‘বক্সিং খেলে কী হবে? এ প্রশ্নই আমার জিদ বাড়িয়ে দিয়েছিল’
দেশের অন্যতম সেরা পেশাদার বক্সার সুর কৃষ্ণ চাকমা। ২৯ বছর বয়সী রাঙ্গামাটির এ যুবক এরই মধ্যে পাঁচটি প্রফেশনাল মিটে অংশ নিয়েছেন, যার চারটিই ছিল আন্তর্জাতিক, একটি ঘরোয়া। দুইবার অংশ নিয়েছেন ভারতের প্রতিযোগিতায়।
আজ (শনিবার) ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ প্রো-বক্সিংয়ের লড়াইয়ে নামছেন সুর কৃষ্ণ চাকমা। রাতে রাজধানীর ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেল এই প্রো-বক্সিংয়ে অংশ নেবেন। প্রো-বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ ২.০ ফাইট নাইট নামের এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ, রাশিয়া, ভারত, ফ্রান্স, তুরস্ক ও নেপালের ১৬ জন অংশ নেবেন।
এ প্রতিযোগিতার মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হতে পারে বাংলাদেশের সুর কৃষ্ণ চাকমা ও নেপালের মহেন্দ্র বাহাদুর চাঁদের লড়াই। সন্ধ্যা ৭ টায় প্রতিযোগিতা শুরু হলেও সুরকৃষ্ণ চাকমা ও মহেন্দ্র বাহাদুর চাঁদের লড়াই শুরু হবে রাত ১০ টায়।
সুর কৃষ্ণ নিজেও দারুণ এক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াইয়ের জন্য মুখিয়ে আছেন। দেশে ফুটবল, ক্রিকেট ও হকির মতো জনপ্রিয় খেলার বাইরে বক্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়া কতটা চ্যালেঞ্জিং এবং কিভাবে এই পেশায় আসলেন, তা নিয়ে জাগো নিউজকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসসি) সাবেক এ শিক্ষার্থী।
জাগো নিউজ: রাতে আরেকটি ফাইটে নামছেন। শক্তিশালী প্রতিপক্ষ নেপালের মহেন্দ্র বাহাদুর চাঁদ। কেমন প্রস্তুতি আপনার? কতটা আশাবাদী প্রতিযোগিতা নিয়ে?
সুর কৃষ্ণ চাকমা: এই প্রতিযোগিতার জন্য আমার প্রস্তুতি অনেক ভালো। আমি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই খেলবো এবং চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে দারুণ আশাবাদী।
জাগো নিউজ: পেশাদার বক্সারদের তো ব্যক্তিগত কোচ থাকে। আপনার আছে? এ প্রতিযোগিতার জন্য কার কাছে ট্রেনিং করেছেন?
সুর কৃষ্ণ চাকমা: আমার ব্যক্তিগত কোচ নেই। তবে এই প্রতিযোগিতার জন্য আমি থাইল্যান্ডে ট্রেনিং করেছি। কারনেভ নামের এক রাশিয়ান ট্রেনারের কাছে আমি সেখানে ১৮ দিন ট্রেনিং করে ২৩ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছি। ট্রেনারের ব্যবস্থা করেছিল এই ফাইট নাইটের আয়োজক এক্সসেল। তারাই রুশ ট্রেনারের পারিশ্রমিক দিয়েছে।
জাগো নিউজ: আপনি এর আগে যে পাঁচটি প্রো-বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছেন সেখানে সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল কোনটি?
সুর কৃষ্ণ চাকমা: আসলে সবগুলো ফাইটই কঠিন ছিল। এর মধ্যে যদি উল্লেখ করি তাহলে বলবো গত বছর মিরপুরে এই মহেন্দ্র বাহাদুর চাঁদের বিপক্ষে লড়াইটার কথা। কঠিন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইট হয়েছিল। খুব ক্লোজ ছিল।
জাগো নিউজ: পেশাদার বক্সিং করে আর্থিকভাবে কতটা সুবিধা পাচ্ছেন? এক একটা ফাইট জিতলে কেমন প্রাইজমানি পান?
সুর কৃষ্ণ চাকমা: আসলে এর কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। একেকটার একম রকম প্রাইজমানি। চার রাউন্ডের খেলা হলে পুরস্কারটা নির্ধারিত থাকে। গত বছর থাইল্যান্ডের প্রতিযোগির বিরুদ্ধে সর্বশেষ ফাইট জিতে আমি দেড় লাখ টাকা পেয়েছিলাম। আজকের ফাইট ৮ রাউন্ডের। জিতলে দুই লাখ টাকার মতো পাবো।
জাগো নিউজ: আপনার পরিবার নিয়ে যদি কিছু বলেন। অন্য কেউ কি খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত?
