ক্রিকেটে স্বপ্নের চেয়েও দামি একটি বছর
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪। বাংলাদেশ ক্রিকেটে একটা নীরব বিপ্লব ঘটে গিয়েছিল ওইদিন। কেউ হয়তো তখন ভাবতেও পারেনি, কোন সাফল্যের বীজ বপন হতে যাচ্ছে দিনটিতে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিল দুই অধিনায়কের যুগে পদার্পন করবে। ওই দিনই টেস্ট নেতৃত্ব মুশফিকের কাছে রেখে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের নেতৃত্ব তুলে দেয়া হলো মাশরাফি বিন মর্তুজার কাঁধে। নেতৃত্ব ভাগ করতে গিয়ে কোন স্বপ্ন হয়তো দেখেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কর্মকর্তারা। একটা লক্ষ্য হয়তো তাদের সামনে ছিল।
কিন্তু, যে স্বপ্ন সম্ভবের বীজ রোপিত হয়েছিল সেদিন, তা কল্পনাতেও কখনও কেউ আনতে পারেনি। সেটা যে সত্যিই অকল্পনীয় এক ব্যাপার! বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আমূল পরিবর্তণ করে দেয়ার সেই বীজ অঙ্কুরিত হয়ে আজ এক মহিরুহ। স্বপ্নের চেয়েও দামি একটি বছর কাটিয়ে দিল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার স্বপ্ন যখন বাস্তবতায় রূপ পেয়ে গেলো, তারপরই সব যেন পানির মত সহজ হয়ে গেলো মাশরাফিদের কাছে। ১৬ বছর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ই নয় শুধু, তাদেরকে ধবলধোলাই, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকারমত প্রবল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে অকল্পনীয় সিরিজ জয়, সবই তো স্বপ্নের চেয়েও অনেক বেশি দামের প্রাপ্তি।
২০১৪ সালটা ছিল বেশ হতাশার। পুরো বছরই প্রায় প্রতিটি ম্যাচে একেবারে ধারপ্রান্তে গিয়েও জয়টা ‘সোনার হরিণ’ হয়ে রইল বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রোমী মানুষের কাছে। ভারতের তৃতীয় সারির একটি দলের কাছে হার ছিল খুবই লজ্জাজনক। তার চেয়েও বেশি লজ্জাজনক ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে হংকংয়ের মত দলের কাছে হেরে যাওয়া। যাদেরকে এক ফুৎকারে উড়িয়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখে বাংলাদেশ। তার আগে এশিয়া কাপে আফগানদের কাছে হার- বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়েই একপ্রকার হতাশা তৈরী হয়ে গিয়েছিল সবার মাছে। একের পর এক ম্যাচ, আর একের পর এক হতাশা। তবুও এ দেশের মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেয়নি সাকিব-মুশফিকদের ওপর থেকে। তাদের যেন বিশ্বাস ছিল, রাত যত গভীরই হোক, ভোর একসময় না এক সময় আসবেই। এ কারণেই, আন্তর্জাতিক ম্যাচ মানেই গ্যালারিজুড়ে দর্শক আর বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কোন না কো সাফল্যে গলা ছেড়ে সমর্থণ জানিয়ে যাওয়া- এসবই ছিল নিয়তিম চিত্র।
২০১৪ সালের শেষপ্রান্তে বাংলাদেশে এলো জিম্বাবুয়ে। তার আগেই সেপ্টেম্বরে নেতৃত্ব ভাগ করে দেয়া হলো। শুরুতেই টেস্ট সিরিজ। প্রত্যাশা অনুযায়ী বেশ ভালোই সফল হলো বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়েকে সিরিজ হারিয়েছে মুশফিকের দল। এরপর এলো ওয়ানডে সিরিজ। কঠিন এক পরীক্ষার মুখোমুখি মাশরাফি এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। যে চিন্তা ও উদ্দেশ্যে থেকে নেতৃত্ব ভাগ করা, সফল হয় কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষায় যেন পুরো বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে প্রথম ওয়ানডেতে ৮৭ রানের জয় দিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরু। এরপর বাকি চারটিতেও দাপটের সঙ্গে মাশরাফিদের জয়। ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ। স্বপ্নের যাত্রা শুরু তখনই। বদলে যাওয়া বাংলাদেশের সূচনাটা এনে দিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওই সিরিজটাই। এরপর শুধুই এগিয়ে চলা।
জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর ফেব্রুয়ারি-মার্চে এলো অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপ। বাউন্সি উইকেটে কেমন করে বাংলাদেশ- এটা ছিল সবচেয়ে চিন্তার বিষয়। তবুও ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ মাশরাফি শুনিয়ে গেলেন আশারবানী। কোয়ার্টার ফাইনালের স্বপ্ন নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হলো বিশ্বকাপ মিশন। আফগানিস্তানকে ১০৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে সেই স্বপ্নপূরণের যাত্রা শুরু করলো বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে গেলে ভাগাভাগি করে একটি পয়েন্ট যোগ হলো বাংলাদেশের ঝুলিতে। পরের ম্যাচে শ্রীলংকার কাছে হেরে গেলেও স্কটল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের সম্ভাবনা জোরালো করে তোলে মাশরাফির দল।
কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পথে তখন বড় দুটি বাধা ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড। একটি বাধা পেরোতে পারলেই কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ। মাশরাফিরা যেন শেষ ম্যাচের জন্য আর অপেক্ষা করতে নারাজ। অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ড বধ করে কোয়ার্টার ফাইনালের স্বপ্নটা এক ম্যাচ হাতে রেখেই পূরণ করে ফেলল টাইগার বাহিনী। ইংলিশদের জাত্যাভিমান ধুলায় মিশিয়ে মাশরাফিরা জয় তুলে নিয়েছিল ১৫ রানে। ওই ম্যাচের শেষ ওভারে রুবেলের সেই দুটি ইয়র্কার এখনও এদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে ভাসে। যে দুটি ইয়র্কারে স্ট্যাম্প উড়িয়ে দিয়েছিলেন জেমস এন্ডারসন আর স্টুয়ার্ট ব্রডের। বিশ্বকাপ থেকে দেশে ফেরার পর বিসিবির সংবর্ধনায় বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন স্বীকার করেছিলেন, ‘রুবেলের ওই দুটি ডেলিভারি আমার সারাজীবন চোখে ভাসবে।’
গ্রুপের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারলেও বেশ লড়াই করেছিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডেরমত দলের বিপক্ষে মাহমুদুল্লা রিয়াদের ব্যাক-টু ব্যাক সেঞ্চুরি বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশের অন্যতম গৌরব হিসেবেই দেখা দিয়েছিল। মেলবোর্নে কোয়ার্টার ফাইনালটি ছিল বেশ বিতর্কিত। বিতর্কগুলো না হলে হয়তো সেমিফাইনালও খেলতে পারতো বাংলাদেশ। সেটা না পারলেও মাশরাফিরা যে বিশ্বক্রিকেটে ‘এক আগমনী পরাশক্তি’- সেটা ভালোভাবেই জানান দিয়ে আসতে পেরেছিল বিশ্বকাপে।
গৌরবের পথে চলতে গেলে কোন এক জায়গায় থেমে থাকা যায় না। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সেটা ভালোভাবেই মর্মে ধারণ করেছিল। সে কারণেই সম্ভবত বিশ্বকাপের পর যখন পাকিস্তান আসবে এ দেশে সিরিজ খেলার জন্য, তখন সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, ‘আমাদের সামনে এবারই সবচেয়ে বড় সুযোগ পাকিস্তানকে হারানোর।’ কথাটা শুনে অনেকেই হেসেছিলেন। কেউ কেউ একে ‘অত্যুক্তি’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছিলেন; কিন্তু সাকিবের ওই কথাটাই যে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতিধ্বনী, সেটা তখনও হয়তো সমালোচকরা বুঝে উঠতে পারেনি।
