আবারো নিষিদ্ধ দক্ষিণ আফ্রিকা!
বাইশ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বর্ণবাদের কারণে ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কোন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। দলের প্রত্যেকটা ক্রিকেটার সাদা চামড়ার হওয়ার কারণে এবং ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মত সাদা চামড়ার মানুষদের দেশের সাথে খেলতে চাওয়ার কারণেই আইসিসি তাদেরকে বাইশ বছর নিষিদ্ধ করে রেখেছিল ক্রিকেট থেকে। তবে কিংবদন্তী নেলসন মেন্ডেলার হাত ধরে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ নির্মূল হওয়ার পর থেকে সাদা-কালো বৈষম্য অনেকটাই কমে আসে। কিন্তু, সময়ের পরিবর্তনে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে ঘৃণিত বর্ণবাদ। যে কারণে আবারও নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হতে যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
তবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ থেকে নির্বাসনের মত কঠোর শাস্তি হচ্ছে না এবার হয়তো। আগামী এক বছর নিজেদের মাটিতে কোন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারবে না দক্ষিণ আফ্রিকা। শুধু ক্রিকেটই নয়; রাগবি, অ্যাথলেটিকস এবং নেটবলের উপরেও এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের পক্ষ থেকে। ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রীড়ামন্ত্রী ফিকিলে এমবালুলা আন্তর্জাতিক ইভেন্টগুলোতে আবেদন করার উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দিয়েছেন। কৃষ্ণাদের সঙ্গে বৈষম্য নিয়ে এমিনেন্ট পার্সনস গ্রুপ অন ট্রান্সফরমেশন ইন স্পোর্টস- নামে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পরই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার খেলাধুলায় কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য আলাদা কোটা রয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটা ফেডারেশন সেই কোটা পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এই নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হচ্ছে তাদের। তবে পূরণ করতে পারাই নয়, কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে বৈষম্যও করে তারা। তবে শুধুমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকান ফুটবল ফেডারেশনই এই কৃষ্ণাঙ্গ কোটা পূরণ করতে পেরেছে। যে কারণে, নিষেধাজ্ঞার কবল থেকে দূরে রয়েছে তারা।
এমবালুলা সোমবার বলেন, ‘আমি যে ৫টি ফেডারেশনের নাম উল্লেখ করেছি, আরোপিত শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়া, তাদের ওপর আগামী এক বছর ছোট কিংবা বড়, আন্তর্জাতিক কোন টুর্নামেন্ট আয়োজন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট আয়োজনের বিষয়ে আবেদন করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছি। এক বছর পর তাদের অবস্থান আবারও পর্যালোচনা করা হবে। সেই পর্যালোচনার ভিত্তিতেই পূনরায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে যে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে কী থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ৫টি ফেডারেশনকে আমরা কোনভাবেই এখন আর সমর্থণ দিতে পারি না এবং এই সময়ের মধ্যে সমর্থণ দেয়া সম্ভবও নয়। কারণ এখনও বহু কাজ বাকি রয়ে গেছে। কারণ, বড় ৫টি ফেডারেশনের মধ্যে স্বচ্ছতার অনেক ফারাক রয়ে গেছে।’
দক্ষিণ আফ্রিকায় অন্যতম জনপ্রিয় খেলা রাগবি। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা এই খেলায়। এ খেলাটির ক্ষেত্রে একটু বেশিই জটিলতার মধ্যে পরতে যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা রাগবি ফেডারেশন। রাগবি বিশ্বকাপের মত বড় আসর আয়োজনের জন্য আবেদন করতে চেয়েছিল। ১৯৯৫ সালে নেলসন মেন্ডেলার দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপের আয়োজন করে বিশ্বচ্যাম্পিয়নও হয়েছিল তারা।
এরপর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে আবারও ২০২৩ বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য আবেদন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা রাগবি ফেডারেশন; কিন্তু এর মাঝেই ঘটলো বিপত্তি। শুধু বিশ্বকাপ কিংবা কোন টুর্নামেন্ট নয়, রাগবি সিরিজ আয়োজনের ক্ষেত্রে কী নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে? কারণ এ বছরই নিজেদের মাঠে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ওয়ার্ল্ড রাগবি সিরিজের ম্যাচ খেলার কথা রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার। এ বিষয়ে পরিষ্কার কিছু বলেনি দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রীড়া মন্ত্রী। তিনি শুধু জানিয়েছেন, ‘এ ক্ষেত্রে টুর্নামেন্টের প্রকৃতি বিবেচনা করা হবে। এটা যদি আন্তর্জাতিক মানের কোন টুর্নামেন্টের আদলে হয় তাহলে আমরা সমর্থন দেবো না।’
রাগবির মত কী তবে ক্রিকেটেও দ্বিপাক্ষিপ সিরিজ আয়োজনের ক্ষেত্রে কোন সমস্যায় পড়বে ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা। এ বিষয়ে কোন আলোচনাই আসেনি ক্রীড়ামন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞার নির্দেশনায়।
আরআর/আইএইচএস/এবিএস