নিজেকে নিয়ে মাশরাফি একটু বেশিই খামখেয়ালি
দ্বিতীয় পর্ব
পড়ুন প্রথম পর্ব
যদি সেলিব্রেটিকে নিয়ে লিখলে তিনিও সেলিব্রিটি হযে যান তাহলে দেবব্রত মুখোপাধ্যয়কেও কি সেলিব্রিটি বলা যায়! মাশরাফি বিন মর্তুজাকেই যে তিনি একটি গ্রন্থে গ্রন্থাবদ্ধ করে একজায়গায় উপস্থাপন করে দিয়েছেন লক্ষ-কোটি ভক্ত-সমর্থকের সামনে! নাম তার ‘মাশরাফি’।
মাশরাফিকে শুধু সেলিব্রিটি বলে একটা ব্র্যাকেটে বন্দী করে ফেলা যায় না। মাশরাফি একটি আইডল। কোটি মানুষের স্বপ্নের নায়ক। এমনি এমনি আর স্বপ্নের নায়কে পরিণত হননি তিনি। ক্রিকেটে নড়াইল এক্সপ্রেস নামে পরিচিত। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের রঙিন জার্সির অধিনায়ক। তবে, এসব কিছু ছাপিয়ে এখন মাশরাফির বড় পরিচয়ই যেন হয়ে উঠেছে- তিনি একজন নেতা। একজন অনুপ্রেরণাদায়ী। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাকিব, তামিম থেকে শুরু করে সবারই সরল স্বীকারোক্তি এটা।
আর নিজের জীবনে যে কঠিন লড়াই সংগ্রাম করেছেন মাশরাফি, সেটাই যেন মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষণীয় এক বিষয়। মাশরাফির জীবন সংগ্রামের বিষয়টাই মূল উপজীব্য হয়ে উঠেছে তাকে নিয়ে লেখা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘মাশরাফি’তে। তো ‘মাশরাফি’ লিখতে গিয়ে লেখক দেবব্রত মুখোপাধ্যয় মুখোমুখি হয়েছেন নানারকম মজার অভিজ্ঞতার। সেগুলোই উঠে এসেছে দীর্ঘ এ সাক্ষাৎকারে। বৃহস্পতিবার প্রকাশ হয়েছিল এই সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব। আজ প্রকাশ করা হলো দ্বিতীয় পর্ব।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের ক্রীড়া প্রতিবেদক রামিন তালুকদার। সাক্ষাৎকার সাজিয়েছেন, জাগো নিউজের ক্রীড়া সম্পাদক ইমাম হোসাইন সোহেল।
একজন মানুষকে নিয়ে আলোচনা-সমালোনা করলে তার খারাপ দিক বের হবেই। মাশরাফির সবচেয়ে খারাপ দিক কোনটা?
দেবব্রত: এটা খুবই কঠিন প্রশ্ন। আসলে ব্যক্তি হিসেবে দোষ-ক্রুটির উদ্ধে তো নয় মাশরাফি। অন্যসব কিছু বাদ দিয়ে, আমার চোখে যেটা সবচেয়ে বেশি ধরা পড়েছে, সেটা হলো- মাশরাফির নিজের প্রতি খেয়ালটা একটু কম। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য হলেও তো কোন কোন ক্ষেত্রে একটু স্বার্থপর হতে হয়। সেই স্বার্থপরতারই অভাব রয়েছে তার মধ্যে। একটু বেশিই খামখেয়ালি। এই যেমন ধরুন, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচটিরই কথা। দেখলাম একটা সিঙ্গেল বাঁচানোর জন্য সেকি জাম্পটাই না দিলেন! মাশরাফি ওই জাম্পটা না দিলেও পারতেন। কেউ তাকে এ নিয়ে কিছু বলতোও না; কিন্তু ওই যে, নিজের প্রতি খামখেয়ালিপনা... এটাই ওর বড় দোষ।
মাশরাফি লিখতে লিখতে মনে হয়েছিল কী কখনও, ‘ইস! আমি যদি মাশরাফি হতাম!’
