রাতে জমজমাট উদ্বোধন
কোনো স্টেডিয়ামে নয়, সিন নদীতে হবে অলিম্পিক প্যারেড
দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ- প্যারিস অলিম্পিক গেমসের জমজমাট উদ্বোধন আজ। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় শুরু হবে প্যারিস অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সাড়ে চার থেকে ৫ ঘণ্টা ধরে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ক্রীড়াজ্ঞের উদ্বোধন।
অলিম্পিকের শত বছরের ইতিহাসে এবার নতুন রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে প্যারিস অলিম্পিক। কারণ, এবারই প্রথমবার কোনো স্টেডিয়ামের বাইরে অনুষ্ঠিত হবে গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
অলিম্পিকের উদ্বোধনী প্যারেডের জন্য সাধারণত ব্যবহার করা হয় বড় কোনো অ্যাথলেটিক স্টেডিয়াম। কিন্তু প্যারিস অলিম্পিকের আয়োজকরা এবার সেটিকে রাজধানীর কেন্দ্র থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে একটি নদীতে, নৌকায় করে।
মূলত অলিম্পিকের মূল থিম ‘গেমস ওয়াইড ওপেন’কে সামনে রেখেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্যারিস গেমস কর্তৃপক্ষ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে প্যারিসের উপকণ্ঠে সিন নদীতে। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, গেমসে অংশগ্রহণকারী ১০ হাজার ৫০০ অ্যাথলেট ৯৪টি নৌকা এবং বার্জে করে আইফেল টাওয়ারের পূর্ব কোণের অস্টারলিটজ সেতু থেকে সিন নদীর ৬ কিলোমিটার পাড়ি দেবেন।
প্রায় ৫ লাখের বেশি দর্শক বিশেষভাবে তৈরি স্ট্যান্ড থেকে এই আয়োজন উপভোগ করবেন। এরই মধ্যে ২ হাজার ৭০০ ইউরোর বেশি দামে বিক্রি হয়েছে অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের টিকিট। তবে সিনের তীর ও আশপাশের ভবনের বারান্দা থেকেও বিনা মূল্যে উপভোগ করা যাবে বর্ণাঢ্য এই অনুষ্ঠান।
অলিম্পিকের ঐতিহ্য মেনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে সবার আগে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে অলিম্পিকের জন্মভূমি গ্রিসকে। তাদের পর দেখা যাবে শরণার্থী অলিম্পিক দলকে। আর সবার শেষে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে আয়োজক দেশ ফ্রান্সকে।
অন্যদিকে রাশিয়া ও বেলারুশের অ্যাথলেটরা এই আয়োজনে অংশ নেবেন ব্যক্তিগত পরিচয়ে। ইউক্রেন যুদ্ধে নিজেদের ভূমিকার কারণে দল হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে রাশিয়া ও বেলারুশকে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন পুরস্কারজয়ী প্রখ্যাত ফ্রেঞ্চ থিয়েটার পরিচালক টমাস জলি। ৪২ বছর বয়সী জলি সুপারহিট রক-অপেরা সংগীতের অনুষ্ঠান ‘স্টারম্যানিয়া’র পরিচালক হিসেবে সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত।
তার দলে ফরাসি টিভি সিরিজ ‘কল মাই এজেন্ট’ অনুষ্ঠানের লেখক ফ্যানি হেরেরোও রয়েছেন। আরও থাকবেন জনপ্রিয় লেখক লেইলা স্লিমানি ও বিখ্যাত ইতিহাসবিদ প্যাটট্রিক বুচেরোনে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, পুরো অনুষ্ঠানটিকে ১২টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেখানে মোট তিন হাজার নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী ও বিনোদনকর্মী অংশ নেবেন। যেখানে থাকবেন ২৮৮ জন হেয়ার আর্টিস্ট।
অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা সিনের দুই তীরে, সেতুতে ও কাছাকাছি স্মৃতিস্তম্ভগুলোয় থাকবেন। নটরডেম ক্যাথেড্রালও থাকবে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অংশ হয়ে, ২০১৯ সালে ভয়ংকর এক অগ্নিকাণ্ডের পর যেটি এখন পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দুই-তৃতীয়াংশ আয়োজন দিনের আলোয় আয়োজন করা হলেও বাকি অংশ দেখা যাবে গোধূলিবেলায়। জলির প্রত্যাশা, এই আয়োজনে প্যারিসের অপরূপ সূর্যাস্তের মুহূর্তও প্রাণভরে উপভোগ করতে পারবেন দর্শকেরা।
প্যারেডের পাশাপাশি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সংগীত আয়োজনও হবে খুব আকর্ষণী। তবে সংগীতের অংশে কিছু বিতর্কও আছে। যেমন ডানপন্থী রাজনীতিবিদদের আপত্তির পরও প্রখ্যাত ফরাসি সংগীতশিল্পী আয়া নাকামুরার অন্তর্ভুক্তিতে এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ফরাসি রাজনীতিবিদ মারিন লে পেন বলেছেন, ‘অলিম্পিক আয়োজনে নাকামুরার অংশগ্রহণ ফ্রান্সের জন্য অপমানজনক হবে।’
বিতর্কের পরও আয়া নাকামুরাকে রাখা এবারের অলিম্পিকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। যে কারণে তার পারফরম্যান্সের দিকে নিশ্চিতভাবে অনেকেরই দৃষ্টি থাকবে।
পাশাপাশি সিনের নদী থেকে সাবমেরিন ভেসে ওঠার আভাসও দিয়েছেন জলি। সেটিও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আকর্ষণীয় একটি অংশ হবে। জলি বলেছেন, ‘আমাদের হাতে আকাশ আছে, সেতু আছে, পানি আছে, নদীর তীর আছে। কাব্যিক ব্যঞ্জনায় অনুষ্ঠানকে রাঙানোর জন্য আমাদের হাতে যথেষ্ট জায়গা আছে। তাহলে আমরা নদীর তলদেশকেও কেন ব্যবহার করব না!’
সবকিছু সফল হবে, যদি সবাই অনুষ্ঠান শেষে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন। কারণ, এরই মধ্যে প্যারিসে নাশকতা হয়েছে। শহরটির রেল ব্যবস্থায় কয়েকবার অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। যার ফলে বিখ্যাত এই শহরটির রেল যোগাযোগ থমকে গেছে।
ফলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের সংশয় তৈরি হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সফলতা নিশ্চিত করতে ফরাসি পুলিশও কঠোর প্রস্তুতি নিয়েছে। বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এত বেশিসংখ্যক মানুষের নিরাপত্তার কথাটি আলাদা করে ভাবতে হচ্ছে তাদের।
আইএইচএস/