ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

তাসকিনের গতিকেই বেশি ভয় ভারতের!

প্রকাশিত: ০৪:০৮ পিএম, ০৪ মার্চ ২০১৬

ভারতরে নিশ্চয় মনে থাকার কথা, তাসকিনের অভিষেক ম্যাচটির কথা। লিকলিকে এক তরুণের অভিষেক ঘটিয়েছে বাংলাদেশ। মিরপুরে স্পিন বান্ধব উইকেটে এক পেসারের অভিষেক কতটা কার্যকরি হবে, সেটা নিয়ে অনেকেই ছিলেন সন্দিহান; কিন্তু আগের বিপিএলে ঝড় তোলার সুবাধে এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমীর কাছেই পরিচিত মুখ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সুতরাং, তাসকিন যে অভিষেতে ২৮ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন, সেটা অবাক হওয়ার কিছু ছিল না; কিন্তু ভারতীয়রা ছিনে গিয়েছেন, তাদের উইকেটের স্বাদ জিহ্বায় লেগে গেছে এক বাংলদেশি টাইগারের জিহ্বায়।

অভিষেকের পর তাসকিন বিশ্বকাপ খেলেছেন, সেখানেও গতির ঝড় তুলেছিলেন। খেলেছিলেন গত বছর ভারতের বিপক্ষে জয়ী সিরিজেও। যদিও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি। এরই মধ্যে আরেক বিস্ময় মুস্তাফিজের আবির্ভাবে কেমন যেন আড়ালেই চলে গিয়েছিলেন তিনি। একই সঙ্গে ইনজুরিও।

অবশেষে বিপিএল, জিম্বাবুয়ে সিরিজ হয়ে তাসকিন সগৌরবে নিজের জায়গাটা পোক্ত করে ফেলেছেন বাংলাদেশ দলের একাদশে। চার পেসার তত্ত্বের অন্যতম অস্ত্র। এবার এশিয়া কাপে তাসকিনকে দিয়েই বোলিংয়ের ওপেন করাচ্ছেন মাশরাফি। শুরু থেকেই দুর্দান্ত গতি আর সুইংয়ে প্রতিপক্ষকে ঘাবড়ে দেয়ার অসাধারণ কাজটি করে যাচ্ছেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে যেভাবে গতির ঝড় তুলেছেন, তাতেই পিলে চমকে যাচ্ছে ভারতীয়দের। মুস্তাফিজের অনুপস্থিতিতে কে হবে বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের পথ প্রদর্শক, তা নিয়েই সবাই ছিল সন্দিহান। কিন্তু তাসকিনের অসাধারণ সব ডেলিভারি, ভাবতে বাধ্য করছে ভারতকে।

লাসিথ মালিঙ্গা নিজেও এ প্রজন্মের অন্যতম সেরা পেসার। তিনি পর্যন্ত বাংলাদেশের পেস অ্যাটাককে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ওপেনার ড্যারেন লেম্যান তো রীতিমতো অভিভূত।  বাংলাদেশ নিয়ে কপিল দেবের ছোট্ট একটি বাক্যে মূল্যায়ন, `অসাধারন তাদের পেস বোলিং।`

বোলিংয়ে ১০০ মাইল গতি ছুঁয়ে ফেলা  শোয়েব আখতারও পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন তাসকিন আহমেদের। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে তাসকিনের তৃতীয় ডেলিভারিটির গতি ছিল ১৪৩ কিলোমিটার, তখনই উঠে এল অ্যাডিলেডে রুবেল হোসেনের ১৪৭ কিলোমিটার গতির ডেলিভারিটির কথা। রুবেলের অনুপস্থিতিতে তার গতিকে টপকে গেছেন তাসকিন। চলতি এশিয়া কাপে সবচেয়ে জোরে বল করেছেন তিনিই। স্পিডগানে  যার গতি ১৪৮ কিলোমিটার। তাসকিনের এই গতিই এখন ভারতের সব ভয়ের কারণ।

