ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম প্রকল্প

মনোরম পরিবেশ আর সবুজ মাঠে খেলার আনন্দ ছেলে-মেয়েদের

রফিকুল ইসলাম | প্রকাশিত: ০৭:৫২ পিএম, ০৩ মার্চ ২০২৪

তরুণদের মাদকের পথ থেকে ফিরিয়ে খেলার মাঠে আনার চিন্তা থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি উপজেলায় উম্মুক্ত মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সরকার প্রধানের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ‘উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প তৈরি করে তা ৪ ধাপে বাস্তবায়ন করছে। এরই মধ্যে প্রথম ধাপের ১২৫ টি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ শেষ হয়েছে। চলছে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের কাজ। দ্বিতীয় ধাপের ২৫ স্টেডিয়াম এরই মধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে।

শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম প্রকল্প বাস্তবায়নের সরকারী চিত্রের সঙ্গে অনেকাংশেই মিল নেই বাস্তবতার। কোথাও মাঠ তৈরি করা হয়েছে; কিন্তু সেই মাঠ খেলার উপযোগী নয়, কোথাও নেই রক্ষণাবেক্ষণ। কোথাও মাঠ দখলে রয়েছে রাখালদের, খেলার কোনো বালাই নেই সেখানে। মিনি স্টেডিয়ামের জন্য যে সব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, সে সবের অবস্থাও শোচনীয়।

জাগোনিউজের পক্ষ থেকে খোঁজ নেয়া হয়েছে সারা দেশে বাস্তবায়নরত এই মিনি স্টেডিয়াম প্রকল্পের। ধারাবাহিকভাবে সেগুলোই তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় চতুর্থ পর্ব পড়ুন এখান থেকে। আজ প্রকাশিত হলো পঞ্চম পর্ব।

ভারতের শিলং মালভূমির গারো পাহাড় থেকে উৎপত্তি হওয়া ভোগাই নদী প্রবাহিত বাংলাদেশের শেরপুর জেলার ললিতাবাড়ী দিয়ে। এই নদীর পাশ ঘিরেই ললিতাবাড়ীতে নির্মাণ করা হয়েছে এই উপজেলার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। চারিদিকে সবুজে ঘেরা, উঁচু পাহাড়। সবমিলিয়ে মনোরম এক পরিবেশ এই স্টেডিয়াম এলাকায়।

যে মাঠে স্টেডিয়ামটি তৈরি হয়েছে সেই জায়গা ছিল স্থানীয় এক রাজনীতিবিদের। ভোগাই নদীর ৩০০ ফুটের মতো দুরে রাস্তা সংলগ্ন ৩ একরের মতো এই জায়গটা মাঠের জন্য লিখিতভাবে দান করে দিয়েছেন ওই ব্যক্তি। ললিতাবাড়ী উপজেলার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণে তার অবদান স্মরণ করবেন স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠকরা।

ললিতাবাড়ী উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ বকুল এই স্টেডিয়ামের কথা বলতে গিয়ে বারবার জমি দান করা ব্যক্তির কথাই উল্লেখ করছিলেন। পাশে নদী, সবুজে ঘেরা এলাকা, আছে একটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়।

উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বললেন, ‘জায়গাটা একটু নিচু। তবে অতি সুন্দর। মাঠ ভালো। ঘাস সবুজ। খেলার জন্য একটা আদর্শ মাঠ। বড় বড় স্থানীয় টুর্নামেন্ট হয়। তবে স্থানীয় ছেলে-মেয়েরা বেশিরভাগ খেলে বিকাল বেলাতে। দিনদিন এখানে খেলাধুলা করতে আসা বাচ্চাদের সংখ্যা বাড়ছে।’

প্রথম ধাপের স্টেডিয়াম। তাই অন্যগুলোর মতো এ স্টেডিয়ামেও একতলা বিল্ডিং। ‘অফিসকক্ষ আছে। ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা দুটি ড্রেসিংরুম আছে। আলাদা টয়লেটও আছে। অফিস কক্ষে ফ্যান ও প্লাস্টিকের চেয়ার দেওয়া হয়েছে। তবে আরসিসি বেঞ্চ আছে ৬-৭টার মতো। এই স্টেডিয়ামের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে প্রচুর খেলাধুলা হওয়ার কারণে। তবে সমস্যা একটাই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা কোনো ফান্ড নেই’-বলছিলেন উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক।