দেবব্রত: না, আমার কখনোই এমনটা মনে হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে আমার এটা মনে হয় না। কারণ শুধু মাশরাফির ক্ষেত্রেই না, ধরেন যে লোকটা বাংলাদেশের হয়ে একটা ম্যাচই খেলছে। একটা টেস্ট খেলছে বা একটা ওয়ানডে ম্যাচ খেলছে। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তুলছে, কখনো এটা ভাবার সাহস পাইনা যে, ওই জায়গায় যদি আমি থাকতাম! আমি শুধু কল্পনা করতে পারি, কতটা যোগ্য হলে এটা সম্ভব। আমরা অনেক অভিযোগ করতে পারি বাংলাদেশ নিয়ে, অনেকে করেও, আমিও করি। এই দেশটায় অমুক ভালো না, তমুক ভালো না। শেষ পর্যন্ত এটা কিন্তু ষোলো কোটি মানুষের দেশ। এখানে আপনি যাই বলেন না কেন। একটা খেলোয়াড় যখন ওই একদিন একটা ম্যাচ খেলে সে কিন্তু ওই ষোলো কোটি মানুষের মাঝখান থেকে বাছাই করা এগারো জনের একজন। তাই মাশরাফির ওই জীবন আমাকে লোভী করতে পারে; কিন্তু আমি জানি ওই জীবন আমার পাওয়া সম্ভব নয়।
আমি জানি ক্রিকেট তো দূরে থাক, কোন ক্ষেত্রেই আমি সেরা এগারোজনের একজন না। আমার জায়গাটা পরিস্কার, জানি আমি কত বড় আর কত ছোট। ফলে এই লোভটা আমি করি না। তবে একটা জিনিস মনে হয়েছে। আমি যখন প্রথম তার (মাশরাফির) বাড়ি গেলাম, তার কয়েক মাস আগে আমার মা মারা গিয়েছিল। তো ওই রাতে মাশরাফির মা আমাকে অনেক যত্ন করতেছে। ওনার বেডরুমটাই আমাকে ঘুমানোর জন্য দিলেন। তারপর আরও অনেক যত্ন করছিলেন, তখন আমার খুব মনে হয়েছিল, ইস আমার মা যদি বেঁচে থাকতেন! থাকি ঢাকায়, বাড়িতে অনেক দিন পর ফেরা হতো। তখন আমার মা এমন করতেন। এই রকম ছোট-খাট কিছু ব্যাপারে ঈর্ষা হয়েছে যে, যদি মাশরাফির মত চিত্রা নদীর পারে বড় হতে পারতাম! কিন্তু আমি কখনো এই লোভ করিনি, ‘ইস আমি যদি মাশরাফির মত তারকা হতে পারতাম!’
মাশরাফিকে নিয়ে লিখতে তো তার সতীর্থদের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে, তো তার সম্পর্কে সতীর্থদের মনোভাব কেমন?
দেবব্রত: খুব জনপ্রিয়। কাল (উদ্বোধনের দিন) কোচ (হাতুরুসিংহে) যা বললেন সেটাতেই প্রমাণ। প্রোগ্রাম ঠিক হওয়ার পর কয়েকবার আমাকে কোচের সঙ্গে বসতে হয়েছে। তিনি প্রতিবারই এই রসিকতা আমার সঙ্গে করেন যে, ‘তোমরা কেন তাকে মন্ত্রী ঘোষণা করে দাও না! তার তো রাজনীতি করা উচিৎ।’এটা কোচ যে জায়গা থেকে বলেছে, সেটা হলো তিনি অনুভব করেন, মাশরাফি কতখানি জনপ্রিয়। মাশরাফি শুধু দেশে না, ড্রেসিং রুমেও অনেক জনপ্রিয়। এবার যখন তাকে অধিনায়ক করা হলো, এর একটা বড় কারণ ছিল তার ড্রেসিং রুম জনপ্রিয়তা। ওই সময়ে মনে হয়েছিল, সীমিত ওভারের ম্যাচে এমন কাউকে দেয়া দরকার যাকে ড্রেসিং রুমে সবাই খুব পছন্দ করে। এই জিনিসটা সব সময় তিনি ধরে রেখেছেন। এখনও রাখেন। ড্রেসিং রুমের যতজনের সঙ্গে আমি আলোচনা করেছি, তাদের মধ্যে এই বইয়ে সাকিবের সাক্ষাৎকারও আছে। সাকিব নিজে বলেছে, এছাড়া তামিম, মাহমুদউল্লাহ যত জনের সঙ্গে কথা বলেছি, সবাই তাকে অনেক পছন্দ করে।
