ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

‘অলিম্পিকে খেলার স্বপ্ন নিয়েই দেশে এসেছি’

রফিকুল ইসলাম | প্রকাশিত: ০৩:১৮ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০২৪

গত বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চীনের হাংজু শহরে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে পদকের কাছাকাছি গিয়েছিলেন বক্সার সেলিম হোসেন। কোয়ার্টার ফাইনালে জাপানের বক্সারের বিপক্ষে জিতলেই দীর্ঘ ৩৭ বছর পর এশিয়ান গেমসে পদক পেতেন বাংলাদেশের কোনো বক্সার।

শেষ পর্যন্ত পদক জিততে না পারলেও প্রত্যাশার বাইরে থাকা বক্সার সেলিমের পারফরম্যান্সই হয়ে থাকে ব্যক্তিগত ইভেন্টে বাংলাদেশের সেরা। যে সাফল্য সেলিম হোসেনকে হাতছানি দিচ্ছে অলিম্পিক গেমস।

আগামী ২৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বসবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর অলিম্পিক গেমস। এই গেমসে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) যে কয়জন ক্রীড়াবিদের জন্য ওয়াইল্ড কার্ডের আবেদন করেছে, তার একজন বক্সার সেলিম হোসেন। শেষ পর্যন্ত ভাগ্যের শিঁকে ছিড়লে সেলিম হোসেনই হবেন অলিম্পিক গেমসে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের প্রথম বক্সার।

কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই বক্সার। ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়ার সম্ভাবনা ও অলিম্পিকে খেলার স্বপ্ন নিয়ে মিশন থেকে দুই মাসের ছুটি নিয়ে দেশে এসেছেন। দেশে ফিরে নিজের স্বপ্ন, অলিম্পিকের প্রস্তুতি নিয়ে জাগো নিউজকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ৩২ বছর বয়সী বক্সার সেলিম হোসেন।

জাগো নিউজ: এক বছরের জন্য জাতিসংঘ শান্তি মিশনে কঙ্গো গিয়েছিলেন। ৬ মাসের মধ্যেই ফিরে আসলেন। কবে এবং কেন দেশে আসা আপনার?
সেলিম হোসেন: আমি কঙ্গো গিয়েছিলাম ১১ অক্টোবর। ২ মাসের ছুটি নিয়ে দেশে এসেছি ৪ এপ্রিল। ছুটি নিয়ে দেশে আসার একটাই কারণ অলিম্পিক গেমসের জন্য প্রশিক্ষণ।

অলিম্পিক‘অলিম্পিকে খেলার স্বপ্ন নিয়েই দেশে এসেছি’একান্ত সাক্ষাৎকারে এশিয়াডে চমক দেখানো বক্সার সেলিম হোসেন

জাগো নিউজ: আপনি তো এখনো নিশ্চিত নন যে, ওয়াইল্ড কার্ড পাবেন। তাহলে অনুশীলনের জন্য ছুটি নিলেন যে?
সেলিম হোসেন: আমার মন বলছে আমি সুযোগ পাবো। অলিম্পিক গেমস খেলা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। যদি সুযোগ পাই তাহলে দেশের সম্মান বাড়াতে যাতে ভালো পারফরম্যান্স করতে পারি এ জন্যই প্রস্তুতি শুরু করেছি।

জাগো নিউজ: অলিম্পিক গেমসের তো এখনো ৫ মাস বাকি। আপনি ছুটিতে এসেছেন দুই মাসের জন্য। সুযোগ পেলে কি করবেন?
সেলিম হোসেন: আমার স্যাররা বলেছেন, সুযোগ পেলে তারা আরো ছুটিয়ে বাড়িয়ে দেবেন। বক্সিংয়ের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্যাররা অনেক আন্তরিক।

জাগো নিউজ: এই ৬ মাস তো মিশনে ছিলেন। অনুশীলন কি করতে পেরেছিলেন?
সেলিম হোসেন: করেছি। আমি দেশ থেকে বক্সিংয়ের সরঞ্জাম নিয়ে গিয়েছিলাম। কঙ্গোতে আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজের ফাঁকে ফাঁকে ট্রেনিংয়ের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তাই বলতে গেলে মিশনে থাকা অবস্থায় আমি নিয়মিত অনুশীলন করেছি।

জাগো নিউজ: দেশে ফিরে কোথায় কার কাছে অনুশীলন করছেন?
সেলিম হোসেন: আমি এখন বাড়িতে আছি রাজশাহী শহরে। এখানে মর্ডান বক্সিং ক্লাবে অনুশীলন করছি। জাতীয় দলের কোচ সফিউল আজম মাসুদ স্যার এই ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং এখানে কোচিং করান। তার কাছেই আমি নিয়মিত অনুশীলন করছি।

জাগো নিউজ: যদি অলিম্পিক গেমসে খেলার সুযোগ পান, তাহলে আপনাকে নাকি বিদেশে ট্রেনিংয়ের জন্য পাঠাবে?
সেলিম হোসেন: আমি শুনেছি। ওয়াইল্ড কার্ড পেলে থাইল্যান্ড পাঠানোর উদ্যোগ নেবে ফেডারেশন। তখন আমার সাথে কোচ সফিউল আজম মাসুদ স্যারও যাবেন। খুব তাড়াতাড়িই হয়তো জেনে যাবো অলিম্পিকে যাওয়া হবে কি না।