পেরেছে, পাকিস্তান বাংলাদেশে খেলতে আসার পর। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে সেই ঐতিহাসিক জয়টার পর কেটে গেছে একে একে ১৬টি বছর। পাকিস্তানের বিপক্ষে আর জয় পাওয়া হয়ে ওঠেনি টাইগারদের। টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির পর প্রত্যেকটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষেই জয় ছিল বাংলাদেশের, শুধুমাত্র পাকিস্তানছাড়া। অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি উপস্থিত হয়ে গেলো। ১৭ এপ্রিল শুরু হলো সিরিজ। ৭৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে পাকিস্তানিদের গর্ব চূর্ণ করে জয়ের সোপান রচনা করলো বাংলাদেশ। সিরিজের বাকি দুই ম্যাচেও বাংলাদেশের জয়। অথ্যাৎ হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় পাকিস্তানকে ডোবালো মাশরাফিরা। এরপর একমাত্র টি২০ ম্যাচেও দাপুটে জয় অব্যাহত থাকলো বাংলাদেশের।
টেস্টে পাকিস্তান অনেক পরিণত একটি দল। ২০১৫ সালে তারা র্যাংকিংয়ে একবার দ্বিতীয় স্থানেও উঠে এসেছিল। মিসবাহ-ইউনিস খানদের মত ক্রিকেটাররা যে দলে থাকেন, তাদের বিপক্ষে টেস্টে ড্র করাও মানে বাংলাদেশের জয়। ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজের ধারাবাহিকতা টেস্টেও ধরে রাখলো মুশফিকুর রহিমরা। খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে দাপট দেখিয়েই টেস্ট ড্র করলে টিম মুশফিকুর। শুধু কী ড্র, ওই ম্যাচে যে মহাকাব্য রচনা করেছিলেন তামিম ইকবাল আর ইমরুল কায়েস। টেস্টের ১৩৮ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় ইনিংসের ওপেনিং জুটিতে তারা দু’জন গড়েছিলেন ৩১২ রানের জুটি। সারা বছরে বাংলাদেশের অর্জনের মাহাত্ম্য যেন কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিল এই রেকর্ড।
পাকিস্তানের বিপক্ষে টি২০ ম্যাচটিতেই বাংলাদেশের ক্রিকেটাকাশে উদিত হলো আরও একটি উজ্জ্বল তারকা। এতটাই যে, সেই তারকার আলোর রোশনাইতে এখনই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে বিশ্ব ক্রিকেট। সেই তারাটির নাম, মুস্তাফিজ। সাৎক্ষীরার প্রত্যন্ত পাড়া-গাঁ থেকে উঠে আসা হালকা-পাতলা গড়নের ২০ বছর বয়সী এই তরুণ যে বিশ্ব ক্রিকেটে হইচই ফেলে দেবেন, তখন কে ভেবেছিল! যদিও অভিষেকেই শহিদ আফ্রিদিরমত টি-টোয়েন্টির বিশ্বসেরা ক্রিকেটারকে ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
এরপর এলো ভারত। পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার কারণে এমনিতেই কাঁপছিল তারা। তারওপর, বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের তিক্ততা মহেন্দ্র সিং ধোনির দলকে নৈতিকভাবেই দুর্বল করে রেখেছিল। পরিস্থিতির উত্তাপ পড়লো ওয়ানডে সিরিজে। প্রথম ম্যাচেই মুস্তাফিজকে কাঁধের ধাক্কায় কিছুক্ষণের জন্য মাঠের বাইরে পাঠিয়েছিলেন ধোনি। এরপর ফিরে এসে পুরো ভারতকেই ম্যাচের বাইরে ঠেলে দিলেন এই তরুণ পেসার। অভিষেক ওয়ানডেতেই নিলেন ৫ উইকেট। তার অফ-কার্টার, স্লোয়ারে দিকভ্রান্ত হযে গেলো ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপ। একই সঙ্গে চার পেসার নিয়ে একাদশ সাজিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ যে নিজেদের অনেকদুর এগিয়ে নিয়ে গেছে, তার আরও একটি প্রমাণ দিলেন মাশরাফি।
দ্বিতীয় ম্যাচেও মুস্তাফিজে দিশেহারা ভারত। একাই ৬ উইকেট তুলে নিলেন বাঁ-হাতি এ পেসার। গড়ে ফেললেন বিশ্বরেকর্ড। অভিষেকেই পরপর দুই ম্যাচে ১১ উইকেট তুলে নিয়ে। শেষ ম্যাচে এসে স্বান্তনার জয় নিয়ে দেশে যেতে পেরেছিল ভারতীয়রা।