তরুণ খেলোয়াড় যারা আছে তাদের কথা নাই বা বলি। কারণ, ওদের প্রজন্মের সবারই হিরো হচ্ছেন মাশরাফি। ওরা ক্রিকেট খেলা শুরুই করেছে মাশরাফিকে দেখে। মাশরাফি ওদের আইডল। ওদের কাছে জনপ্রিয় হবে এ নিয়ে তো আর কথা নেই; কিন্তু মাশরাফির সমসাময়িক যারা, যেমন মুশফিক, তামিম, রিয়াদ, সাকিব এদের মধ্যেও তিনি খুব জনপ্রিয়। আমরা মানুষ মাত্রই একটু এক জনের সঙ্গে আরেকজনের দ্বন্দ্ব দেখতে পছন্দ করি। যেমন মাশরাফির সঙ্গে যদি সাকিবের একটা দ্বন্দ্ব হয়, তাহলে বোধহয় জিনিসটা অনেক সিনেম্যাটিক হবে। আসলে এ রকম কিছু বাংলাদেশ দলে নেই। বইটা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এই জিনিসটা ফিল করতে পারছি। আপনি ভাবতেও পারবেন না, অবাক হয়ে যাবেন সাকিব বাংলাদেশের ক্রিকেট এরিনায় সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে মাশরাফিকেই। আমি ওর সঙ্গে বারবার এই নিয়ে কথা বলে এটা বুঝতে পেরেছি। আর রিয়াদ তামিম ওদের তো সব সময়ের প্রিয় চরিত্র মাশরাফি। ওই যে বললাম না, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমি আশাই করতে পারিনি যে, সব খেলোয়াড় এভাবে এসে মজা করবে।
খেলার ওপর তো এর আগে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে লিখেছেন, এবার মাশরাফিকে নিয়ে। পরবর্তী প্রজেক্ট? তামিম না মুশফিক?
দেবব্রত: এবার আর নির্দিষ্ট ব্যাক্তি নয়। এরপর দুটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি। একটা হলো বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার যারা আছেন, স্বাধীনতার পর থেকে যাদের হাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভিত্তি গড়ে উঠেছে, এমন ক্রিকেটারদের মধ্য থেকে বাছাইকরা ৩০জনের জীবন নিয়ে একটা সংকলণ বের করা। এই কাজটা খুব কঠিন এবং খুব দ্রুততার সাথে করছি। ইতিমধ্যে অনেক এগিয়েও গিয়েছি। তালিকা তৈরী করা হয়ে গেছে। তাদের সম্পর্কে তথ্যও জোগাড় করে ফেলেছি। অনেকের সাক্ষাৎকারও নিয়েছি। আশা করছি আগামী বছর বইমেলার আগে শেষ করে ফেলতে পারবো।
দ্বিতীয় প্রজেক্টটা হচ্ছে একটা পরিবারকে নিয়ে। চট্টগ্রামের খান পরিবার। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাদের অবদানের কথা অস্বীকার করতে পারবে না কেউ। এক পরিবার থেকেই এসেছে তিনজন টেস্ট ক্রিকেটার। আকরাম খান, নাফিস ইকবাল এবং তামিম ইকবাল। তবে আমার কাজ কিন্তু মূলতঃ এ তিনজনকে নিয়ে নয়। পরিবারের মূল ব্যাক্তি যিনি, সেই ইকবাল খানকে নিয়ে। তার অনুপ্রেরণাতেই একটা পরিবার এতদুর পর্যন্ত আসতে পেরেছ। বইটার কাজ খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এখনও পরিকল্পনারও অনেক বাকি। এ নিয়ে চট্টগ্রামও যেতে হবে কয়েকবার। আশা করছি আগামী বই মেলার পর মাস ছয়েকের মধ্যে পাঠকের হাতে দিতে পারবো।
অনেক্ষন আমরা মাশরাফিকে নিয়ে বললাম এবার আপনার নিজের সম্পর্কে বলুন। প্রিয় যা যা আছে, প্রথমে প্রিয় খাবার, প্রিয় সিনেমা...