জাগো নিউজ: আপনি এশিয়ান গেমসে প্রত্যাশার আলোয় ছিলেন না। অথচ আপনি ছিলেন ব্যক্তিগত ইভেন্টে বাংলাদেশের সেরা পারফরমার। হাংজু এশিয়ান গেমসের সেই লড়াইয়ের কথাগুলো যদি পাঠকদের বলতেন।
সেলিম হোসেন: প্রথম রাউন্ডে আমি শ্রীলঙ্কার বক্সারকে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠি। দ্বিতীয় রাউন্ডে তাজিকিস্তানের বক্সারকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লিখিয়েছিলাম। যার মধ্য দিয়ে আমি পদকের কাছাকাছি গিয়েছিলাম। কোয়ার্টার ফাইনালে জাপানের প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আমার লড়াই ছিল উনিশ-বিশ। দারুণ লড়াইও করেছিলাম। অল্পের জন্য সেমিফাইনালে উঠতে পারিনি। উঠলেই ব্রোঞ্জ পদক নিশ্চিত হতো। আমাদের যে লড়াই হয়েছিল তাতে জাজ যে কাউকেই বিজয়ী ঘোষণা করতে পারতেন। করেছেন জাপানী বক্সারকে।

জাগো নিউজ: এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ ব্যক্তিগত ইভেন্টে একটি পদক পেয়েছে ৩৭ বছর আগে। বাংলাদেশকে সেই সম্মান এনে দিয়েছিলেন একজন বক্সার। তিনি রাজশাহীর মোশারফ হোসেন। একই শহরে থাকেন। তার সঙ্গে কখনো দেখা হয়েছে আপনার?
সেলিম হোসেন: তাকে বেশ কয়েকবার দেখেছি স্টেডিয়ামে। তবে কখনো কথা বলার সুযোগ হয়নি। তার সম্পর্কে আমি জানি। বড় মাপের বক্সার ছিলেন। তিনিই বাংলাদেশকে বক্সিংয়ে পদক এনে দিয়েছেন এশিয়ান গেমস থেকে।

অলিম্পিক‘অলিম্পিকে খেলার স্বপ্ন নিয়েই দেশে এসেছি’একান্ত সাক্ষাৎকারে এশিয়াডে চমক দেখানো বক্সার সেলিম হোসেন

জাগো নিউজ: আপনার পরিবার নিয়ে কিছু বলুন। আপনি বক্সার হলেন কীভাবে, তা যদি জানাতেন পাঠকদের।
সেলিম হোসেন: রাজশাহী শহরের শিরুইল কলোনীতে আমাদের বাসা। বাবা-মা এবং ৩ ভাই ও ২ বোন এক সাথে থাকি। আমি ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। আমার স্ত্রী রাজশাহী সিটি কলেজের শিক্ষার্থী। এলাকার বড় ভাই নাদিম বক্সিং করতেন। খেলতেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। বক্সিং খেললে সেনাবাহিনীতে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা, বিদেশে খেলতে যাওয়ার সম্ভাবনা। এসব ভেবেই আমি শহরের সিটি বক্সিং ক্লাবে ভর্তি হয়েছিলাম।

জাগো নিউজ: বক্সিং ক্লাবে ভর্তি হওয়ার পর থেকে গত বছর এশিয়ান গেমসে অংশ নেওয়া। ক্যারিয়ারের এ সময়টা কেমন ছিল আপনার?
সেলিম হোসেন: আমি ২০১০ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি পাই। প্রতিষ্ঠানের হয়ে ২০১২ ও ২০১৩ সালে বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস বক্সিংয়ে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক খেলা শুরু। ২০১৬ ও ২০১৯ সালের এসএ গেমসের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিলাম। এর মধ্যে ২০১৯ সালে কাঠমান্ডু এসএ গেমসে অল্পের জন্য আমার সুযোগ হয়নি। কাঠমান্ডুতে খেলা রবিন মিয়াকে হারিয়ে আমি ২০২০ সালে নবম বাংলাদেশ গেমসে স্বণপদক জিতেছিলাম। পরের বছর সিনিয়র জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপেও স্বর্ণ জিতেছিলাম। ওই বছর রাশিয়ার মস্কোতে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড মিলিটারি বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেই। ৩০ তম জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ জিতে ডাক পাই বার্মিংহাম কমনওয়েথ গেমসের দলে। ওই গেমসে আমি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছিলাম ভারতীয় বক্সারের সঙ্গে। তারপর অংশ নেই এশিয়ান গেমসে।

জাগো নিউজ: বক্সিং নিয়ে আপনার লক্ষ্য কি?
সেলিম হোসেন: এখন আমার ধ্যানজ্ঞান অলিম্পিক গেমস। আমি খেলার সুযোগ পেলে যাতে ভালো পারফরম্যান্স করতে পারি, সেজন্যই নিয়মিত অনুশীলন করে যাচ্ছি। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির কাছ থেকে ভালো সংবাদ আসবে বলেই আশায় আছি। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পেলে আমি যেন সবার মুখ উজ্জ্বল করতে পারি।

জাগো নিউজ: ধন্যবাদ।
সেলিম হোসেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরআই/এমএমআর/জেআইএম