করোনাকালেও থেমে নেই চার-ছক্কার উদ্দীপনা
করোনাভাইরাস পৃথিবীর সবকিছু থমকে দিতে পারলেও মানব জীবনের অনেক বড় একটি অনুসঙ্গকে কিন্তু বরং বেশ উৎসাহিতই করে তুলেছে। সেটা হচ্ছে প্রযুক্তির উৎকর্ষতা। করোনা মহামারির সময় ঘরে বসে মানুষ এক ক্লিকেই অর্ডার পৌঁছে দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।
করোনার কারণে বৈশ্বিক খেলাধুলায় শুরুতে বড় একটি ধাক্কা লেগেছিল। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধীরে ধীরে খেলাধুলা মাঠে গড়ালেও ‘খেলার প্রাণ’ দর্শকদের জন্য মাঠে বসে খেলা দেখা বন্ধ। মানুষ ঘরে বসেই মাঠের খেলা দেখা শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে সমর্থকদের কিছুটা হলেও বিনোদনের খোরাক যোগাচ্ছে অনলাইনে খেলা দেখা। টিভিতেও দেখানো হচ্ছে।
এসব কিছু মাথায় রেখেই অনলাইন কল এবং মেসেজিং ফ্লাটফরম ভাইবার খেলা দেখার দর্শকদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা তৈরি করতে পারে, তেমন ফিচারগুলো সংযুক্ত করার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে তারা। প্রযুক্তিতে রাকুটেন ভাইবারের আগমণ এবং সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা কী কী হলো, ভবিষ্যতের লক্ষ্য এবং প্রত্যাশা নিয়ে জাগোনিউজ২৪.কম মুখোমুখি হয়েছিল ভাইভারের শুভেচ্ছা দূত শাহরিয়ার নাফিস এবং ভাইবারের পরিচালক ডেভিড টিএসইর।
জাগো নিউজের সঙ্গে তাদের কথা-বার্তা...
জাগো নিউজ : বৈশ্বিক মহামারি আপনার এবং বেশিরভাগ ক্রিকেট খেলোয়াড়দের জন্য কী কী চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ বয়ে এনেছে?
শাহরিয়ার নাফিস : আমাদের মতো খেলোয়াড়দের সব সময় সক্রিয় থাকা প্রয়োজন। আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে বোধ করি যখন কোনো টুর্নামেন্ট চলে এবং আমরা ম্যাচ খেলার, দেখার এবং আলোচনার পর্যাপ্ত সুযোগ পাই। বৈশ্বিক মহামারির কারণে যেহেতু বেশ কিছু সময় ধরে এগুলো থেকে আমরা দূরে আছি, তাই আমাদের উৎসাহ বজায় রাখা বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
তবে, ভালো দিক হচ্ছে খেলোয়াড়রা এখন তাদের ফিটনেসের দিকে অতিরিক্ত নজর দেয়ার অনেক সময় পাচ্ছে। আমি কিছু খেলোয়াড়দের তাদের জিমের সময় বাড়াতে দেখেছি এবং আমি মনে করি এটি একটি ভালো পদক্ষেপ। এছাড়াও, এখন আমরা আমাদের পুরনো ম্যাচগুলো দেখার এবং আমাদের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দুর্বলতাগুলো বিশ্লেষণের সুযোগ পাচ্ছি। আমরা আমাদের পরিবারকে আরও বেশি সময় দিতে পারছি, যা আমাদের পিচ থেকে এই সাময়িক ছুটির আরেকটি ভালো দিক।
জাগো নিউজ : বৈশ্বিক মহামারি বিশ্বের সকল খাতে কম-বেশি প্রভাব ফেলেছে। বিষয়টি ভাইবারকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে এবং একইসাথে এ সঙ্কট আপনার ও এ খাতের জন্য কী কী সুযোগ তৈরি করেছে?
ডেভিড : ভাইবার উদ্ভাবন এবং অভিযোজনের মাধ্যমে টিকে থাকায় বিশ্বাস করে। আমরা বুঝতে পেরেছি যে, আমাদের বিদ্যমান ব্যবহারকারীদের একটা বড় অংশ ঘরবন্দি থাকার কারণে ভার্চুয়াল যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে চলার লক্ষ্যে আমরা আমাদের কৌশলগুলো পর্যালোচনা করেছি এবং পণ্যের বিকাশ ত্বরান্বিত করেছি।
স্মার্ট বটসসহ অনেক নতুন ফিচার সফলতার সাথে আমাদের ব্যবহারকারীদের আরও বেশি আকৃষ্ট করেছে। যেমন আমরা সম্প্রতি ক্রিকেট বট এবং ক্রিকেট টকস ভাইবার কমিউনিটি চালু করেছি, যা ক্রিকেটপ্রেমী ব্যবহারকারীদের মাঝে মুহূর্তের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এভাবে আমরা ভাইবার ব্যবহারকারীদের উন্নত অভিজ্ঞতা প্রদানে বিভিন্ন সুযোগ অনুসন্ধান করছি।
জাগো নিউজ : আমরা ভাইবারকে ক্রিকেট সম্পর্কিত বিভিন্ন বট এবং কমিউনিটি চালু করতে দেখেছি। কোন বিষয়টি এসব ফিচার চালু করতে ভাইবারকে উৎসাহিত করেছে?
