১২ বছরে রিয়াল মাদ্রিদে ১১ কোচ
অবশেষে স্প্যানিশ জায়ান্ট ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের নতুন ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ফরাসি তারকা জিনেদিন জিদানকে। মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্টিনো পেরেজ তার ১২ বছরের আমলে এই নিয়ে ১১ জন কোচ নিয়োগ দিলেন। গত এক যুগে সান্তিয়াগো বার্নাব্যু থেকে ছাঁটাই হওয়া ১০ কোচের সংক্ষিপ্ত বিবরণ জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
ভিসেন্তে দেল বস্ক: রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা কোচদের একজন ভিসেন্তে দেল বস্ক। স্পেন জাতীয় দলের বিশ্বকাপজয়ী বর্তমান কোচ ২০০০ ও ২০০২ সালে রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জেতান। এরপর ২০০১ ও ২০০৩ সালে লস ব্লাঙ্কোসদের লা লিগা শিরোপা এনে দেন। তবে তা সত্ত্বেও ২০০৩ সালে দেল বস্কের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করে তাকে পত্রপাঠ বিদায় দেন ফ্লোরেন্টিনো পেরেজ।
কার্লোস কুইরোজ: ২০০৩ সালের জুনে দেল বস্কের বিদায়ের পর পর্তুগিজ কোচ কার্লোস কুইরোজকে রিয়াল মাদ্রিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে বেশি দিন টিকতে পারেননি তিনি। জিনেদিন জিদানের রিয়াল মাদ্রিদ স্প্যানিশ লা লিগার চতুর্থ স্থানে নেমে যাওয়ায় এবং কোপা ডেল রে ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে লস ব্লাঙ্কোসরা বিদায় নেওয়ায় ২০০৪ সালের মে মাসেই সান্তিয়াগো বার্নাব্যু থেকে ছাঁটাই করা হয় কুইরোজকে।
হোসে অ্যান্টনিও কোমেকো: স্পেন জাতীয় দলের সাবেক এই কোচের রিয়াল মাদ্রিদের রোমাঞ্চকর অভিযান মাত্র চার মাস স্থায়ী হয়। ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরেই টানা দুই হারের ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেন কোমেকো।
ম্যারিয়ানো গার্সিয়া র্যা মোন: কোমেকার পরিবর্তে যখন র্যাইমোনকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোচ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় তখন রিয়াল মাদ্রিদ প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন তিনি ক্ষণস্থায়ী নন। তবে পেরেজের কথা মিথ্যা প্রমাণিত হতে খুব একটা সময় লাগেনি। টানা ব্যর্থতার কারণে মাত্র তিন মাসের মাথায়ই রিয়াল মাদ্রিদের ডাগআউট থেকে বিদায় নিতে হয় র্যা মোনকে।
ভেন্ডারলি লুক্সেমবার্গো: ২০০৪-০৫ মৌসুমের জন্য ব্রাজিলিয়ান কোচ লুক্সেমবার্গোকে রিয়াল মাদ্রিদের দায়িত্বে নিয়োগ দেন পেরেজ। রিয়ালের কিছুটা উন্নতিও হয়। লা লিগার দ্বিতীয় স্থানে থেকে মৌসুম শেষ করে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর দলটি। যে কারণে লুক্সেমবার্গোর সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করেন পেরেজ। তবে পরের মৌসুমে ফের ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী হয় রিয়াল। এতে বছর শেষ না হতেই বিদায় নিতে হয় এই ব্রাজিলিয়ানকে।
হুয়ান র্যানমোন লোপেজ: লুক্সেমবার্গোর পরিবর্তে মৌসুম শেষ করার জন্য হুয়ান র্যা মোনকে অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়। তার অধীনেই মৌসুম শেষ করে রিয়াল মাদ্রিদ। তবে মৌসুম শেষের সাথে তার চাকরিও শেষ হয়ে যায়।
ম্যানুয়েল পেল্লেগ্রিনি: ২০০৯ সালের জুনে দুই বছরের চুক্তিতে ম্যানুয়েল পেল্লেগ্রিনিকে সান্তিয়াগো বার্নাবুতে উড়িয়ে আনেন পেরেজ। শুরুটা মন্দ করেননি ম্যানচেস্টার সিটির বর্তমান কোচ। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও কোপা ডেল রে থেকে রিয়াল মাদ্রিদের বিদায়ের ফলে বেশ চাপের মুখে পড়েন পেল্লেগ্রিনি। বিশেষ করে কোপা ডেল রে’র শেষ ষোলতে স্প্যানিশ দ্বিতীয় সারির দল অ্যালকোরনের কাছে ৪-১ গোলে হেরে রিয়াল বিদায় নিলে ছাঁটাইয়ের মুখে পড়েন তিনি।
হোসে মরিনহো: স্পেনে বার্সেলোনার আধিপত্য খর্ব করতে ২০১০-১১ মৌসুমে স্বঘোষিত স্পেশাল ওয়ান হোসে মরিনহোকে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে উড়িয়ে আনেন ফ্লোরেন্টিনো পেরেজ। তিন বছরের মেয়াদে মাত্র একটি লা লিগা ও একটি কোপা ডেল রে শিরোপা জয় করে মরিনহোর রিয়াল। যে কারণে মরিনহোকে ছাঁটাই করেন পেরেজ।
কার্লো আনচেলত্তি: ২০১৩ সালের জুনে রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হিসেবে যোগদান করেন কার্লো আনচেলত্তি। ২০১৪ সালে মাদ্রিদকে স্বপ্নের লা ডেসিমা (দশম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা) জেতান আনচেলত্তি। এছাড়া রিয়ালকে স্প্যানিশ সুপার কাপ ও কোপা ডেল রে’র শিরোপা এনে দেন তিনি। তবে দুই বছরে রিয়ালকে স্প্যানিশ লা লিগার শিরোপা জেতাতে না পারায় ২০১৫ সালের ২৫`মে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে এই ইতালিয়ান কোচকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দেন পেরেজ।
রাফায়েল বেনিতেজ: অনেক আশা নিয়েই আনচেলত্তির জায়গায় রাফায়েল বেনিতেজকে রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হিসেবে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে নিয়ে আসেন পেরেজ। তবে বেশি দিন টিকতে পারলেন না তিনি। স্প্যানিশ লা লিগায় বার্সেলোনার কাছে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে রিয়ালের ব্যর্থতার শুরু।
এরপর ভিয়ারিয়াল, অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ ও সেভিয়ার কাছে হেরে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন বেনিতেজ। সর্বশেষ গত রোববার ভ্যালেন্সিয়ার সঙ্গে রিয়াল ২-২ গোলের ড্র নিয়ে বাড়ি ফিরলে সমালোচনা আরো তীব্র হতে থাকে। সোমবার তাই বেনিতেজকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দেন পেরেজ।
জিনেদিন জিদান: রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় তিনি। রিয়ালের হয়ে দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও দুটি লা লিগা শিরোপা জেতার স্বাদ পেয়েছেন। বলা হচ্ছে জিনেদিন জিদানের কথা। সোববার বেনিতেজকে বরখাস্ত করে জিদানকে রিয়ালের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, স্প্যানিশ লা লিগায় ১৮ ম্যাচ শেষে ৩৭ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। আর মাদ্রিদের সিনিয়র দলের কোচ হিসেবে আগামী শনিবারই অভিষেক হতে যাচ্ছে জিদানের। ওই দিন ঘরের মাঠে জিদানের রিয়াল দেপার্তিভো লা করুনাকে আতিথ্য দেবে।
এমআর