ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

অভিজ্ঞদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন নতুনরা

রফিকুল ইসলাম | প্রকাশিত: ০৪:৩৫ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০২১

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) পুরনো ভবনের নিচতলায় ছোট্ট কার্যালয় বাংলাদেশ তায়কোয়ানদো ফেডারেশনের। ২০০২ সালে সপ্তম বাংলাদেশ গেমসের আগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে কার্যালয়ের জন্য জায়গা চেয়েছিল ফেডারেশন। পুরনো মালপত্র রাখার একটি কক্ষ খালি করে তায়কোয়ানদোকে দিয়েছিল এনএসসি। ১৯ বছর ধরে তায়কোয়ানদোর ঠিকানা ওখানেই।

২০ বছরে ক্রীড়াঙ্গনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ফেডারেশন বেড়েছে, অ্যাসোসিয়েশন বেড়েছে, ভেন্যু বেড়েছে। সাফল্য না থাকলেও অনেক ফেডারেশন পেয়েছে রাজপ্রাসাদসম কার্যালয়, তায়কোয়ানদো পড়ে আছে সেখানেই। বদল হয়নি এসএ গেমস থেকে চারটি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে ৮০টির বেশি স্বর্ণ পদক এনে দেয়া খেলাটির। অথচ অনেক ফেডারেশন আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে কোনো পদক আনতে না পারলেও ফুলে-ফেঁপে হয়েছে কলাগাছ।

সর্বশেষ নেপাল এসএ গেমসে বাংলাদেশ যে ১৯ স্বর্ণপদক পেয়েছে সে তালিকায় আছে তায়কোয়ানদোও। ২০০৬ সালে শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত দশম এসএ গেমসে স্বর্ণ জিতেছিলেন মিজানুর রহমান, ২০১০ সালে ঢাকা এসএ গেমসে স্বর্ণ জিতেছিলেন শাম্মি আক্তার ও শারমিন আক্তার রুমি। সর্বশেষ এসএ গেমসে স্বর্ণ জিতেছেন দিপু চাকমা।

Taikoando

মিজানুর রহমান, দিপু চাকমা এবং শাম্মি-রুমিদের উত্তরসূরি হয়ে কারা আগামীতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পতাকা ওড়াবেন? বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ শেষ হওয়ার পর দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় খেলা তায়কোয়ানদো নিয়ে সেই অনুসন্ধান।

এসএ গেমসে স্বর্ণ পাওয়ার পর খেলা ছেড়ে দিয়েছেন শাম্মি আক্তার ও শারমিন আক্তার রুমি। সিনিয়র খেলোয়াড় ও এসএ গেমস থেকে প্রথম স্বর্ণ জেতা মিজানুর রহমান এবার বাংলাদেশ গেমসের পর ঘোষণা দিয়েছেন আর খেলবেন না। ফেডারেশনকে তাই নতুনদেরই তৈরি করতে হবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লড়াই করার জন্য।

যার হাত ধরে দেশে তায়কোয়ানদোর প্রতিষ্ঠা, প্রসার ও উন্নয়ন তিনি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম রানা। সদস্য সমাপ্ত বাংলাদেশ গেমসে কিছু নতুন খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সে উচ্ছ্বসিত রানা, ‘আমি প্রথমে বাংলাদেশ গেমস প্রসঙ্গে আসি। গেমসে জেলাগুলো খেলতে পেরে খুশি। আমরাও পেয়েছি বেশ কয়েকজন ভালো খেলোয়াড়- যারা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ পাওয়াদের কাঁপিয়ে দিয়েছেন। অনেকে পদক পাননি, তবে তারা আগামীতে ভালো করবেন।’

সর্বশেষ এসএ গেমসে স্বর্ণ পাওয়া দিপু চাকমা হয়তো পরের গেমসে ভালো নাও করতে পারে। তাই তো ফেডারেশনকে আরো খেলোয়াড় তৈরি করতে হবে। বিভিন্ন জেলা এক্ষেত্রে বড় সহযোগিতা করছে ফেডারেশনকে। স্বর্ণ জিততে না পারলেও ৯-১০ জন খেলোয়াড় অভিজ্ঞদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তে পেরেছেন। যারা আগামীতে হয়ে উঠতে পারে এ খেলাটির আশা-ভরসার জায়গা।

Taikoando

বাংলাদেশ গেমসে ২১০ জন ছেলে-মেয়ে অংশ নিয়েছেন তায়কোয়ানদোতে। এর মধ্যে জেলা পর্যায়ের যে খেলোয়াড়রা নতুন হিসেবে ভালো করেছেন তারা হলেন- রাজশাহীর আবদুর রহিম, রিপন মন্ডল, নাঈমুর রহমান নাঈম, সিরাজগঞ্জের ফয়সাল আহমেদ, আকাশ আহমেদ, সানিম আহমেদ, দিনাজপুরের রাজন হোসেন, গাজীপুরের রাকিবুল ইসলাম ও চট্টগ্রামের জান্নাতুল তামান্না তাবাসসুম।

