ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

ফিফার জন্য লড়াই করবেন ব্ল্যাটার

প্রকাশিত: ০১:৫২ পিএম, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫

ফিফার এথিক্স কমিটি কর্তৃক আট বছরের নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার পর তাৎক্ষনিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করেন সেপ ব্ল্যাটার। সেখানে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘নিজের জন্য, একই সঙ্গে ফিফার জন্য লড়াই করবো আমি।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘দ্রুতই আমি ফিরবো।’

১৯৯৮ সাল থেকে ১৭ বছর ফিফা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন সেপ ব্ল্যাটার। এক সময় তো তাকে জাতিসংঘের মহাসচিবের চেয়েও ক্ষমতাধর ভাবা হতো। কারণ, জাতিসংঘের চেয়ে ফিফার সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা বেশি। এহেন ক্ষমতাধর ব্যক্তিই কি না মাত্র কয়েকমাসের মধ্যে এতটা নিঃস্ব হয়ে যাবেন, কে ভাবতে পেরেছিল?

শেষ পর্যন্ত তাকেই ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করলো তার হাতেই গড়া ফিফার এথিক্স কমিটি। একই সঙ্গে সমান মেয়াদের জন্য নিষিদ্ধ হলেন উয়েফা প্রেসিডেন্ট মিশেল প্লাতিনি। ফুটবল বিশ্বে এই দু’জনই ছিলেন মাত্র কিছুদিন আগেও একচ্ছত্র অধিপতি। অথচ এখন তারাই কি না আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতে চলেছেন।

আট বছরের নিষেধাজ্ঞার শাস্তি পাওয়ার পর ব্ল্যাটার সংবাদ সম্মেলনে জানান, তিনি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব আর্বিট্রেশন ফর স্পোর্টসে (সিএএস) এবং সুইস কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করবেন। নিষেধাজ্ঞার শাস্তিকে তার প্রতি একটা ‘ঘুষি’ হিসেবেই অভিহিত করলেন ব্ল্যাটার।

মিশেল প্লাতিনি এবং সেপ ব্ল্যাটার দু’জনকেই ২০ লাখ ডলার নয়-ছয় করার দায়ে এই শাস্তি দিল ফিফার এথিক্স কমিটি। শুধু তাই নয়, সুইজারল্যান্ড কর্তৃপক্ষ কর্তৃক চলমান দুর্নীতির বিপক্ষে তদন্তের অংশও বটে এটা। নিষেধাজ্ঞার শাস্তি ঘোষিত হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই জুরিখে সংবাদ সম্মেলন করেন ব্ল্যাটার। সেখানে তিনি নিজেকে আবারও নির্দোষ বলে দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ব্ল্যাটার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়াত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার উদাহরণ টেনে আনেন আবারও। যিনি ২০১০ বিশ্বকাপ প্রচারে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেছিলেন। ব্ল্যাটার বলেন, ‘এমন মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা উচিৎ সবারই।’

সংবাদ সম্মেলনে ব্ল্যাটার বলেন, ‘আমি সত্যিকারার্থেই দুঃখিত। আমি দুঃখিত। কারণ, আক্ষরিক অর্থেই একটা ঘূষি খেয়েছি আমি। আমি আরও দুঃখিত যে, ফিফা প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থাতেই আমি এই ঘূষিটি খেলাম। ফুটবলের জন্যই আমি সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’

Blatter-platini
নিজের আবেগ ধরে রাখতে না পেরে ব্ল্যাটার আরও বলেন, ‘আমি দুঃখ প্রকাশ করছি ফিফার ৪০০’র বেশি সদস্যের পক্ষ থেকে। আমি দুঃখিত। আমি দুঃখিত, কারণ এই বিশ্বে একজন মানবিকতাবোধ সম্পন্ন ব্যাক্তি হিসেবেই আমি বিবেচিত হয়ে থাকবো সব সময়। ফিফার জন্যই আজ আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। সর্বশেষ আমি নিজের জন্যই দুঃখ প্রকাশ করছি যে, এই বিশ্বে এখন আমি কিভাবে মূল্যায়িত হচ্ছি তা দেখে।’

২০১১ সালে প্লাতিনিকে দেয়া অর্থের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন ব্ল্যাটার। তিনি বলেন, ৯ বছর পর আমার জন্য সে একটা কাজ সম্পন্ন করেছিল। যেটা ছিল জেন্টলম্যান এগ্রিমেন্ট (ব্যাক্তিগত চুক্তি)। মৌখিক এই চুক্তির বিনিময়ে যে কোন সময় আমরা একে অপরকে অর্থ পরিশোধের বিষয়টা উল্লেখ ছিল।

ব্ল্যাটার এবং প্লাতিনি দু’জনই স্মরণ করিয়ে দেন যে, তারা ওই চুক্তির বিষয়ে কোন লিখিত প্রমাণ রাখেননি। যে কারণে এথিক্স কমিটি মনে করছে যে, এটা লিখিত থাকা প্রয়োজন ছিল। যেহেতু লিখিত নেই, সে কারণে এখানে কোন অনিয়ম করা হয়েছে নিশ্চয়। এ কারণেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে এথিক্স কমিটি।

ব্ল্যাটার বিষয়টা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, ‘আমি একমত পোষণ করছি তাদের সঙ্গে। তবে এটা সম্পূর্ণ প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক ডিপার্টমেন্টের বিষয়। তারাই এ বিষয়টা দেখভাল করবেন। এথিক্স কমিটির নাক গলানোর এখানে কিছুই ছিল না।’

ব্ল্যাটার আরও বলেন, ‘আপনারা আমাকে একজন আশাবাদী মানুষ ভাবতে পারেন। আমরা বিশ্বাস করি, মানুষকে বোঝানোর ক্ষমতা আমাদের আছে। মিস্টার একার্ট (হ্যান্স জোয়াকিম একার্ট, এথিক্স কমিটির চেম্বার জর্জ) হয়তো ওই চেয়ারে বসে সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন। কিন্তু আর্থিক বিনিময়ের চুক্তিটা হয়েছিল ফিফা প্রেসিডেন্ট এবং মিশেল প্লাতিনির সঙ্গে। যে বিষয়ে এই চুক্তিটা হয়েছিল, তা এখনও চলমান। আমরা জানি যে, আমরা নির্দোষ। কারণ, আামরা ব্যাক্তিগত বিষয়েই চুক্তি করেছিলাম। আমি খুবই অবাক হয়েছি যে, এথিক্স কমিটি চুক্তির বর্ধিত বিষয়টি দেখলোই না। না দেখেই রায় দিয়ে দিল।’

নিষেধাজ্ঞার শাস্তি তো চলেই এলো। এখন কী করবেন ব্ল্যাটার? তিনি বলেন, ‘আমি লড়াই করবো। নিজের জন্য এবং ফিফার জন্য। কেন আমি আট বছর বহিস্কার হবো? এটা তো কোনভাবেই সম্ভব না। আমার আইনজীবী ইতিমধ্যে এথিক্স কমিটির কাছে জানতে চেয়েছে, কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভূল সেটা বলার জন্য। আমি খেলাধুলায় ন্যায়-নীতি নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে চাই।’

ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব আর্বিট্রেশন ফর স্পোর্টসে (সিএএস) যাওয়ার কথা জানান ব্ল্যাটার। তিনি বলেন, ‘খুব দ্রুতই আমরা সিএএসে যাবো। এমনকি আমরা সুইস কর্তৃপক্ষের কাছেও যাবো ন্যায় বিচারের আশায়।’

আইএইচএস/আরআইপি

আরও পড়ুন