পাকিস্তান-ভারতের বিপক্ষে সাফল্য যেন তেজি ঘোড়ায় পরিণত করলো বাংলাদেশ দলকে। দক্ষিণ আফ্রিকার মত পরাশক্তিকেও থোড়াই কেয়ার করার সাহস বাংলাদেশ অর্জণ করে ফেলেছে তখনই। এবি ডি ভিলিয়ার্স আর হাশিম আমলারা বাংলাদেশে এসে টি২০ সিরিজ আর ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচটি দাপটের সঙ্গেই জিতলো। মাশরাফিরা তখন মনে করলো, দেয়ালে তো পিঠ ঠেকে গেছে। এই সিরিজে যদি সফল না হওয়া যায়, তাহলে এতদিনের সাফল্য সবই মিথ্যা হয়ে যাবে। এ চিন্তা থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় টাইগারদের মনে। সঙ্গে মাশরাফির যাদুকরি নেতৃত্ব তো ছিলই।
সুতরাং, টানা দুই ওয়ানডেতে হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও সিরিজ জিতে গেলো বাংলাদেশ। মুস্তাফিজ নিজের হাতের ক্যারিশমা দেখালেন প্রোটিয়াদের বিপক্ষেও। তাকে মোকাবেলা করতে হলে ব্যাটসম্যানদের যেন নতুন করে ব্যাটিং শিখে আসতে হবে! তাতেও যে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, ওভারের প্রতিটি বলই যে ভিন্ন ভিন্নভাবে করার ক্ষমতা রাখেন তিনি। শুধু ওয়ানডে কেন, টেস্ট অভিষেকেও দুরন্ত মুস্তাফিজ। এক ওভারেই তুলে নিলেন তিন উইকেট (৪ বলের ব্যবধানে)। স্ট্যাম্প উড়িয়ে দিয়েছিলেন হাশিম আমলারমত ব্যাটসম্যানের।
নিরাপত্তার অজুহাতে দু’ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে এলো না অস্ট্রেলিয়া। না হয় অসিদের বিপক্ষেও নিশ্চিত মুস্তাফিজের স্লোয়ার-কার্টারে মুগ্ধ হতো এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। তবে সে আক্ষেপ ঘুচলো এসে নভেম্বরে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন তিনি। তিন ম্যাচে নিলেন ৮ উইকেট। এখানেও এক ম্যাচে ৫ উইকেট পেলেন মুস্তাফিজ। অবধারিতভাবেই বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করলো জিম্বাবুয়েকে। একই সঙ্গে দেশের মাটিতে টানা ৫টি সিরিজ জয়ের রেকর্ডও গড়লো বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সিরিজেই বাংলাদেশের উন্নতির সর্বোচ্চ গ্রাফটা দেখা গেলো। তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচের ৪৩তম ওভার। ৫ উইকেট পেয়ে গেলেন মুস্তাফিজ। ৯ উইকেট পড়ে গেছে প্রতিপক্ষের। আর একটিমাত্র উইকেট পড়লেই হোয়াইটওয়াশ জিম্বাবুয়ে। বল করছেন মুস্তাফিজই। হঠাৎ নাসির হোসেন চিৎকার করে ওঠেন, ‘আয় সবাই স্লিপে দাঁড়াই।’ যেই বলা, সঙ্গে সঙ্গে মাশরাফিও সাজিয়ে ফেললেন অচিন্তনীয় সেই ফিল্ডিং। পয়েন্ট থেকে উইকেটরক্ষক। আট ফিল্ডারকে দাঁড় করিয়ে দিলেন পাশাপাশি। উইকেটরক্ষকসহ ৯জন। প্রেস বক্সেই আলোচনা শুরু হয়ে গেলো, এমন আগ্রাসী ফিল্ডিং সাজানোর সাহস কোথায় পেলেন মাশরাফি! ক্রিকেট আগ্রাসনের দৃশ্যপটে নিজেদের মেলে ধরে বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা ওইদিন প্রমাণ করে দিতে চাইলেন, নতুন দিনটা চলে এসেছে সত্যি সত্যিই।
মাশরাফির যাদুকরি নেতৃত্বে স্বপ্নের মত একটি বছর শেষ করলো বাংলাদেশের ক্রিকেট। তবে স্বীকৃতিটা সম্ভবত তখনও বাকি ছিল। ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক টি২০ লিগ বিপিএল নিয়ে যখন ব্যাস্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা, তখনই এলো খবরটা। আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন মুস্তাফিজ। এই প্রথম আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে একাদশে ঠাঁই পেলো কোন বাংলাদেশি। এমন সাফল্যকে কোনো নিক্তি দিয়ে মাপা যায় না। শুধু অনুভব করা যায়। মাশরাফির সঙ্গে সূর মিলিয়ে বলতে হয়, ‘এটা পুরো বাংলাদেশের জন্যই গর্বের।’
আইএইচএস/আরআইপি