাচনে এই তিনজন যেন অংশ না নেন সে দাবী রেখে ফিরে গেছেন।

বাফুফের নির্বাহী কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বিদায়ী সরকারের দলীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। এই পরিচয় সহসভাপতি কাজী নাবিল আহমেদেরও। আরেক সহসভাপতি মহিউদ্দিন মহিও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের নেতা। সদস্যদের অনেকেই লীগের নেতা। সবাই বাফুফে ভবনে আসা বন্ধ করে দেওয়ায় দেশের প্রধান শীর্ষ এই ফেডারেশনে এখন শুনশান নীরবতা।

দেশের ৫৩ ফেডারেশন ও সংস্থার বেশিরভাগের কার্যালয়ই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এলাকায়। ফেডারেশনগুলো তালাবদ্ধ থাকায় এ এলাকা কোলাহলমূক্ত। তবে যারা পরিবর্তন চাচ্ছেন তারা এখন সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছেন এবং ক্রীড়াঙ্গনে শো-ডাউন দিচ্ছেন। তবে স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থাকায় উচ্চবাচ্য কমই হচ্ছে এখনও পর্যন্ত।

ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। সেখানকার পরিবেশে পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত কর্মচারীরা প্রকাশ্যে নেই। বিএনপি সমর্থিতরা শো-ডাউন দিয়ে বেড়াচ্ছেন। গত ১৫ বছরে নিয়োগ পাওয়া অনেকে গত দু’দিন অফিসেই আসেননি, ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে পরিস্থিতির খবর নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

পরিবর্তন প্রত্যাশীরা এখন অপেক্ষ করছেন নতুন সরকার গঠন পর্যন্ত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়ার দায়িত্বে কে আসবেন এখন সে অপেক্ষায় তারা। ক্রীড়াঙ্গনের নতুন অভিভাবকের কাছেই তারা দীর্ঘ ষোল বছরের অত্যাচার নীপিড়ন ও বঞ্চিত হওয়ার কথা বলবেন বলেই সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন।

তবে আপাতত যেহেতু দলীয় সরকার আসছে না বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দলীয়করণমুক্ত ক্রীড়াঙ্গই উপহার দিতে পারে। সেক্ষেত্রে বঞ্চিত যোগ্য সংগঠকদেরই ক্রীড়াঙ্গনে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা বেশি।

আরআই/আইএইচএস/