ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

হাংজু এশিয়ান গেমস

২৭০ জনের বাংলাদেশ দলের অর্জন মাত্র দুই টুকরো তামা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ১১:০০ এএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৩

সরকারি অর্থ ধ্বংস করে শেষ হলো আরেকটি ভ্রমণ উৎসব। চীনের হাংজুতে গতকাল (রোববার) শেষ হলো ১৯তম এশিয়ান গেমস। ১৭ ডিসিপ্লিনে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। ২৭০ জনের চীন ভ্রমণে অর্জন মাত্র দুটি বোঞ্জ পদক। দুটিই ক্রিকেট থেকে। বাকি ১৬ ডিসিপ্লনে শূন্য হাত।

‘এবার আমাদের সম্ভাবনা আছে’- প্রতি গেমসের আগে সরকারের সামনে এই মুলো ঝুলিয়ে দল বড় করে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ)। বড় বাজেট পাশ করিয়ে সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণ করেন একপাল কর্মকর্তা। কোনো জবাবদীহিতা নেই। ক্রীড়া প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কিছু মানুষকে দলের সঙ্গে নিয়ে বাজেট হালাল করার সংস্কৃতিও চলছে দীর্ঘদিন ধরে।

ডলার সংকটের এই সময়ে দুটি তামার টুকরো আনতে কত ব্যয় হলো সরকারের? সে হিসেব হয়তো চাপাই পড়ে থাকবে, যেমন চাপা পড়েছে অতীতেও। রোববার বাংলাদেশের সর্বশেষ ইভেন্ট ছিল কারাতের। যে কারাতের কর্মকর্তারা নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে ক্রীড়াবিদ নিয়ে গেমসের ভেন্যুতেই  যেতে পারেননি সময় মতো। খেলোয়াড় গিয়েও খেলতে পারেননি- এশিয়ান গেমসে এই জঘন্য নজির করেছে কেবল বাংলাদেশেরই।

asian games cricket

শেষদিন কারাতের নারীদের ৫০ কেজি কুমিতে অংশ নেন বাংলাদেশের সাইমা জামান। মালয়েশিয়ায় শাহমালারানি চন্দ্রনের কাছে হেরে যান ৩-২ পয়েন্টে। রাউন্ড অব থার্টি টু থেকে বিদায় নেন তিনি। সাইমার এই বিদায় দিয়ে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের ২৭০ জনের কান্টিনজেন্টের ব্যর্থ এক মিশন। ক্রিকেটের নারী ও পুরুষ দল ব্রোঞ্জ না পেলে পদকশূন্যই ফিরতে হতো লাল-সবুজের দেশকে।

এশিয়ান গেমসের মতো বড় আসরে অপ্রয়োজনীয় টিম ইভেন্টে দল পাঠানোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার সময়ও এসেছে। ক্রিকেট ছাড়া বাকি দলগত ইভেন্ট যেমন কাবাডি, হকি ও ফুটবল প্রত্যাশানুযায়ী পারফরম্যান্স করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশাল দল পাঠিয়ে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে শ্যুটিং ও আরচারি।

কয়েক বছর ধরে ইমরানুর রহমান... ইমরানুর রহমান... বলে কর্মকর্তারা জিগির তুললেও এশিয়ার গেমসের ফাইনালে উঠতে পারেননি তিনি। পারেননি নিজের সেরা টাইমিং করতেও। তারপরও ইমরান দেশের দ্রুততম মানব হিসেবে আগামী এসএ গেমসে পদক জয়ের আশা নিয়ে অংশ নেবেনে। 

গেমসে তাকে পাঠানোর যৌক্তিকতা থাকলেও বক্সার জিন্নাত ফেরদৌসকে কোনো প্রকার ট্রায়াল ছাড়াই আমেরিকা থেকে উড়িয়ে নিয়ে খেলোনো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি একটি রাউন্ডও টপকাতে পারেননি। তার চেয়ে অনেক ভালো পারফরম্যান্স করেছেন সেলিম হোসেন। তিনি অন্তত পদকের কাছাকাছি গিয়েছিলেন।

জিন্নাতকে ব্যক্তিগত স্বার্থে কে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে চাপিয়ে এশিয়ান গেমস খেলিয়ে দিয়েছেন? তার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলেও অনেকে মনে করছেন। অতীতেও এমন প্রবাসী এনে দেশকে লজ্জায় ডোবানো হয়েছে।

asian games cricket

ভারোত্তোলন, কারাতে, জিমন্যাস্টিক্স, তায়কোয়ানদো, ফেন্সিং, গলফ, ব্রিজ- এই ইভেন্টগুলোতেও বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা হতাশ করেছেন। এশিয়ান গেমসে পদক জয়তো দুরের কথা এইসব ডিসিপ্লিনে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা ন্যুনতম লেভেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার মতো সামর্থ্যও দেখাতে পারেননি।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব পরিমল সিংহ মনে করেন, ‘ক্রিকেট থেকে দুটি পদক এসেছে। কাবাডি ও আরচারি নিয়েও আমাদের প্রত্যাশা ছিল। হয়নি কোনো কারণে। তারপরও গেমসে তো আমাদের অংশ নিতেই হবে। যদি পদকের বিচার করি তাহলে এক বিষয়। আর যদি অভিজ্ঞতা অর্জনের কথা বলি তাহলে অন্য বিষয়। আমাদের খেলোয়াড়রা পদক জিততে না পারলেও বড় বড় প্রতিদ্বন্দ্বির বিপক্ষে খেলে অভিজ্ঞতা বাড়িয়েছেন। এ অভিজ্ঞতা এসএ গেমসে কাজে লাগবে। আমাদের ক্রীড়াবিদরা কোন অবস্থানে আছেন সেটা তারা বুঝতে পারলেন এই গেমসে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে।’

asian games

ডিসিপ্লিন ও খেলোয়াড় নির্বাচন প্রসঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব বলেছেন, ‘আসলে এ বিষটা অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন দেখেছে। তারাই হয়তো বলতে পারবে কিভাবে তারা নির্বাচন করেছে। আরেকটা বিষয় হলো- আমরা ক্রিকেট ছাড়া অন্য কোনো ইভেন্টে প্রথম তিনের মধ্যে থাকতে পারিনি সেটা তো পরিস্কার। তবে কোন ডিসিপ্লিনে কোন ক্রীড়াবিদের অবস্থান কি ছিল সেই তথ্যটা পুরোপুরি পাওয়া গেলে বোঝা যাবে আসলেই পারফরম্যান্স কেমন ছিল। এই গেমস নিয়ে আমাদের বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করতে হবে। আমাদের মন্ত্রী মহোদয়ও বিষয়টি নিয়ে অবগত আছেন। আমরা অবশ্যই পারফম্যান্স বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করবো। তা নাহলে আমরা কেন পারছি না- সে বিষয়টা অজানাই থেকে যাবে।’

প্রবাসী ক্রীড়াবিদ আনা প্রসঙ্গে পরিমল সিংহ বলেন, ‘এটাও অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন বলতে পারবে। তারা হয়তো মনে করেছিল, প্রবাসী এনে ভালো একটা রেজাল্ট পাবে। তবে আমি এটা বলবো স্থানীয় খেলোয়াড়দের বেশি প্রমোট করা দরকার।’

আরআই/আইএইচএস