সাফ শিরোপায় চোখ বাংলাদেশের
সংবাদ সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা দুপুর ১২ টায়। বাফুফে থেকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সময়সূচি জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। সময়মত যে কোন অনুষ্ঠান বাফুফে শুরু করতে পারে না, এটা যেন জানা সবার। এ কারণে, অনেকেই একটু হেলে-দুলে এলো সংবাদ সম্মেলন কক্ষে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের প্রায় আধাঘন্টা পর সংবাদ সম্মেলন কক্ষে এলেন কর্মকর্তারা। কিন্তু কোচ মারুফুল হক এবং অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম কই? জাতীয় দল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ জানালেন, বিকেএসপি থেকে আসার পথে জ্যামে পড়েছে, তাই তাদের আসতে অনেক বিলম্ব হবে। কতক্ষণ? অন্তত দেড় থেকে দুই ঘণ্টা।
আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে কাজী নাবিল আহমেদ, ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবুরা চলে গেলেন। সাংবাদিকরাও অগত্যা অপেক্ষায় রইলেন। কারণ, যে উদ্দেশ্যে সংবাদ সম্মেলন, সেই সাফে অংশ নিতে যাওয়া কোচ এবং অধিনায়ক না এলে, কথা না বললেন- নিউজ হবে কি করে! শেষ পর্যন্ত এলেন কোচ এবং অধিনায়ক। দুপুর সোয়া ২টার দিকে।
সংবাদ সম্মেলনে চিরাচরিত কথাই বলে গেলেন কোচ মারুফুল হক এবং অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম। দু’জনই বললেন, ‘এবার আমাদের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়নশিপ।’ কিসের ভিত্তিতে চ্যাম্পিয়নশিপের আশা করছেন? কোচ মারুফুল হক জানালেন, ‘এবার আমরা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। দল নিয়ে গত ১৮-২০দিন যেভাবে কাজ করেছি, যেভাবে অনুশীলন করিয়েছি- তাতে আমার আত্মবিশ্বাস এবার আর খালি হাতে ফিরে আসবে না বাংলাদেশ ফুটবল দল।’
কোচ মারুফুল হকের যুক্তি- ‘সাফ অঞ্চলের দেশগুলো কেমন ফুটবল খেলে তা আমাদের সবারই জানা। তাদের স্ট্যান্ডার্ড, তাদের শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। তাছাড়া প্রতিপক্ষ দলগুলো নিয়ে আমরা অনেক বিশ্লেষণ করেছি। আফগানিস্তান, মালদ্বীপ এবং ভূটানের খেলার ভিডিও রিচার্স করেছি। বেশ কয়েকটা সেশন কাটিয়েছি আমরা তাদের খেলা বিশ্লেষণ করা নিয়ে। তাদের দুর্বলতাগুলো বের করার চেষ্টা করেছি। যেগুরো বের হয়েছে, আমরা সেগুলোতেই আঘাত করার চেষ্টা করবো। তবেই হয়তো আমাদের সাফল্য আসবে।’
‘সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশি’- বাংলাদেশের কাছে বিশ্বকাপের মত। এ দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ লক্ষ্যই থাকে সাফ জয় করা। কিন্তু গত কয়েকটি সাফেই বাংলাদেশ ফিরেছে খালি হাতে। প্রতিবারই খেলতে যাওয়ার সময় প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায়, এবার চ্যাম্পিয়ন হয়েই ফিরবো। দ্বিতীয় হবো না। ধারাবাহিকতা এবারও থাকলো; কিন্তু ২৩ ডিসেম্বর থেকে ভারতের ত্রিবান্দ্রামে শুরু হতে যাওয়া আরও একটি আসরে গ্রুপ পর্বেই চোখ রাঙাচ্ছে আফগানিস্তান ও মালদ্বীপ। তারপরেও অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম এবং কোচ মারুফুল হক চ্যাম্পিয়নশিপ ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারছেন না।
সাফে বাংলাদেশের মিশন অবশ্য শুরু হবে ২৪ ডিসেম্বর থেকে। প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ গতবারের চ্যাম্পিয়ন আফগানিস্তান। ২৬ ও ২৮ ডিসেম্বর বি গ্রুপের পরবর্তী ম্যাচে বাংলাদেশ যথাক্রমে মোকাবেলা করবে মালদ্বীপ ও ভুটানের। এ লক্ষ্যেই আগামীকাল রোববার সকাল দশটায় ভারতের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল।
