ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সংস্কারব্যয় বেড়ে ১৫৫ কোটি টাকা

রফিকুল ইসলাম | প্রকাশিত: ০৯:০৩ পিএম, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য ২০১৭ সালে যখন প্রথম ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজোল) তৈরি করেছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি), তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮০ কোটি টাকার মতো। ওই প্রজেক্ট তৈরি হয়েছিল ২০১৯ সালের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে।

কিন্তু যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্টেডিয়াম সংস্কার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনে এনএসসি। নতুন পরিকল্পনায় বাজেট বেড়ে দাঁড়ায় ৯৮ কোটি টাকা এবং সংস্কার শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয় ২০২২ সালের জুন। পরে সময় বাড়িয়ে সেটা ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

jagonews24

৯৮ কোটি টাকায় স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য বদলে দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও সেই টাকায় আর হচ্ছে না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ স্টেডিয়াম সংস্কার শেষ করার জন্য আরও ৫৭ কোটি টাকা বাড়তি চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। বর্ধিত বাজেট পাস হলে স্টেডিয়াম সংস্কারের খরচ বেড়ে দাঁড়াবে ১৫৫ কোটি টাকা। প্রকল্প শেষ করার নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৪ সালের জুন।

‘ঢাকাস্থ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের অধিকতর উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে ভাগ করা হয়েছিল ২০১৯-২০, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ -এই তিন অর্থবছরে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৭ কোটি টাকার কাজ হওয়ার কথা ছিল দ্বিতীয় (২০২০-২১) অর্থবছরে। প্রথম (২০১৯-২০) অর্থবছরে ২৬ এবং শেষ অর্থবছরে (২০২১-২২) ছিল ১৫ কোটি টাকা।

বিদ্যমান প্রকল্প অনুযায়ী সংস্কারকাজ সম্পন্ন করার নির্ধারিত সময় শেষ হলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ৯৮ কোটি টাকার মধ্যে পেয়েছে মাত্র ৩০ কোটি টাকা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সুকুমার সাহা বৃহস্পতিবার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই অর্থবছর হয়তো আরও টাকা পাওয়া যাবে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে যাওয়ায় পুরো টাকা পাওয়া কঠিন।’

jagonews24

স্টেডিয়াম সংস্কারের সবচেয়ে বড় ব্যয় ফ্লাডলাইট স্থাপন। আগে এর বাজেট ছিল ১৪ কোটি টাকা। সেটা বাড়িয়ে এখন করার প্রস্তাব করা হয়েছে ৪০ কোটি টাকার মতো। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয়ের খাত হচ্ছে গ্যালারিতে শেড নির্মাণ। ২২ কোটি টাকার সেই বাজেট বাড়িয়ে এখন প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৮ কোটি টাকা। আগের ২০ কোটি টাকা বাজেটের মধ্যেই শেষের পথে অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক স্থাপনের কাজ।

তিনটি বড় কাজের এখনো দরপত্রই হয়নি। ২২ কোটি টাকার বাজেট নিয়ে শুরু হয়েছিল গ্যালারির শেড স্থাপনের কাজ। ওই টাকায় শুধু ফ্রেমটা করা গেছে। শেড স্থাপনের কাজ শেষ করতে লাগবে আরও ১৬ কোটি টাকা। বর্ধিত বাজেট পাস হলে শেডের বাকি কাজ শেষ করতে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করতে হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ওই সহকারী পরিচালক।

দরপত্র হয়নি ফ্লাডলাইট ও গ্যালারিতে চেয়ার বসানোর কাজেরও। বর্ধিত ৫৭ কোটি টাকা খরচের অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত দরপত্রও আহ্বান করতে পারছে না জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। ভিআইপি গ্যালারির চেয়ার চলে এসেছে চট্টগ্রামে। সাড়ে ৭ কোটি টাকার সাধারণ গ্যালারির চেয়ার স্থাপনের কাজের দরপত্র এখনও হয়নি। গ্যালারির চেয়ারের সংখ্যা ১৮ হাজার ৩০০। ভিআইপি ও অন্যান্য মিলিয়ে স্টেডিয়ামের মোট দর্শকধারণ ক্ষমতা ২৩ হাজার।

জুনে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের ঢাকায় আসার একটা সম্ভাবনা আছে। যে কারণে বাফুফে দুদিন আগে জুনের মধ্যে স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক মানের করে তৈরি করতে অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে।

jagonews24

একাধিক কাজের দরপত্রই যেখানে হয়নি, সেখানে জুনের মধ্যে কতটা কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব? ‘আমরা মার্চের মধ্যে এই স্টেডিয়াম খেলা আয়োজনের মতো প্রস্তুত করে দিতে পারবো। মাঠ, ড্রেসিংরুম, প্রেসবক্স হয়ে যাবে এই সময়ের মধ্যে। সব কাজ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত আমাদের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ’-বলেছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সুকুমার সাহা।

প্রকল্প শেষ করার জন্য নতুন করে সময় বাড়িয়ে যখন ২০২৪ সালের জুনে নেওয়া হয়েছে তখন গ্যালারিতে শেড স্থাপনের কাজটি সহসা সম্পন্ন হচ্ছে না বলেই ধরে নেওয়া যাচ্ছে। মাঠে খেলা ফিরলে শেড স্থাপনের কাজটি বাইরের দিক থেকেই করতে হবে। ‘খেলা শুরু হলে ভেতর থেকে এই কাজটি করা সম্ভব নয়। যে কারণে, আমাদের বাইরের থেকে অতিরিক্ত ক্রেন ব্যবহার করে শেড স্থাপন করতে হবে। তাতে খরচও কিছুটা বাড়তে পারে’-বলেছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ওই কর্মকর্তা।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের বিদ্যমান জায়ান্ট স্ক্রিনটি মেরামত করার কথা ছিল সংস্কার পরিকল্পনায়। তবে এটা এখন আর ব্যবহার করা যাবে না বলে নতুন করে একটা জায়ান্ট স্ক্রিন স্থাপন করতে হবে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি টাকার মতো।

ফ্লাডলাইট, গ্যালারির শেড, অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক, গ্যালারিতে চেয়ার বসানো, জায়ান্ট স্ক্রিন ছাড়াও সংস্কার পরিকল্পনায় অন্য কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে-মাঠ উন্নয়ন, ড্রেসিংরুম আধুনিকায়ন, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, জেনারেটর স্থাপন, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বোর্ড স্থাপন, মিডিয়া সেন্টার তৈরি, টিকিট কাউন্টার, ডোপ টেস্ট রুম তৈরি, চিকিৎসা কক্ষ, ভিআইপি বক্স নির্মাণ, প্রেসিডেন্ট বক্স, টয়লেট উন্নয়ন, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সাব-স্টেশন।

আরআই/এমএমআর/জিকেএস