নিশ্চিত জয় পেত বাংলাদেশ
কার্টেল ওভারের ম্যাচ হলেও বাংলাদেশ যেভাবে খেলতে শুরু করেছিল, তাতে জয়টা যেন হাতের মুঠোতেই দেখতে পাচ্ছিলাম। বৃষ্টি আবার না আসলে নিশ্চিত জিততে পারতাম আমরা। বরং, বৃষ্টির কারণে ম্যাচটা পরিত্যক্ত হওয়ায় আমরা একটা নিশ্চিত জয় বঞ্চিত হলাম। টি-টোয়েন্টিতে যে বাংলাদেশ একটি পরিবর্তিত শক্তিরূপে আবির্ভূত হচ্ছিল, জিততে পারলে তাতে আরেকটা মাত্রা যোগ হতে পারতো; কিন্তু প্রকৃতি সেটা আর হতে দিল না। জয়টাকে ভাগাভাগি করে নিতে হলো।
এতে অবশ্য আমাদের ক্ষতির চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আয়ারল্যান্ডের। দলটি ভালো। মূল পর্বে হয়তো খেলতে পারতো না; কিন্তু লড়াই তো জমিয়ে দিতে পারতো। অথচ প্রথম ম্যাচে অঘটনের শিকার হয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে পড়ে গেলো ভাগ্যের ফেরে। নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগই পেল না।
যদিও তামিম-সৌম্যরা যেভাবে ব্যাটিং শুরু করেছিল, তাতে বাংলাদেশ শক্তিশালি একটা স্কোরই দাঁড় করিয়ে দিতে পারতো আয়ারল্যান্ডের সামনে। সেই স্কোর তাদের পক্ষে পার হওয়া ছিল সবচেয়ে কঠিন। কারণ, আমি প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম, বাংলাদেশের বোলিং অ্যাটাক অনেক শক্তিশালি। এই অ্যাটাককে চ্যালেঞ্জ করে ১২ ওভারে শতাধিক রান করা আইরিশদের পক্ষে অন্তত সম্ভব হতো না।
যে সামান্য খেলা হয়েছে, তাতেই তামিম অসাধারণ ব্যাট করলো। বাংলাদেশকে ভালো কিছু করতে হলে তার মত ওপেনারের এমন ধারাবাহিকতা খুব প্রয়োজন। তামিমের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটাকে সে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। গত বেশ কিছুদিন ধরে টি-টোয়েন্টিতে সে যে ধারাবাহিক ফর্মে রয়েছে, তার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে যেন বিশ্বকাপে এসে।
ডাচদের বিপক্ষে ব্যাট হাতে একাই জিতিয়েছিল সে। আজও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তামিম ওভাবে মারমুখি না হলে কোনভাবেই জয়ের স্বপ্ন দেখা সম্ভব হতো না। কারণ, এ ধরনের শর্টার ভারসনে আইরিশ ব্যাটসম্যানরা ভয়ঙ্কর। পল স্টার্লিং, ও’ব্রায়েনদের দুই ভাই (নেইল ও কেভিন) জ্বলে উঠলে জয় পাওয়াই কঠিন হয়ে যেতো।
কিন্তু ব্যাট হাতে তামিম সব শঙ্কা দুর করে দিল। ওর মধ্যে অসম্ভব আত্মবিশ্বাস দেখতে পেয়েছি। প্রথমদিনই বলেছিলাম, টি-টোয়েন্টিত তামিমের মত ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইকরেট ১০৭ কোনভাবেই মানায় না। তার স্ট্রাইকরেট হওয়া উচিৎ কম করে হলেও ১২৫-১৩০ করে। এই বিশ্বকাপেই তার সুযোগ স্ট্রাইক রেট বাড়ানোর। তামিমের ব্যাটিং যেন আমার কথারই প্রতিদ্বনি। অসাধারণ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করে যাচ্ছে। আজ যেমন তার স্ট্রাইকরেট ছিল ১৮০’র ওপর। সৌম্য ২০ রান করলেও স্ট্রাইক রেট ছিল ১৫০-এর ওপর। টি-টোয়েন্টিতে এমনই তো চাই।
গতকালই বলেছিলাম বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হলে টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইকরেট ১৩০ এর ওপর রাখতে হবে এবং একজন-দু’জনকে লম্বা ইনিংস খেলতে হবে। লম্বা ইনিংস খেলার কাজটা তামিম একাই নিজের ওপর টেনে নিয়েছে দেখে ভালো লাগছে। আশা করি পুরো টুর্নামেন্টে এভাবেই নিজের সেরাটা ঢেলে দেবে সে।
আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়াতে শেষ ম্যাচের অংকটা একটু কঠিন হয়ে গেলো। কারণ বাংলাদেশ এবং ওমানের পয়েন্ট সমান। শেষ ম্যাচে আবার মুখোমুখি এই দুই দেশ। সুতরাং, বাংলাদেশের জন্য বাঁচা-মরার লড়াই। পরবর্তী রাউন্ডে যেতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশকে জিততে হবে। যদিও ওমান এতটা শক্তিশালি দল নয়। আয়ারল্যান্ডকে হারিয়েছে বলে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা যেন ওমানকে দেখে ভিতু হয়ে না পড়ে।
লেখক: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক
আইএইচএস/আরএস