দেবব্রত: প্রিয় খাবার ওই রকম কিছু নাই। আমার আকার দেখেই বুঝতে পারেন যে আমি সব খাই। এখন যেটা হয়েছে শারীরিক অসুস্থতার জন্য, ডাক্তারি নিষেধাজ্ঞায় অনেক খাবার খেতে পারি না। এছাড়া সব খাবারের প্রতি দুর্বলতা আছে, মিষ্টিটা বেশি খাই। যে কোন ধরণের মিষ্টি খুব পছন্দ। ডাক্তারের নিষেধ থাকলেও খাই। প্রিয় সিনেমা সাধারণত যা বলা হয়, ভালো সিনেমা- সেটা আমি খুব কম দেখেছি। তাই এই তালিকার খুব নামকরা কিছু থাকবে না। আমি জনপ্রিয় সিনেমা বেশি দেখি। সেক্ষেত্রে ইংরেজি এবং হিন্দি জনপ্রিয় সিনেমাগুলিই দেখি। এসব সিনেমা অনেককাল ধরে ভালো লাগে না। ধরেন এখন ‘তারে জমিন পার’ ভালো লাগছে, তো কালকে ‘টার্মিনাল’। পরশুদিন আরেকটা ভালো লাগলো। এই রকমই হয়। কনস্টেন্ট কিছু না। তবে প্রিয় তারকার কথা বলতে পারি। এদিকে আমির খান আর ওইদিকে টম হ্যাংকস। এদের কোন মুভি থাকলেই দেখি।
প্রিয় রং, পোশাক
কালোর উপর অনেক টান আছে। কালো রঙের পোশাক পরতে ভালো লাগে; কিন্তু সবসময় পরা হয় না। কারণ পোশাকটা আমার একার পছন্দে হয় না। বাসা থেকেই বেশি এটা ঠিক করে দেয়া হয়। তবে আমি খুব কালো রঙের পোশাক পরতে পছন্দ করি। এছাড়া প্রিয় পোশাকের মধ্যে মাশরাফির মতই আমি বাসায় লুঙ্গি পরতে পছন্দ করি, এই জায়গায় মাশরাফির সঙ্গে মিল আছে। এমনিতে বাইরে মুলত জিন্স টি-শার্টই পরি। জিন্স টি-শার্ট ছাড়া আমি খুব একটা বেশি কিছু পরি না। শার্ট আছে কি না জানিনা। চার পাঁচটা শার্ট থাকলেও থাকতে পারে, আবার নাও থাকতে পারে।
প্রিয় লেখক
এটা বলতে আমার খুব কষ্ট হয়ে যাবে। কারণ আমি খুব পড়ি। তাই প্রিয় লেখক এক দু’জন বলা খুব মুশকিল। একেবারে খুব নির্দিষ্ট করে বললে সৈয়দ মুজতবা আলী। এটা বললাম অনেক কিছু মাথায় রেখে। কারণ উনার রম্যতা খুব পছন্দ করি। উনার লেখনি খুব পছন্দ করি। এছাড়া শত শত লেখকের নাম আসা উচিৎ যাদের সরাসরি প্রভাবই আছে আমার লেখা-লেখিতে।
প্রিয় খেলোয়াড় (মাশরাফি ছাড়া)
প্রিয় খেলোয়াড় মোহাম্মদ আশরাফুল। আমি তার ব্যক্তিগত জীবন প্রিয় তা বলছি না। একটু ব্যাখ্যা দিয়ে রাখি কিন্তু, আশরাফুলের ব্যক্তিগত জীবনের কোন দায় তার ব্যাটিং বহন করে না। আমি পছন্দ করি তার ব্যাটিং। আর দেশের বাইরে যদি বলেন ভিভ রিচার্ডস।
সাংবাদিকতা করছেন, তবে লেখক হওয়ার ইচ্ছাটা ঠিক কবে থেকে?
দেবব্রত: আমি কিন্তু আসলে লেখক হতে এসে সাংবাদিক হয়েছি। সাংবাদিক থেকে লেখক হইনি। আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু ভিন্ন, এ কারণে আমি আগে থেকেই একটু একটু গল্প লিখতাম। ছোট গল্প। গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হওয়ার পর চেষ্টা করেছিলাম অন্য পেশায় যোগ দিতে। এনজিওর চাকরি-টাকরি করার; কিন্তু সেগুলোতে ঠিক মানিয়ে নিতে পারিনি। ফলে সাংবাদিকতা যেহেতু লেখালাখির খুব কাছাকাছি একটা পেশা এই জন্যই সাংবাদিকতায় এসেছি। এছাড়া ছোট গল্প লিখি নিয়মিত, আমার কিশোর উপন্যাস আছে বাজারে। এখন যেহেতু ক্রিকেট সাংবাদিকতা করি তাই এই সব ব্যাপারগুলো একটু সংকুচিত হয়ে এসেছে। এখন আমি ক্রিকেটেই লেখালেখি করি। এমনিতে লেখালেখি শুরু আমার কলেজ লাইফ থেকে। লিটল ম্যাগাজিন বের করতাম, ওখান থেকেই লেখালেখির শুরু।
এবারের বই মেলায় কয়টি বই প্রকাশ হচ্ছে আপনার?
