অবশ্যই জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখি: আশরাফুল
আর মাত্র ৪ মাস। এরপরই শৃঙ্খল মুক্ত হয়ে যাবেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। অধিনায়ক হিসেবে নয়, আশরাফুলকে ভক্তরা ভালোবাসে তার অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুন্যের কারণে। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বকনিষ্ট সেঞ্চুরিয়ান হিসেবেই নয় শুধু, কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার মত পরাশক্তিকে হারানোর মূল কারিগর ছিলেন তিনি। করেছিলেন অসাধারণ সেঞ্চুরি। ২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের নির্মাতাও ছিলেন তিনি।
সেই আশরাফুলই আজ ভাগ্যের ফেরে পড়ে ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত। একটা ভুল করেছিলেন তিনি বিপিএল চলাকালে। সেই ভুলের খেসারত দিতে গিয়ে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন। আগামী আগস্টেই শেষ হবে আশরাফুলের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ। এরপরই আবার ব্যাট হাতে মাঠ কাঁপাতে দেখা যাবে দেশের এক সময়ের সেরা এই ব্যাটসম্যানকে।
নিষেধাজ্ঞা কাটানোর পর আবারও আশরাফুল ক্রিকেটে নিয়মিত হয়ে উঠবেন। পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন, কীভাবে, কোন পথে এগুলে আবারও ক্রিকেটে আগের সেই আশরাফুলকে দেখা যাবে। ঘরোয়া লিগে পারফর্ম করেই আশরাফুল আবার গায়ে জড়াতে চান জাতীয় দলের জার্সি। বিষয়টা কতটা সম্ভব? জানতে চাইলে বেশ আত্মবিশ্বাসী শোনালো সাবেক এই অধিনায়কের কণ্ঠ।
আশরাফুল বললেন, ‘অবশ্যই আমি স্বপ্ন দেখি, বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলবো। যেহেতু আমার বয়স মাত্র ৩২ বছর। আমি বিশ্বাস করি, ব্যাটসম্যানরা ফিট থাকলে, অনেক বছর খেলা যায়। পাকিস্তানের মিসবাহ-উল হক (বয়স প্রায় ৪২) এখনও দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি পারলে আমি পারবো না কেন? আমি বিশ্বাস করি, আমি যদি সুস্থ থাকি, তাহলে দেশকে আরও বেশ কয়েক বছর সার্ভিস দিতে পারবো।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাট-বলের ঝঙ্কার শুরু হয়ে গেছে। নাগপুরের বিদর্ভ স্টেডিয়ামে বাছাই পর্ব দিয়েই শুরু হলো ধুম-ধাড়াক্কা ক্রিকেট সংস্করণের এই বিশ্বআসর। চলবে এপ্রিলের ৩ তারিখ পর্যন্ত। প্রায় ২৭ দিনের এক ক্রিকেট মহাযজ্ঞ। এই মহাযজ্ঞে জাগো নিউজের সঙ্গে থাকছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় এই অনলাইন পত্রিকার কার্যালয়ে আজ (মঙ্গলবার) আশরাফুল এসেছিলেন পরিদর্শনে। জাগো নিউজের নিউজরূম দেখে অভিভূত আশরাফুল মনে করেন, এই নিউজপোর্টালটি আরও অনেকদুর এগিয়ে যাবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সুজন মাহমুদ, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জিয়াউল হক, চিফ নিউজ এডিটর মহিউদ্দিন সরকার প্রমুখ।
জাগো নিউজে এসেই স্পোর্টস টিমের সঙ্গে নিজের ফেরার পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন আশরাফুল। এ সময়ই জাতীয় দলে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। আশরাফুল বলেন, ‘২০১৬-র আগস্টের পর থেকে আমি ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে পারবো। এখন তো আর বেশি দিন নেই। ৬ মাসেরও কম সময়। ইতিমধ্যেই আমি অনুশীলন শুরু করে দিয়েছি। পরিকল্পনা হচ্ছে, আমি এখন জাতীয় লিগ, ঢাকা লিগ এসব খেলতে পারবো। আশা করি, ভালোমতই কামব্যাক করতে পারবো, এটা আমার বিশ্বাস।’
নিজে নিজেই অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন আশরাফুল। বিসিবির পক্ষ থেকে একটি রিহ্যাব প্রোগ্রাম দেয়ার কথা। বিভিন্ন টুর্নামেন্ট এবং সিরিজের ব্যস্ততার কারণে আশরাফুল নিজেও যোগাযোগ করতে একটু বিলম্ব করছেন। তিনি আশা করছেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরই একটা রিহ্যাব প্রোগ্রাম পেয়ে যাবেন বিসিবির পক্ষ থেকে। তখন, ক্রিকেটে ফেরার রাস্তাটা আরও পরিস্কার হবে।
পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির ক্রিকেটে ফেরার কারণে, আশরাফুলও বেশ আশাবাদী, তিনিও পারবেন বাংলাদেশ দলে ফিরতে। তবে, আমিরের জাতীয় দলে ফেরার সময় যে অভিজ্ঞতা হয়েছিলো, চারদিক থেকে যে বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিলেন- সে বিষয়গুলো মাথায় রয়েছে আশরাফুলের। তিনি জানান, বর্তমান দলের সব ক্রিকেটার কিংবা বিসিবির অন্যদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো। বাংলাদেশের ম্যাচ থাকলেই তিনি মাঠে যান এবং সবার সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। যদিও অনুতপ্ত হওয়ার কারণে নিজেই এখন অনেককে এড়িয়ে চলতে চান। যখন আবার ক্রিকেটে ফিরবেন, তখন না হয় তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলবেন।
তবুও কোন অনাকাংখিত পরিস্থিতি যে তৈরী হবে না, তা নয়। আশরাফুল এসব নিয়ে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘সব কিছুতেই পজিটিভ-নেগেটিভ ২টা দিকই থাকে। একদম নেগেটিভ কিছু হবে না যে সেটা ধরে নিইনি। তেমন কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতেও পারি আমি। ওসবের জন্য আমি প্রস্তুত আছি। মোহাম্মদ আমিরের সঙ্গে যা হয়েছে, তা যে আমার সঙ্গে হবে না তা তো নয়। হতেও পারে। আমি আশা করছি, ঘরোয়া ক্রিকেট যখন খেলা শুরু করবো, তখন সবার সঙ্গে সম্পর্কটা আরও ভালো হয়ে যাবে।’
আইএইচএস/এবিএস