ডেভিড : যারা এই ২২-গজের খেলার বিশাল অনুরাগী, তাদের জন্য ক্রিকেট বটটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার ভাইবার ব্যবহারকারীরা ম্যাচের পূর্বাভাস, মন্তব্য এবং আরও অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে এই ফিচারটি উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়াও, ক্রিকেট বট ভক্তদের তাদের প্রিয় তারকা ক্রিকেটারদের আরও সান্নিধ্যে নিয়ে আসে।
কারণ হাবিবুল বাশার ও শাহরিয়ার নাফিসের মতো সাবেক খেলোয়াড়রা তাদের অভিজ্ঞ মতামত প্রদানের মাধ্যমে এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হন। দুর্ভাগ্যবশত, ম্যাচ স্থগিত করা হয়েছে। তবে, ক্রিকেটপ্রেমী ভক্তদের বিনোদন দেওয়ার জন্য আমাদের কমিউনিটি রয়েছে, যেখানে তারা চিত্তাকর্ষক বিনোদনধর্মী কথোপকথন, পোস্ট ইত্যাদি দেখতে পারেন।
জাগো নিউজ : বর্তমান উন্নত ডিজিটাল যোগাযোগে পদ্ধতির মাধ্যমে ক্রিকেট খেলা উপভোগ করতে ভক্তরা নতুন কী সুবিধা পাচ্ছে বলে আপনি মনে করেন?
শাহরিয়ার নাফিস : ডিজিটাল প্রযুক্তি ভক্তদের খেলার মাঝে বিনোদনের নতুন বিভিন্ন দিক আবিষ্কার করতে সক্ষম করেছে, যা কয়েক দশক আগেও ছিল না। কমিউনিটি ভিত্তিক ম্যাচ-পূর্বাভাস, খেলার তথ্যের সুসংহত বিশ্লেষণ এবং আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ডিজিটাল যোগাযোগ পদ্ধতির মাধ্যমে উদ্ভূত হয়েছে।
এছাড়া, বিনোদনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলতে মিমস এবং এই জাতীয় হালকা ও বিনোদনধর্মী উপায় রয়েছে। আর যেহেতু এখন আমাদের কাছে ভাইবারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে, তাই সব মিলিয়ে আমি মনে করি যে ভক্তরা ম্যাচ আগের তুলনায় অনেক বেশি উপভোগ করতে পারছে। কোভিড প্রাদুর্ভাবের কারণে ম্যাচ বাতিল করা হলেও ক্রীড়া অনুরাগীরা ভাইবার কমিউনিটির সাথে এই উদ্দীপনা ধরে রাখতে পারবে।
জাগো নিউজ : ভাইবার এর আগে ‘ব্যাটেল অফ ক্রিকেট’ এর মতো একই রকম বট তৈরি করেছে। ব্যবহারকারী এবং ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছ থেকে ভাইবার কী ধরনের প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল?
ডেভিড: ভাইবার ব্যবহারকারীরা অত্যন্ত আগ্রহের সাথে ‘ব্যাটেল অব ক্রিকেট’ এর মতো ফিচারগুলোকে গ্রহণ করেছে। আমরা ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে বেশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। বিশ্বব্যাপী বা আঞ্চলিক লিডারবোর্ডে প্রথম স্থানে থাকা বটগুলো নিয়ে তারা খুবই উৎসাহী এবং প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাবসম্পন্ন।
যদিও কোভিড-১৯ এর সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব আবার অনেকগুলো ম্যাচ পিছিয়ে দিয়েছে, তবুও ভক্ত এবং ব্যবহারকারীরা নতুন ফিচারগুলো নিয়ে ব্যাপক আগ্রহী। ক্রিকেট অনুরাগীরা বট এবং কমিউনিটির সাথে কতটা জড়িত তা ভাইবার কমিউনিটিতে বেশ স্পষ্ট এবং তারা আবার ম্যাচ শুরু হওয়ার অপেক্ষায় আছে।
জাগো নিউজ : ‘ব্যাটেল অব ক্রিকেট’ বা এফসি বার্সেলোনা কমিউনিটির মতো ভাইবারের উদ্যোগগুলোর ভক্তদের সাথে তাদের পছন্দের খেলা বা দলের ইন্টার্যাকশনে পরিবর্তন আনার ক্ষমতা রয়েছে বলে মনে করেন কী?
