ইতিহাস বদলানোর মহারণে মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান
খাদ্য, বস্ত্র, অন্ন, বাসস্থান ও চিকিৎসা এই পাঁচটি মানুষের মৌলিক চাহিদা; কিন্তু উপমহাদেশে এই পাঁচটির সঙ্গে যুক্ত হয় আরও একটি বিষয়। ক্রিকেট। নিজ নিজ দেশের ক্রিকেট খেলা হলেই সব কিছু বাদ দিয়ে ক্রিকেট নিয়েই মেতে থাকেন উপমহাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা। আর যদি হয় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মুখোমুখি লড়াই, তাহলে তো কথাই নেই। উপমহাদেশ ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে উত্তেজনার বারুদ। তার ওপর রাজনৈতিক বৈরী সম্পর্কের উত্তাপ তো আছেই। যে কারণে আবার দুই দেশের মাঝে সফর বিনিময় বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েক বছর। যদিও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুবাধে মুখোমুখি হচ্ছে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত এবং পাকিস্তান। আগামীকাল (শনিবার) কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ইতিহাস বদলানোর লক্ষ্যে মুখোমুখি হবে দল দুটি।
ইডেনের মাঠে চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত চারটি ম্যাচ খেলেছে পাকিস্তান। আর চারটিতেই জয় পেয়েছে তারা। অথচ বর্তশান সময়ে মুখোমুখি লড়াইয়ে ভারতের ধারে কাছেও নেই পাকিস্তান। টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত সাতবার মুখোমুখি হয়েছে এ দু’দল। এর মাঝে পাঁচবার পরিস্কার ব্যবধানে জয়ে পেয়েছে ভারত। হেরেছে মাত্র একটি ম্যাচ। অপর একটি টাই। আর বিশ্বকাপে (ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি) ১০বারের মোকাবেলায় নয়টিতেই জয় ভারতের। একটি ম্যাচ টাই হলেও টাইব্রেকারে (বোলআউট) জয় পায় ভারতই। তাই এ ম্যাচটি পরিণত হয়েছে ইতিহাস বদলানোর লড়াইয়ে। শেষ পর্যন্ত কে জিতবে? কারা জন্ম দিবে নতুন ইতিহাস? মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন ক্রিকেট ভক্তদের। আপাতত অপেক্ষা শনিবার লড়াই শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
এশিয়া কাপের আগে সর্বশেষ ছয় ম্যাচের পাঁচটিতেই হেরেছে পাকিস্তান। এশিয়াকাপেও চার ম্যাচের মাত্র দু’টিতে জয়। তবে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে পাকিস্তান দল। বোলিং তাদের বরাবরই শক্তিশালী। ম্যাচের ভাগ্য দলের পেসাররাই বদলে দিতে পারেন। সাম্প্রতিক দারুণ ফর্মেও রয়েছেন মোহাম্মদ ইরফান, মোহাম্মদ আমির, মোহাম্মদ সামি ও ওয়াহাব রিয়াজরা। ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল; কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষেই তা ঘুচিয়েছেন শেহজাদ-হাফিজরা। অধিনায়ক শহিদ আফ্রিদির ফর্মে ফেরা তাদের জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণার। সাম্প্রতিক সময়ে নানা বিতর্কে জড়ানো এ অলরাউন্ডার ব্যাটিংয়ে ১৯ বলে ৪৯ রান করার পাশাপাশি বোলিংয়েও নিয়েছিলেন ২টি উইকেট।
কোনো সংস্করণের বিশ্বকাপের কোন ম্যাচে না জিতলেও ম্যাচটি ইডেনে বলে একটু বেশি আত্মবিশ্বাসী পাকিস্তান। আত্মবিশ্বাসী পাকিস্তানের কোচ ওয়াকার ইউনুস বলেন, ‘আগামীকালের ম্যাচে ভারতই পিছিয়ে থাকবে। কারণ তারা প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছে। ফলে তাদের কাছে কালকের ম্যাচ বাঁচা-মরার লড়াই। বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে তাদের সামনে। এটা বাড়তি একটা চাপ তৈরী করেছে তাদের ওপর। অন্যদিকে গত ম্যাচটা জিতেছি আমরা। ব্যাটসম্যানরাও রান পেয়েছে। তাই আমাদের দলের খেলোয়াড়রা বেশ আত্মবিশ্বাসী।’
অপরদিকে সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ভারত হঠাৎ করেই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ছন্দ হারিয়ে ফেলে। এশিয়া কাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দলটি। এর আগে সর্বশেষ ছয় ম্যাচের পাঁচটিতেই জয় পেয়েছিল তারা। এরমধ্যে ছিল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে গিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে তাদেরকেই হোয়াইটওয়াশ করার সুখস্মৃতি। তাই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ম্যাচকে দুঃস্বপ্ন ভেবে নতুন করেই মাঠে নামবে তারা। বিশ্বের সেরা ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে গড়া ভারতের যে কেউ ম্যাচের মোড় ঘুড়িয়ে দিতে পারেন।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে ব্যাকফুটে থাকলেও ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে দারুণ আত্মবিশ্বাসী দলের অন্যতম সেরা স্পিনার রবিচন্দ্রন আশ্বিন। আগের ম্যাচে হারায় চাপে পড়ার পাশাপাশি পাকিস্তানের বিপক্ষে বাড়তি চাপ নিয়ে মাঠে নামলেও এ চাপ নেওয়ার ক্ষমতা ভারতীয় দলের রয়েছে বলেও জানান এ স্পিনার। এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চাপ তো যে কোনও ম্যাচেই থাকে। এতদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পর কেউই আর বাড়তি চাপ অনুভব করে বলে মনে হয় না। তবে আবেগটা তো এই ম্যাচে একটু বেশি থাকেই। এই রকম কঠিন অবস্থা থেকে কোনও দল যদি ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তা হলে সেটা পারব আমরাই।’
তবে এ ম্যাচ আয়োজন নিয়ে নাটক কম হয়নি। বিশ্বকাপের আগে ভারত গিয়ে খেলবে না পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার লিখিত শর্ত পেয়ে ভারত এসেছে তারা। তখন দুই দলের ম্যাচ ছিল ধর্মশালায়। এরপর একের পর এক হুমকি। বাধ্য সেখান থেকে ম্যাচ সরিয়ে আনা হয় কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সেসে। আর ইডেনে আসার পর ভক্তদের মনে প্রশ্ন জাগে ইতিহাস নিয়ে। কারণ পাকিস্তানের জন্য ইডেন পয়া ভেন্যু। এখন দেখার বিষয় ইডেনে জয়ের ধারা ধরে রেখে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয় পাবে পাকিস্তান, নাকি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের ধারা ধরে রেখে ইডেনে জয়ের খরা কাটাতে পারবে ভারত!
আরটি/আইএইচএস/আরএস