দেবব্রত: এবারে বই মেলায় আমার ক্রিকেট নিয়ে রম্য লেখার একটি সংকলন বের হবে। এটার নাম ‘খেলা নয় ধুলা’। এর বাইরে আমি একটা কিশোর উপন্যাস লিখি নিয়মিত ‘হরিপদ টিম’। ওটার চার পর্বের একটা ভলিউম বের হবে এবার। এই তিনটা বই থাকছে বই মেলায়।
প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতিটা যদি একটু বলতেন?
দেবব্রত: প্রথম বই প্রকাশের স্মৃতি ছিল খুব রোমাঞ্চকর। ২০০৯ সালে হঠাৎ করেই বের হয়ে গেছিল বইটা। আমার প্রস্তুতিও ছিল না। আমার এক বড় ভাই প্রকাশক, ওনাকে এক আড্ডায় গল্পের প্লট বললাম। এই হরিপদ টিমের প্রথম বইটা। হঠাৎ বের হয়ে গেল, ১ ফেব্রুয়ারি বাজারে এসেছিল। তবে এটুকু বলতে পারি এর আগের দিন (৩১ জানুয়ারি), আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। বাজারে এসেছিল ২ বা ৩ ফেব্রুয়ারি। বইটা হাতে পাওয়ার জন্য ভাবছিলাম ঘুম থেকে উঠেই যাব; কিন্তু সে ঘুমটাই হয়নি সারারাত।
আমার শুধু ইচ্ছে করে...
দেবব্রত: জীবিকার জন্য যদি লেখালেখি করতে না হতো! তাহলে কতই না ভালো হতো। আমার শুধু মন চায়, এমন একটা অবস্থার মধ্যে বসবাস করি, যেখানে জীবনধারণের জন্য লেখালেখি করতে হবে না। এখনতো অনেক লিখি। চাকরির খাতিরে। পত্রিকায় অনেক লিখতে হয়। এসব জীবন ধারণের জন্য; কিন্তু এমন যদি হতো, এসবের কোন বালাই নেই। টাকার জন্য লিখতে হচ্ছে না। আমার ভালোলাগা নিয়ে লিখেই যাচ্ছি, একের পর এক বই বের করছি, তবে সেগুলো একটাও জীবিকার উদ্দেশ্যে না, কারণ আমি কখনওই জীবিকার জন্য লিখতে চাই না।
নিজের সম্পর্কে এমন কিছু বলুন, যা আপনার সতীর্থরা (ক্রীড়া সাংবাদিকরা) এখনও জানে না। যা শুনলে তারা আঁতকেও উঠতে পারে।
দেবব্রত: আমি বেশ নামকরা যাত্রা অভিনেতা ছিলাম। গ্রাজুয়েশন পর্যন্ত। সর্বশেষ যাত্রায় অভিনয় করেছি, যখন ঢাকায় চলে এসেছি, এরপর। ঢাকায় সাংবাদিকতায় দুই বছর পার হয়েও গেছে। তখন একবার বাড়িতে বেড়াতে গেলাম, গিয়ে যাত্রা দেখতে গিয়েছিলাম। ওখানেই দেখি একজন অভিনেতা আসেনি। তখন ওখানে আমাকে ধরা হলো অভিনয় করার জন্য। আমিতো সাধারণত খল চরিত্র করতাম। খল চরিত্রের জন্য জোর করে স্টেজে উঠিয়ে দেয়া হলো। সারারাত অভিনয় করতে হয়েছিল। আমিতো বাগেরহাটের ছেলে, এলাকায়, থানায় বা আশেপাশে লোকজন পছন্দ করে এমন যাত্রা অভিনেতা ছিলাম। এটা আমার সার্কেলের কেউ জানে না।
আরটি/আইএইচএস/এমএস