শাহরিয়ার নাফিস : হ্যাঁ, অবশ্যই। আমরা অতীতে যেমনটি দেখেছি যে ভক্তদের উদযাপন বা ইন্টার্যাকশন অনেকগুলো বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। আমাদের লক্ষ্য সর্বদা ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা।
জাগো নিউজ : ভাইবার এফসি বার্সেলোনার অফিসিয়াল পার্টনার, যার ফলে প্ল্যাটফর্মটি বিজয়ী ভক্তদের অফিসিয়াল পণ্য দিয়ে পুরস্কৃত করছে। ক্রিকেটের মতো বিভিন্ন খেলার অন্য কোন দলের সাথে অংশীদারি করার ব্যাপারে আপনাদের কি কোন পরিকল্পনা রয়েছে?
ডেভিড : আমরা আমাদের ব্যবহারকারীদের যে ব্যাপক অংশগ্রহণ এবং চাহিদা দেখতে পাচ্ছি, আমরা সামনেই এমন আরও অংশীদারত্ব এবং উদ্যোগ গ্রহণ করবো বলে আশা করছি।
জাগো নিউজ : কোভিড-১৯ ডিজিটালাইজেশনের মাত্রা বৃদ্ধি করেছে এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রায় সকল ইন্ডাস্ট্রির জন্য অভাবনীয় সুযোগ সৃষ্টি করছে। উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এবং ডিজিটালাইজেশন ক্রীড়া শিল্পকে, বিশেষত ক্রিকেটকে কীভাবে রূপান্তর করতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
শাহরিয়ার নাফিস : যেহেতু ভক্তরা এবং খেলোয়াড়রা এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারছেন না, তাই স্বাভাবিকভাবেই ফ্যান ইন্টার্যাকশনের বিভিন্ন নতুন পদ্ধতি বের হবে, যেমন ভাইবার তাদের বিভিন্ন বট পরীক্ষা করে দেখেছে।
এখানে সুবিধা হচ্ছে, একবার প্রযুক্তিগত ফিচারগুলো ভক্তদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠলে আমরা নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে ফিরে যাওয়ার পরেও এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকতে পারে। আমি মনে করি এভাবেই ডিজিটাল ইন্টিগ্রেশন আরও বেশি বিনোদনধর্মী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্ভাবনার মাধ্যমে ক্রীড়া শিল্পের রূপান্তর ঘটাবে।
জাগো নিউজ : ক্রীড়া শিল্পে, বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্রিকেট খাতে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এবং ডিজিটালাইজেশনের সমন্বয় সাধন সহজ হবে বলে মনে করেন কী?
শাহরিয়ার নাফিস : শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের পাশাপাশি ভক্ত এবং অনুসারীদেরও পরিবর্তিত প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় প্রয়োজন। তবে, এখন আমরা যেহেতু জাতি হিসেবে দ্রুত ডিজিটালাইজেশনে জোর দিচ্ছি, তাই আমি মনে করি আমরা সাদরে গ্রহণ করলে নেপাল ও শ্রীলংকার পাশাপাশি বাংলাদেশের ক্রিকেট খাতও এই পরিবর্তনের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সুফল পাবে।
জাগো নিউজ : বৈশ্বিক মহামারী বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের ক্রিকেট ইন্ডাস্ট্রিতে কেমন পরিবর্তন আনবে বলে আপনি মনে করেন?
শাহরিয়ার নাফিস : এই বৈশ্বিক মহামারি আমাদের খেলোয়াড়দের মনে করিয়ে দিবে যে, ফলপ্রসূভাবে মাঠে সময় কাটানো কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, এখন তারা আগের চেয়ে বেশি ফিট থাকার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছে। সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় আসলে আয়োজকরা পরবর্তীতে আরও ভাল টুর্নামেন্টের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে পুনরায় চিন্তা করে দেখতে পারেন।
জাগো নিউজ : ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং ইন্ডাস্ট্রির জন্য কোভিড-১৯ পরবর্তী যুগ কেমন হবে বলে আপনি মনে করেন, আর ভাইবার মানুষের জীবনে কীভাবে আরও বেশি মাত্রা যোগ করার পরিকল্পনা করছে?
ডেভিড : কোভিড-১৯ পরবর্তী যুগ আমাদের ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থার সকল বৈশিষ্ট্যকে নতুন রূপ দান করবে। শীর্ষস্থানীয় সামাজিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে, ভাইবার রূপান্তরের এই যাত্রায় এগিয়ে থাকতে আগ্রহী। ভাইবার একটি মেটা অ্যাপে পরিণত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, যা লাইফস্টাইল সমাধানদাতা হিসেবে তার ব্যবহারকারীদের কল এবং মেসেজিংয়ের চেয়ে অনেক বেশি কিছু প্রদান করে।
বর্তমানে আমাদের কিছু ফিচার নিয়ে কাজ চলছে, যেগুলো ভাইবার ব্যবহারকারীদের জীবনযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগকরবে। ফিনটেক ইন্টিগ্রেশন, ই-ওয়ালেট, ই-ব্যাংকিং এবং অন্যান্য বিভিন্ন ই-বাণিজ্য বৈশিষ্ট্য শীঘ্রই মহামারী পরবর্তী বিশ্বে ব্যবহারকারীদের উন্নত অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করবে।
আইএইচএস/এএসএম