দুরন্ত তামিমের ব্যাটেই সুপার টেনে বাংলাদেশ
এ যেন এক বিস্ময় বালকের ক্রমশ পরিণত হয়ে ওঠার গল্প। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জহির খানকে ড্যান্সিং ডাউন দ্যা উইকেটে এসে ছক্কা হাঁকানো ১৭ বছর বয়সী সেই কিশোর, আজকের ৬০ বলে সেঞ্চুরি করা এক পরিণত ওপেনিং ব্যাটস্ম্যান। নামটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না, তিনি তামিম ইকবাল। ওমানের বিপক্ষে সুপার টেনের অলিখিত ফাইনালে যিনি করেছেন অপরাজিত ৬৩ বলে ১০৩ রানের এক অনবদ্য ইনিংস। ১৬৩.৪৯ স্ট্রাইক রেটে ১০টি চার ও ৫টি ছক্কায় গড়া তামিমের এই বিধংসী ইনিংসের সুবাদেই নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৮০ রানের চ্যালেঞ্জিং ইনিংস গড়ে বাংলাদেশ।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শুরু থেকেই চাপে পড়ে ওমান। ৭ ওভারে ওমানের রান যখন ২ উইকেটে ৪১, তখনই বৃষ্টির কারণে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। কিছুক্ষণ বিরতির পর খেলা শুরু হলে টার্গেট দাঁড়ায় ১৬ ওভারে ১৫২। কিন্তু ৮.২ ওভারে ওমানের ৪ উইকেটে ৪৫ রানে আবারও ব্যাঘাত ঘটায় বৃষ্টি। অল্প বিরতির পর খেলা আবারও শুরু হলে টার্গেট দাঁড়ায় ১২ ওভারে ১২০। কিন্তু সাকিবের ১৫ রানে ৪ উইকেট শিকারে অবশেষে বাংলাদেশ ম্যাচটি জিতে নেয় ৫৪ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে সদ্য টি২০ তে প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকানোর পাশাপাশি ওয়ানডে, টেস্ট কিংবা টি২০- যেকোনো ফরমেটেই এখন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের নামটি তামিম ইকবাল। তিন ফরমেটেই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের মালিকও তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ছয় এবং চার মারা ব্যাটস্ম্যানটিও তামিম। লর্ডসে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র সেঞ্চুরি করা খেলোয়ারটিও তামিম।
এছাড়াও টানা বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি (চার ইনিংসে) হাফ সেঞ্চুরিও করেছেন তামিম ইকবাল। দীর্ঘ ৯ বছরের দুর্দান্ত ক্যারিয়ারে আজ ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের প্রায় সব বড় রেকর্ডই নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছেন আক্রমণাত্মক এই ওপেনিং ব্যাটস্ম্যান।
২০১৫ সালটা অনেকটাই বদলে দিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। কিন্তু তার ঠিক আগে তামিম ইকবালকে নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। কিন্তু সকল সমালোচনার জবাব তামিম দিয়েছেন ব্যাট হাতেই। তামিম তার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারলে তাকে শুনতে হয় দর্শকদের নানা কটূক্তি। কিন্তু সে তামিমই আজ নিজের মাত্র এক দিনের বাচ্চাকে রেখে দলের প্রয়োজনে যোগ দিয়েছেন স্কোয়াডে। সদ্য ভূমিষ্ঠ প্রথম সন্তানের চেয়েও দেশের হয়ে খেলাটাকে প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, তার প্রায় একক নৈপুণ্যেই বাংলাদেশ সকল প্রতিকূলতা ও আশঙ্কাকে ছাপিয়ে উঠে গেছে সুপার টেনে।
সুপার টেনে বাংলাদেশ পরবর্তীতে খেলতে যাচ্ছে পাকিস্তান, ভারত, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে। এশিয়া কাপ থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের উদ্দীপ্ত পারফরম্যান্স শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষেও ভালো খেলার ইঙ্গিত বহন করছে। সেখানেও কি এক বিধ্বংসী, পরিণত ও অকুতোভয় তামিমের দেখা মিলতে যাচ্ছে? তামিমের সেই দুরন্ত ব্যাটের দিকেই আজ তাকিয়ে বাংলাদেশের অগণিত ক্রিকেট ভক্ত।
লেখক পরিচিতি: কম্পিউটার প্রকৌশলী