এদের কেউই স্বর্ণ জেতেননি। কিন্তু অভিজ্ঞ ও সিনিয়রদের সঙ্গে লড়াই করে নিজেদের আগমনীবার্তা জানিয়ে দিয়েছেন তারা। আবদুর রহিম কোয়ার্টার ফাইনালে হেরেছেন স্বর্ণজয়ী বিজিবির মাসুদের কাছে, রিপন মন্ডল কোয়ার্টারে হেরেছে সর্বশেষ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের এক স্বর্ণজয়ীর কাছে, নাঈম কোয়ার্টারে হেরেছেন গতবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণজয়ী আর্মির উজ্জ্বলের কাছে, তাবাসসুম সেমিফাইনালে আর্মির মার্জিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে হেরেছেন আনসারের মাইনু মারমার কাছে।

ফয়সাল গতবারের ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন আরমানকে কোয়ার্টারে হারিয়ে সেমিফাইনালে হেরেছেন স্বর্ণজয়ী এনায়েতের কাছে। রাকিবুল নকাউট পর্বে পুলিশের মেহেদীর কাছে, আকাশ নকআউট পর্বে বিজিবির সাইফুর রহমানের কাছে, সানিম নকাউট পর্বে স্বর্ণজয়ী সাদ-এর কাছে হেরেছেন।

Taikoando

স্বর্ণজয়ীদের মধ্যে দুইজন সাইমুল হাসান সাদ ও রাকিবুল ইসলাম সিফাতকে আগামীর সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় হিসেবেই দেখছেন ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। দুইজনই ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। -৬৩ কেজিতে আনসারের সাদ ফাইনালে হারিয়েছেন আগের স্বর্ণজয়ী জ্বলন্ত চাকমাকে। আনসারের আরেক খেলোয়াড় রাকিবুল স্বর্ণ জিতেছেন বিজিবির সাইফুর রহমানকে হারিয়ে। নারীদের -৫৩ কেজির ফাইনালে আনসারের প্রভা চাকমাকে হারিয়ে চকম দেখিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিগার সুলতানা।

তায়কোয়ানদোতে পাইপলাইন ভালো। এক্ষেত্রে বড় অবদান রাখছে সরকারী বিভিন্ন বাহিনী। জেলার ছেলে-মেয়েরা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো করলেই তাদের লুফে নিচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ আনসার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। ভালো খেললেই চাকরি, তাই ছেলে-মেয়েদের আগ্রহ বাড়ছে এই খেলাটিকে।

Taikoando

‘কিছু ছেলে-মেয়েকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিতে পারছি বলে তায়কোয়ানদো এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা গত এসএ গেমসে স্বর্ণ পেয়েছি। এখন আমরা দেখছি ওই গেমসে কোথায় কি সমস্যা ছিল, গ্যাপ ছিল। কোন জায়গায় ভালো করেছি। কোন জায়গায় খারাপ হয়েছে, কেন হয়েছে সেগুলো নিয়ে কাজ করে পরের গেমসের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ, যে আগের গেমসে স্বর্ণ পেয়েছে সেই দিপু তো পরের গেমসে ভালো নাও করতে পারে। তাই আমাকে নতুন নতুন খেলোয়াড় প্রস্তুত করতে হবে’- বলেছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম রানা।

খেলোয়াড়দের আগ্রহ, তরুণদের আগমণ ও সম্ভাবনার পাশাপাশি সমস্যাও আছে। ঢাকা এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ের পর দুই নারী খেলোয়াড় খেলাই ছেড়ে দিয়েছেন। ‘জাতীয় বা আন্তর্জাতিক, কেউ স্বর্ণ জিতলে আমরা তাদের আরো সুযোগ দিতে চাই। কিন্তু কেউ যদি বলেন খেলবো না, সেটা দুঃখজনক। কেউ পায়ে ব্যাথা, কারো ব্যক্তিগত, কেউ পারিবারিক সমস্যার কথা বলে খেলা ছেড়ে দিচ্ছেন। আরো একটা বিষয় আছে। চাকরি পাওয়ার আগে খেলোয়াড়দের যে মনোবল, আগ্রহ ও স্পিড দেখি চাকরি পাওয়ার পর সেটা কমে যায়। হয়তো ভাবে চাকরি তো হয়েই গেছে। কিন্তু আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় স্বর্ণ জিতি বলে আমাদের ওপর প্রত্যাশার চাপ থাকে। অনেক ফেডারেশনের যে চাপই নেই’- কষ্টের কথাও বললেন এসএ গেমস থেকে চারটি স্বর্ণ এনে দেয়া খেলার সাধারণ সম্পাদক।

Taikoando

স্বর্ণ এনে দেয়া এই ফেডারেশন এখনো পায়নি ট্রেনিংয়ের কোনো স্থায়ী জায়গা। তায়কোয়ানদোর গত ২৫ বছরের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এই ফেডারেশনের জন্য স্থায়ী স্থাপনা, ছেলে ও মেয়েদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের কোচ, ফেডারেশনে জনবল বৃদ্ধি এবং অধিক হারে বার্ষিক বরাদ্দ প্রদানের উদ্যোগ নিলেও তা কার্যকর হয়নি।

২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির অষ্টম সভা এ বিষয়গুলো দ্রুত বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছিল মন্ত্রণালয়কে। ২৫ অক্টোবর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য চিঠি দেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে। কিন্তু গত ৬ মাসে এর কোনো অগ্রগতিই হয়নি।

আরআই/আইএইচএস/