বলের সিমটা ভাল ব্যবহার করতে পারেন বলে নুতন বলে শুরুটা করবেন তাসকিন- অভিষেক থেকে এটাইই যেন ছিল অলিখিত নিয়ম। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যখন চার ছক্কার ফুলঝুরি দেখতে আসে দর্শক, সেখানে বিকল্প ধারণাটাও দিচ্ছেন পুরনো ঢাকার এই ছেলেটি। এশিয়া কাপের চলমান আসরে সফল বোলারদের তালিকায় আল আমিন ( ৪ ম্যাচে ১০ উইকেট) থাকলেও ৪ ম্যাচে ২ উইকেট পেয়েও আলোচনায় তাসকিনই। প্রতিপক্ষকে শুরুতে গতি দিয়ে পিলে চমকে দেওয়ার কাজটা প্রতিনিয়ত করছেন তিনি। তবে শুধু গতি নয়, নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের ফর্মুলাও মেনে চলেছেন তিনি।  ৪ ম্যাচে ৭৮টি ডেলিভারির মধ্যে ৪৭টিই ডট! সবচেয়ে বেশি ডট পাকিস্তানের বিপক্ষে, ১৬টি।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তার প্রথম স্পেলটার কথাই ধরা যায়। প্রথম  ১২ বলের মধ্যে ডট ১১টি! দ্বিতীয় স্পেলে ১-০-১-১। তার এমন বোলিংয়েই প্রথম ১০ ওভারে ৩৪ এর বেশি করতে পারেনি পাকিস্তান এবং ওখানেই ব্যাকফুটে চলে য়ান আফ্রিদিরা। ৫ উইকেটে জিতে তাই তাসকিন স্তুতি অধিনায়ক মাশরাফির, `তাসকিন  মঞ্চটা সাজিয়ে দিয়েছিল। ছেলেটার পুরো টুর্নামেন্টে ভাগ্য খারাপ ছিল। ওর বলে অনেকগুলো ক্যাচ ড্রপ হয়েছে। ও   মানসিকভাবে দৃঢ় ছিল বলে ফল পেয়েছে।`

২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ভারতের বিপক্ষে, অভিষেকেই বাজিমাত (৫/২৮)। ওয়ানডে ক্রিকেটে ভারতের বিপক্ষে তার রেকর্ডটা দারুন, ৫ ম্যাচে ১২ উইকেট।  ভারতের বিপক্ষে নিজের অতীত রেকর্ড ভাল বলেই ফাইনালে নিজের সবটুকু উজাড় করে খেলার সংকল্প তাসকিনের। বলেন, `এশিয়া কাপ টি-২০তে বড় দুই দলের বিরুদ্ধে জিতেছি। এটা আমার অনেক বড় পাওয়া। দেশের হয়ে যখন খেলি, তখন ১০০ শতাংশ এমনিতেই চলে আসে। ক্যারিয়ারে এটাই আমার প্রথম এশিয়া কাপ, আর এই আসরেই ফাইনাল খেলছি। নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। এখন লক্ষ্য একটাই, সেরাটা খেলা।`

যে  টি-শার্ট পরে মিডিয়াকে দিয়েছেন সাক্ষাতকার, তাতে ইংরেজীতে বড় করে লেখা ‘বেস্ট ইজ ইয়েট টু কাম’। শুধু তাসকিনই নন, দলের সবাইকে নাকি দেওয়া হয়েছে এই টি-শার্ট।  ক্রিকেটারদের প্রতিনিয়ত ভাল করার টনিকও নাকি এই টি-শার্টই।  এই টি-শার্টেও স্লোগানটি বুকেও ধারণ করছে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা ! ফাইনালেই কী তবে সেরাটা দেখাবে বাংলাদেশ!

আইএইচএস/জেএইচ

আরও পড়ুন