ফেডারেশন থেকে পদত্যাগের হুমকি
দাবি না মানলে হকি খেলবে না মোহামেডান
হকি মানেই নানা বিতর্ক, নানা রঙ। মাঠের খেলার চেয়ে যে ফেডারেশনে বছরজুড়ে চেয়ার নিয়েই বেশি আলোচনা হয়! প্রিমিয়ার হকি লিগের দূর্বল আম্পায়ারিং হকির রঙে লাগিয়েছে নতুন হাওয়া। যার জের ধরে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের বর্তমান কমিটির অধীনে কোনো প্রতিযোগিতায় না খেলার হুমকি দিয়েছে দেশের হকির উজ্জ্বল নাম মোহামেডান।
রোববার ক্লাব প্রাঙ্গনে সংবাদ সম্মেলনে কিছু দাবি উত্থাপন করেছেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের ডাইরেক্টর ইনচার্জ কাজী ফিরোজ রশীদ। সেই দাবি উপেক্ষা করলে ফেডারেশনের বর্তমান কমিটির অধীনে হকি না খেলার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক এই সংসদ সদস্য।
লিখিত বক্তব্যে মোহামেডানের শীর্ষ স্থানীয় এই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘গত ১৯ এপ্রিল শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচটিতে আবাহনীর বিপক্ষে মোহামেডান যখন ৩-২ গোলে এগিয়ে তখন ম্যাচের ১৭ মিনিট বাকি থাকতে একটি ফাউলের পর পুনরায় খেলা শুরুর প্রাক্কালে আবাহনীর ১০
নম্বর জার্সিধারী খেলোয়াড় পুস্কর ক্ষিসা মিমো মোহামেডানের ১৭ নম্বর জার্সিধারী খেলোয়াড় আমিরুলকে ধাক্কা দেন। আবাহনীর ৭ নম্বর
জার্সিধারী খেলোয়াড় নাঈম উদ্দিন মোহামেডানের ১৬ নম্বর জার্সিধারী খেলোয়াড় দ্বীন ইসলাম ইমনকে ষ্টিক দ্বারা মুখে আঘাত করে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে ৭টি সেলাই করা হয়। এরপর উভয় দলের খেলোয়াড়রা ধাক্কাধাক্কিতে লিপ্ত হন।’
‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে ওমানের আম্পায়ার ওয়াকিটকিতে কারো সঙ্গে আলাপের পরে মোহামেডান ক্লাবের ২ জনকে লাল কার্ড ও ১ জনকে হলুদ কার্ড এবং আবাহনীর ১ জনকে লাল কার্ড ও ১ জনকে হলুদ কার্ড প্রদর্শন করেন। যা সম্পূর্ণ পক্ষপাতমূলক আচরণ। আবাহনীর মিমো মারামারি ঘটনার সূত্রপাত করলেও তাকে কোন ধরনের কার্ড প্রদান করা হয়নি। মাঠে উপস্থিত আমাদের ম্যানেজার ও অধিনায়ক বারবার দাবি করছিলেন ভিডিও রেফালেরে মাধ্যমে যেন কার্ড প্রদর্শন বিবেচনা করা হয়। আমাদের কোনো দাবি রাখেননি ওমানের আম্পায়ার।’
‘বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের পূর্বের নীল নকশা অনুযায়ী আমাদের পূর্ববর্তী খেলায় উষা ক্রীড়া চক্রের বিরুদ্ধে অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমিকে ওমানের আম্পায়ার উদ্দেশ্যমূলক হলুদ কার্ড প্রদর্শন করেন। সেই বির্তকিত আম্পায়ার পূনরায় আমাদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত ২টি লাল কার্ড ও ১টি হলুদ কার্ড প্রদানের মাধ্যমে আমাদের দলীয় শক্তি খর্ব করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। মালেশিয়ান আম্পায়ার মাঠে উপস্থিত থাকা সত্বেও ওমানের এ বির্তকিত আম্পায়ারকে খেলা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া ফেডারেশনের একটি ষড়যন্ত্রের অংশ।’
লিগের শেষ খেলার আগের দিন আমরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যে আশংকা প্রকাশ করেছিলাম তারই নীল নকশা বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। আমাদের ২ জন খেলোয়াড়কে লালকার্ড ও ১ জনকে হলুদকার্ড প্রদর্শন করায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের একাধিকবার অনুরোধ করলেও আম্পায়ার তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন ও এক পর্যায়ে খেলার শেষ বাঁশি বাজিয়ে মাঠ ত্যাগ করে সবাইকে হতবাক করে দেন। তাৎক্ষণিক ফেডারেশন টেবিলে বসে খেলার ফলাফল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।’