সুর কৃষ্ণ চাকমা: আমার বাবা ফুটবলার ছিলেন। মারা গেছেন ২০০৪ সালে। আমরা ৩ ভাই। আমি সবার বড়। ছোট ভাই দেব চাকমা টেবিল টেনিস জাতীয় দলে খেলেছেন।
জাগো নিউজ: বাবা ফুটবলার ছিলেন। আপনি বক্সিংয়ে কিভাবে এলেন?
সুর কৃষ্ণ চাকমা: আমিও ফুটবলার হতে চেয়েছিলাম। সেই স্বপ্ন নিয়ে আমি বিকেএসপিতে ভর্তির জন্য ট্রায়াল দিয়েছিলাম। ফুটবলে না টিকে আমি বক্সিংয়ে ট্রায়াল দেই। কারণ, বক্সিংয়ের প্রতিও আমার ছোটবেলা থেকে একটা টান ছিল। ট্রায়ালে টিকে বক্সিংয়ে ভর্তি হয়ে যাই।
জাগো নিউজ: বক্সিং আমাদের দেশে সেভাবে প্রচলিত না, জনপ্রিয়ও না। কিন্তু আপনি পেশা হিসেবে নিলেন। এই খেলায় কি ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব?
সুর কৃষ্ণ চাকমা: আসলে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অনেকেই বক্সিংকে পেশা হিসেবে নিতে চান না। তবে আমি বলবো বক্সিং পেশা হিসেবে নেওয়ার মতো একটা খেলা। আমি ২০০৭ সাল থেকে বিকেএসপিতে বক্সিং করি। শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাস ছিল কিছু করতে পারবো। নিজের যোগ্যতা নিয়ে ভালোভাবে বক্সিং করতে পারলে আমি মনে করি এটাও একটা জনপ্রিয় খেলা।
জাগো নিউজ: দেশের তরুণরা সাধারণত ফুটবল, ক্রিকেট, হকিসহ অন্যান্য জনপ্রিয় খেলাগুলোয় ক্যারিয়ার গড়তে চায়। বক্সিংয়ে তো একটা চ্যালেঞ্জ থেকেই যায় তাই না?
সুর কৃষ্ণ চাকমা: অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। আমিও চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। শুরুর দিকে অনেককে বলতে শুনেছি বক্সিং খেলে কী হবে? এ কথাটা আমার জিদ বাড়িয়ে দিয়েছিল। চেষ্টা করেছি আত্মবিশ্বাস নিয়ে। অভিভাবক যারা সন্তানকে বক্সিংয়ে দিতে চান না, তরুণরা যারা বক্সিং করতে চায় না তাদের জন্য আমি উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাই। আগামীতে কেউ যেন না বলে ‘বক্সিং খেলে কি হবে? এ খেলা খেলে কি করবা?’ ওই কথাগুলো শুনে আমার খারাপ লাগতো। তাই চ্যালেঞ্জ হিসেবেই বক্সিং বেছে নিয়েছি।
জাগো নিউজ: বিকেএসপি অধ্যায় শেষ করে এখন কোথায় পড়াশুনা করছেন?
সুর কৃষ্ণ চাকমা: আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাসে অনার্স শেষ করে এখন মাস্টার্স করছি। কিছুদিন বাংলাদেশ আনসারে চাকরি করে ছেড়ে দিয়েছি। পেশাদার বক্সিংয়ের জন্যই চাকরি ছেড়েছি।
জাগো নিউজ: যখন অ্যামেচার খেলেছেন, তখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আপনার কি সাফল্য আছে?
সুর কৃষ্ণ চাকমা: আমি ২০১৪ ও ২০২২ সালে কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নিয়েছিলাম। ২০১৯ এসএ গেমসে অংশ নিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছিলাম। বাংলাদেশ আনসারের হয়ে ২০১৩ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছি। সর্বশেষ ২০২১ সালে আমি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ জিতেছি। এ ছাড়া বাংলাদেশ গেমসে দুটি স্বর্ণ আছে।
জাগো নিউজ: ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি। আপনি বিয়ে করেছেন?
সুর কৃষ্ণ চাকমা: আমি গত বছর আমার এলাকা রাঙ্গামাটিতেই বিয়ে করেছি।
জাগো নিউজ: ধন্যবাদ।
সুর কৃষ্ণ চাকমা: আপনাকেও ধন্যবাদ।
আরআই/এমএমআর/এমএস