বাংলাদেশ কোনো অংশেই পাকিস্তানের চেয়ে পিছিয়ে নেই
২৫ বছর পর ইডেন গার্ডেনে খেলবো। আমরা যারা এখনকার ক্রিকেটার, সবারই একটা স্বপ্ন ছিল ইডেনে খেলার, কারও খেলা হয়নি। আমার নিজেরও অনেক স্বপ্ন ছিল ইডেন গার্ডেনে গিয়ে খেলবো; কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি কখনো। বর্তমান দলে যারা রয়েছে, তারা অনেক সৌভাগ্যবান। আর এমন একটা স্বপ্নময় ম্যাচে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে পাকিস্তানকে।
আশা করবো বাংলা ভাষা-ভাষী সব মানুষই বাংলাদেশকে সমর্থন জানাবে। ইডেন গার্ডেনের গ্যালারি পুরো ভরবে কি-না জানি না। তবে যারাই মাঠে উপস্থিত হবে, তাদের সবাই বাংলাদেশকেই সমর্থন জানাবে আশা করি। বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর দর্শক কলকাতা গেছে এই ম্যাচটি দেখার জন্য। ফলে বাংলাদেশ দল যে বিদেশে গিয়ে কোনো ম্যাচ খেলছে এটা মনেই হবে না ক্রিকেটারদের।
আর বাংলাদেশ দল এশিয়া কাপে যেভাবে খেলেছে কিংবা বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে যেভাবে খেলেছে, সে ভাবে যদি খেলতে পারে, ধারাবাহিকতাটা যদি ধরে রাখতে পারে, তাহলে আশা করি যে, এই ম্যাচেও কোনো সমস্যা হবে না বাংলাদেশের। একটা সময় ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে অন্য দলের পার্থক্যটা হতো সবচেয়ে বেশি- বোলিং দিয়ে। পাকিস্তান সব সময়ই বোলিংয়ে সেরা। তবে, বর্তমান সময়ে এসে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান উভয় দলই বোলিংয়ে সেরা। ওদেরও বোলিং শক্তিশালী, আমাদেরও বোলিং শক্তিশালী। তুলনা করতে গেলে দু’দলেরই বোলিং সমান-সমান।
বোলিং ছাড়া বাকি বিভাগগুলাতে আমরাই বরং এগিয়ে আছি পাকিস্তানের চেয়ে। ওদের ব্যাটিংয়ের চেয়ে আমাদের ব্যাটিংই শক্তিশালী। ওদের ব্যাটসম্যানদের চেয়ে আমাদের ব্যাটসম্যানরা ফর্মে রয়েছে। একটা জায়গায় শুধু তারা এগিয়ে, সেটা হলো- পাওয়ার। বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তান অনেক বেশি পাওয়ার ক্রিকেট খেলে। যেমন ধরেন শহিদ আফ্রিদি। তার ব্যাটে ঠিকমতো বল লাগলেই হলো। নিশ্চিত বাউন্ডারিছাড়া। আর যে দিনটা তার নিজের হয়ে যাবে, তাহলে তো কথাই নেই। ২০ বল খেলবে, রান তুলবে কম করে হলেও ৫০-৬০।
এই একটা জায়গাতেই যা একটু পার্থক্য। এছাড়া ফিল্ডিং বলুন আর ব্যাটিং বলুক- তাদের চেয়ে আমরাই এগিয়ে। তাদের বোলিংয়ের ক্ষেত্রে নতুন বলে আমরা যদি সারভাইভ করতে পারি, মোহাম্মদ আমির, ইরফান কিংবা ওয়াহাব রিয়াজদের প্রথম কয়েকটা ওভার দেখে খেলতে পারি, তাহলে বিপদ কেটে যাবে এবং ভালো করা সম্ভব আমাদের।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে আমিরের প্রথম দিকের কয়েকটি বল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কামব্যাক করার পর আমির প্রতিটি ম্যাচেই যেন নিজেকে নতুন নতুন করে চেনাচ্ছেন। বোঝাচ্ছেন যে, আগামী ৪-৫ বছর পর সে কোনো মানের বোলার হতে পারে। ১০ বছর ক্রিকেট খেললে তো মনে হয়, গ্রেট হয়ে যাবে সে।
তবে শুধু এক আমিরকে নিয়ে চিন্তা করলেই হবে না। পুরো ম্যাচ নিয়েই চিন্তা করতে হবে। জিততে হলে তিনটা ডিপার্টমেন্টেই ভালো খেলতে হবে। আমিরের চার ওভার কোনোমতে কাটিয়ে দিলেই যে ম্যাচ বের হয়ে আসবে তা নয়। পজিটিভ খেলতে হবে। হারানোর কিছু নেই আমাদের। সুতরাং, পজিটিভ খেলে যা অর্জন করা যায়, সেটাই ভালো।
অনেকেই জিজ্ঞাসা করছেন, বাংলাদেশ জিতবে কি-না। তাদেরকে আশার বাণী না শুনিয়ে একটু বাস্তবতা তুলে ধরি। বাংলাদেশ তো আসলে সর্বশেষ ম্যাচ কিংবা সর্বশেষ সিরিজ জিতেছে। টি-টোয়েন্টিতে সর্বশেষ এশিয়া কাপ আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্বছাড়া আমাদের আর কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। এ কারণে এই ফরম্যাটে আসলে নিশ্চিত করে বলা মুশকিল যে বাংলাদেশই জিতবে।
তাছাড়া ইডেনে পাকিস্তানের রেকর্ডও খুব ভালো। তবে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনা করে বলবো, জয়ের সম্ভাবনা ফিফটি-ফিফটি নয়, সিক্সটি-ফরটি। বাংলাদেশের সিক্সটি হলে পাকিস্তানের সম্ভাবনা ফরটি। বাকিটা মাঠে খেলা গড়ালেই বোঝা যাবে।
লেখক: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক
আইএইচএস/বিএ