‘আমরা জানতে পেরেছি যে, হকি ফেডারেশনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ সাব কমিটি আম্পায়ার্স বোর্ডের কোন অস্তিত্ব নেই। সেক্ষেত্রে কোন নীতিমালার আলোকে খেলা পরিচালিত হলো, তা আমাদের বোদগম্য নয়। ১৫ মার্চ বাংলাদেশ স্পোর্টিং ক্লাব ও আজাদ স্পোটিং ক্লাবের মধ্যে অনুষ্ঠিত ম্যাচ গোলোযোগের কারণে ১২ মিনিট খেলা অবশিষ্ট থাকার পরেও আম্পায়ার ২ দলকে ডেকে মাঠেই ড্র ঘোষণা করেন। যা বাইলজের পরিপন্থি। ২৬ মার্চ বাংলাদেশ স্পোর্টিং ক্লাব ও এজেক্স স্পোটিং ক্লাবের মধ্যে অনুষ্ঠিত ম্যাচে গোলকে কেন্দ্র করে একটি দল খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। সে ক্ষেত্রে খেলার বৃহত্তর স্বার্থে পরবর্তী দিনে অবশিষ্ট সময়ের খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে ফলাফল নির্ধারিত হয়।’
ডিসিপ্লিনারিটি কমিটির কোন ভূমিকা শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচে পরিলক্ষিত হয়নি। এছাড়াও ৩য় আম্পায়ারের রুমে ফেডারশনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি এবং ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের হস্তক্ষেপ সকলে প্রত্যক্ষ করেছেন। আমরা কয়েকটি খেলার আম্পায়ারদের পক্ষপাতমূলক আচরণের বিষয়ে ফেডারেশন সভাপতি বরাবর পত্র প্রেরণ করা হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।’
আমরা ফেডারেশনের একতরফাভাবে ঘোষণা এবং বিতর্কিত আম্পায়ার কর্তৃক পক্ষপাতমূলক লাল কার্ড ও হলুদ কার্ড প্রদর্শণ প্রত্যাক্ষান করছি। বর্তমান লিগের সর্বোচ্চ পয়েন্টধারী ক্লাব হিসেবে এবং উক্ত খেলায় ৩-২ গোলে অগ্রগামী থাকা মোহামেডানকে শিরোপা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা খেলতে কখনো অস্বীকৃতি জানাইনি। শধুমাত্র ভিডিও রেফারেলের আলোকে প্রকৃত দোষীদের সনাক্তকরণের দাবী জানানো হয়েছিল। হঠাৎ করে আম্পায়ারদয় বাঁশি বাজিয়ে মাঠ ত্যাগ করেন। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, হয়তো লিগ কমিটি জরুরি সভা করে পরবর্তী দিনে খেলার অবশিষ্ট অংশ পরিচালনা করবে। যার উদাহরণ এ লিগে রয়েছে। আমরা খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি উল্লেখ করে আবাহনীকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে, যা আমাদেরকে হতবাক করেছে।’
আমাদের পরিষ্কার দাবি, ‘হকির বৃহত্তর স্বার্থে ভিডিও রেফারেলের আলোকে প্রদর্শিত কার্ড পূনঃবিবেচনা করে ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাহার এবং ওমানের আম্পায়ারের বির্তকিত সিদ্ধান্তের দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে। বাংলাদেশের হকিতে অন্যতম সফল দল মোহামেডানের দাবি প্রত্যাক্ষাণ করা হলে আগামীতে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের বর্তমান কমিটির অধীনে যে কোনো প্রকার প্রতিযোগিতামূলক খেলা থেকে আমরা বিরত থাকবো। প্রয়োজনে ফেডারেশনের বর্তমান কমিটিতে আমাদের ক্লাবের প্রতিনিধি যারা আছেন, তারাও পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন।’
হকিকে জঞ্জালমূক্ত করতে মোহামেডান যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন এমপির হস্তক্ষেপও কামণা করেছে। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের পরিচালক জামাল রানা, সাবেক পরিচালক ও স্থায়ী সদস্য প্রতাপ শংকর হাজরা ও সারওয়ার হোসেন, স্থায়ী সদস্য শফিকুল ইসলাম লিটু, হকি কমিটির সহসভাপতি হাজী হুমায়ন কবীর, দলীয় ম্যানেজার আরিফুল হক প্রিন্স।
আরআই/আইএইচএস/