৭৫ রানের লজ্জাজনক পরাজয় বাংলাদেশের
আরও একটি জয়ের সম্ভাবনা নিজেদের হাতেই শেষ করে দিলো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ১৪৬ রানের সহজ লক্ষ্য; কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বোলারদের সাঁড়াসি আক্রমণের মুখে মাত্র ৭০ রানেই অলআউট হয়ে গেলো বাংলাদেশ। ফলে ৭৫ রানের লজ্জাজনক পরাজয়ই বরণ করতে হলো টাইগারদের। বিশ্বকাপের সুপার টেনের সবগুলো ম্যাচে পরাজয় নিয়েই দেশে ফিরে আসতে হচ্ছে মাশরাফি বিন মর্তুজাদের। একই সঙ্গে সবগুলো ম্যাচ জিতেই সেমিফাইনাল খেলতে নামবে নিউজিল্যান্ড।
বোলারদের নৈপুন্যে ১৪৫ রানের মধ্যে কিউইদের বেধে রাখা গিয়েছিল। বোলাররা তাদের কাজ শেষ করেছে। এরপর ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ব এই ম্যাচে জয় উপহার দেয়ার। কিন্তু ১৪৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে একি উপহার দিলেন ব্যাটসম্যানরা? নিউজিল্যান্ডের বোলাররা যতটা না নিজেদের কৃতিত্বে উইকেট পেয়েছে, ততটা নিজেদের বোকামিতে উইকেট বিলিয়ে এসেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ১৪৬ রানই হয়ে দাঁড়াল বাংলাদেশের সামনে বিশাল স্কোর।
৪ রানে শুরু উইকেট পড়া, এরপর ২৯ রানে দ্বিতীয়, ৩৩ রানে তৃতীয় এবং ৩৮ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে টাইগাররা। এরপর ৪৩ রানে ৫ম এবং ৪৪ রানে পড়লো ৬ষ্ঠ উইকেট। এরপর ৪৮ রানের মাথায় পড়লো ৭ম উইকেট, ৫৯ রানে ৮ম, ৬৫ রানে নবম এবং ৭০ রানে পড়লো দশম উইকেট।
দুর্ভাগ্যের শুরুটা হলো তামিম ইকবালের রানআউট দিয়ে। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলেই মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে দ্রুত রান তুলতে গিয়ে কলিন মুনরোর সরাসরি থ্রোতে রানআউট হয়ে গেলেন তামিম। ৬ষ্ঠ ওভারে এসে ম্যাকক্লেনঘানের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে গেলেন মোহাম্মদ মিঠুন। ১৭ বল খেলে তিনি রান করলেন ১১টি।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সব সময়ই দারুণ ব্যাট করেন সাকিব। আশা ছিল তাকে নিয়ে। কিন্তু মাত্র ২ রান করে তিনিও আউট হয়ে গেলেন। মিচেল সান্তনারের স্লো বলে ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে নাথান ম্যাককালামের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাকিব। ৩৩ রানে পড়ে তৃতীয় উইকেট। ৩৮ রানের মাথায় সাব্বির রহমান আউট হয়ে যান।
ম্যাককুলামের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে তিনি ক্যাচ তোলেন মিচেল সান্তনারের হাতে। এরপর মাঠে নামেন সৌম্য সরকার; কিন্তু ৮ বলে ৬ রান করে আউট হয়ে গেলেন সৌম্য সরকারও। চার উইকেট পড়ে যাওয়ার পর তার উচিৎ ছিল একটু দেখে-শুনে খেলা। কিন্তু ক্রিজ ছেড়ে দিয়ে এসে শট খেলতে গেলেন তিনি। ফলটাও পেয়ে গেলেন হাতে-নাতে। স্ট্যাম্পিং হয়ে গেলেন সৌম্য।
এবার জুটি বাধেন বাংলাদেশের অন্যতম ভরসার প্রতীক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং মুশফিকুর রহিম। আগের ম্যাচে তারা দু’জন যে ভুল করেছিলেন, আজ সুযোগ ছিল তাদের সেই ভুলের দায় মোচন করা। কিন্তু ২ বল খেলে কোন রান না করেই বোল্ড হয়ে গেলেন মুশফিক! ৪৪ রানে পড়লো ৬ষ্ঠ উইকেট।
মাঠে নামেন শুভাগত হোম। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে জুটি বাধেন তিনি। বাংলাদেশের শেষ আশা-ভরসা এই জুটি নিয়ে; কিন্তু মাহমুদুল্লাহও পারলেন না কিউইদের সয়লাব থামাতে। ইশ সোধির বলে বোল্ড হয়ে গেলেন মাহমুদুল্লাহ। ৮ বলে ৫ রান করলেন তিনি। মাঝে অবশ্য ফ্ল্যাড লাইট বিভ্রাটের কারণে ১২ মিনিট খেলা বন্ধ ছিল।
৮ম ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ৫ বল টিকেছিলেন। রান করলেন তিন। গ্র্যান্ড ইলিয়টের স্লো বলে বিভ্রান্ত হয়ে হলেন এলবিডব্লিউ। মাশরাফি আউট হওয়ার পর মাঠে নামেন মুস্তাফিজ। নেমেই ইলিয়টকে মেরে দিলেন ছক্কা। বাংলাদেশের পুরো ইনিংসে এই একটি মাত্র ছক্কাই এলো। শেষ পর্যন্ত ৩ বল খেলে আউট হয়ে গেলেন মুস্তাফিজ। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ইস সোধির বলে বোল্ড হয়ে গেলেন আল আমিন হোসেন। ইনিংসের সর্বোচ্চ ১৬ রান নিয়ে অপরাজিত থাকলেন শুভাগত হোম।
কিউই বোলারদের মধ্যে ইলিয়ট এবং ইস সোধি নেন ৩টি করে উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন নাথান ম্যাককুলাম, মিচেল সান্তনার এবং মিচেল ম্যাকক্লেনঘান।
আইএইচএস/এমএস