কোচ মারুফুল হক জানালেন, খেলোয়াড়রা যদি সামর্থ্যের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মাঠে দিতে পারে, তাহলে সাফল্য আসবেই। প্রায় ২০দিন আগে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি আমি। তখন শুরুতেই সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ জেতার কথা বলেছিলাম। এখনও লক্ষ্যটা তেমনি আছে। গেল ১৮টি দিনে বিকেএসপিতে আমরা ৩৮ সেশনে অনুশীলন করেছি। সবাই খুব কষ্ট করেছে। চেষ্টা করেছে নিজেদের উজাড় করে দিতে। শেষ দিকে নেপালের সঙ্গে একটি প্রীতি ম্যাচও খেলেছি। ওই ম্যাচে জিতেছি। তারপরও ম্যাচটিতে করা ভুল-ত্রুটি সংশোধনের কাজ চলছে। সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যেই খেলব আমরা’।
প্রতিপকষ আফগানিস্তান সম্পর্কে মারুফুল হক বলেন, ‘হ্যাঁ, প্রতিপক্ষ শক্তিশালী। আমরা তাদের বিপক্ষে জিতেই প্রতিযোগিতা শুরু করতে চাই। তাদের শক্তি-দুর্বলতা নিয়ে আমরা কাজ করেছি। এই ম্যাচটা জিতলেই শিরোপা জয়ের পথে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যাবে। এর সুফল পাব পরের ম্যাচগুলোতেও। দ্বিতীয় ম্যাচে মালদ্বীপকে হারানোও সম্ভব। আর ভুটানকে খাটো করে দেখছি না।’
সাফে বাংলাদেশের মূল দুর্বলতা কী? এ প্রসঙ্গে কোচ বলেন, ‘সমস্যা একটি জায়গায়, তা হলো মানসিকতা। জয়ের জন্য মানসিকতা পরিবর্তনের দরকার। সেই চেষ্টাও করে যাচ্ছি’। নিজে কোন চাপে রয়েছেন কি না জানতে চাইলে, মারুফুল দৃঢ় আত্ববিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, ‘চাপ নেই ততটা। আমি চেষ্টা করব নিজের সর্বোচ্চ মেধা ও শ্রম দিতে। এই টুর্নামেন্টটা বাংলাদেশের জন্য যাতে স্মরণীয় হয়, সেই চেষ্টাই করে যাব’।
কোচের কণ্ঠ প্রতিধ্বন্তি হলো অধিনায়ক মামুনুলের কথায়ও। তিনি বলেন, ‘গেল ১৮ দিন আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি। খেলোয়াড়রা শারিরীক ও মানসিকভাবে ফিট রয়েছে। আমরা কোচের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ভালো করার। সবচেয়ে বড় কথা আমরা শৃংখলাবদ্ধ থাকব। লক্ষ্য একটাই চ্যাম্পিয়ন হওয়া’।
গত আসরের তিক্ত স্মৃতি নিয়ে মামুনুল বলেন, ‘গত বারে দুটি ম্যাচেই শেষ মুহূর্তে গোল হজম করেছিলাম আমরা। দলে বেশকজন ইনজুরিতে আক্রান্ত ছিল। ফলে সেরা একাদশও ভালোমতো হয়নি। তবে এবার আশা করি তা হবে না। অনুশীলনে আমরা কোচকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য একটাই ভালো খেলে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করা’।
দল সেমিতে গেলে কোন পুরস্কার থাকছে কি না। কিংবা ফাইনালে গেলে বা শিরোপা জয় করলে। শুরুতে বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন বাফুফের সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দল সেমিফাইনালে গেলে অবশ্যই ঘোষণা আসবে। ফাইনালে গেলে বা শিরোপা জিতলে আরও বড় ঘোষণা। চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে, খেলোয়াড়রা যা চাবে তাই পাবে’।
তবে তার আগে মাঠের খেলায় প্রমাণ করতে হবে মামুনুলদের। নতুন কোচ সঙ্গে অভিজ্ঞ-তারুণ্যের মিশিলে ২০ জনের টিম স্কোয়াড। আফগান বধ দিয়ে শুরু হোক মিশন। এরপর চলুক জয়ের ধারা। ৩ জানুয়ারী ত্রিভাদ্রাম স্টেডিয়ামে শিরোপা উৎসবে মাতবে মামুনুল, রনি, হেমন্ত, জামালরা। এমন প্রত্যাশা সবাই করতেই পারে।
আইএইচএস/আরআইপি