রাতে যাতে অপরাধীরা স্টেডিয়ামের কোনো ক্ষতি করতে না পারে কিংবা বাজে আড্ডা দিতে না পারে সে জন্য আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘স্থানীয় এমপি মহোদয় এখানে সোলারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তাই রাতে আলো থাকে। এমনকি রাতে এখানে অনেকে ফুটবলও খেলে। যে কারণে খারাপ মানুষরা এখানে অবস্থান করতে পারে না’-বলছিলেন ফারুক আহমেদ বকুল।

প্রথম ধাপে স্টেডিয়াম পেয়ে এখন মন খারাপ

চট্টগ্রাম বিভাগের ১০৪ টির মধ্যে প্রথম ধাপে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে পেয়েছে ১৬টি উপজেলা। প্রথম ধাপে স্টেডিয়াম বরাদ্দ পাওয়ায় উপজেলার ক্রীড়া সংগঠকরা বেজায় খুশি হলেও মন খারাপের মানুষও আছে।

এই যেমন কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবসার বললেন, ‘প্রথম ধাপে স্টেডিয়াম পেয়ে তো ধরা খেয়ে গেছি।’

কেন? হেসে জবাব দিলেন তৃণমূল পর্যায়ের এই ক্রীড়া সংগঠক, ‘আমরা আগে স্টেডিয়াম পেয়েছিল ১ম তলা ভবনসহ। দ্বিতীয় পর্যায়ে স্টেডিয়াম হচ্ছে তিনতলা ভবনসহ। এখন ভেবে দেখলাম পরে পাওয়াই ভালো ছিল।’

তারপরও নিজের উপজেলায় স্থায়ী এই ক্রীড়া সংস্থপনা হওয়াতে সফলতাই খুঁজে পাচ্ছেন তিনি। কারণ, এখানে ফুটবল-ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলা সারাদিন হয়। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ে অনেক টুর্নামেন্ট হয় এই মাঠে।

‘আমাদের এই উপজেলায় ফুটবলের চর্চা দীর্ঘদিনের। এক সময় এখানে খোলা মাঠ ছিল। এখানে খেলা জিকো, ইব্রাহিমরা জাতীয় দলের তারকা হয়েছেন। এখানে সকাল-বিকেল ফুটবলের প্র্যাকটিস হয়। এছাড়া যার যখন খুশি এসে খেলাধুলা করে চলে যায়। আমি বলবো, যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়েছে তা সফল।’

অন্যসব স্টেডিয়ামগুলোর মতো এখানেও সেই রক্ষণাবেক্ষণ সমস্যা। ‘ভেন্যুর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েই আমাদের যতো চিন্তা। কোনো বরাদ্দ নেই। নিজেরা এভাবে কতদিন চালাতে পারবো সেটাই প্রশ্ন। সার্বক্ষণিক একজন কেয়ারটেকার আছে। ৫-৬ হাজার টাকার মতো লাগে মাসে। সেটা ইউএনও ব্যবস্থা করেন’- বলছিলেন চকরিয়া উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক।

এক তলা বিল্ডিংয়ে কি সুযোগ সুবিধা আছে? জাবাবে নুরুল আবসার বলেন, ‘কোনো ড্রেসিংরুম নেই। দুইটা রুম আছে যার একটি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। একটি রেফারিরা বসেন। ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা দুটি টয়লেট আছে। বিল্ডিংয়ের সামনে আরসিসি বেঞ্চ আছে।’

রাতে যাতে কেউ বাজে আড্ডা দিতে না পারে সে জন্য আলোর ব্যবস্থা করেছে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা। ‘আমরা বাল্বের ব্যবস্থা করেছি। রাতে জ্বালিয়ে রাখি, যাতে খারাপ মানুষরা এখানে বসে আড্ডা দিতে না পারে’-বলেন উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক।

আরআই/আইএইচএস/