ইতিহাস গড়ার ফাইনাল আজ
সবই ছিল ব্রাজিল বিশ্বকাপে। গোল-উৎসব, অঘটন ও শ্বাসরুদ্ধকর নাটকীয়তা প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই ছিল। ৩২টি দল ও ২৪ দিনের বিরতিহীন ফুটবল সবার হৃদয় ছুঁয়েছে। ফুটবলের দেশ ব্রাজিল সর্বোচ্চ ফুটবলীয় বিনোদনই উপহার দিতে সক্ষম হয়েছে বিশ্বকে। টুর্নামেন্টের ফাইনালও পাচ্ছে ভিন্নমাত্রা। বিশ্বের সেরা ফুটবলার ও সেরা দলের মধ্যকার লড়াইয়ে এখন নজর বিশ্ববাসীর। সবাই অপেক্ষায় আছেন স্বপ্নের ফাইনালের। আজ আবসানও হবে এই প্রতীক্ষার। ফুটবলের ঐশ্বরিক শক্তির কেন্দ্রস্থল ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে স্বপ্নের ফাইনালে মুখোমুখি হবে আজ আর্জেন্টিনা ও জার্মানি। ব্রাজিলের রিওডি জেনিরোতে বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় ম্যাচটি শুরু হবে।
বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও জার্মানি দ্বৈরথের ইতিহাস অনেক পুরনো। সর্বশেষ গত আফ্রিকা বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইনদের লজ্জা দেয় জার্মানরা। এর আগে দু’টি ফাইনালে মুখোমুখি হয় দল দু’টি। ছিয়াশিতে কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা জার্মানদের হারিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা উপহার দেন আর্জেন্টাইনদের। চার বছর পর তার নেতৃত্বাধীন দলকে হারিয়েই বিশ্বকাপ জয় করে জার্মানি। কাকতালীয় হলেও সত্য, বিউটিফুল গেম ফুটবলের ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ বিশ্বকাপে ওই দুই আসরের পর দল দু’টি বিশ্ব আসরে আর সাফল্যের দেখা পায়নি। এখন দুই যুগ পর শিরোপাখরা দূর করতে তারাই আবার একে অপরের প্রতিপক্ষ! কী হবে আজ? মারাকানায় কে পরবে বিজয়মাল্য? আপাতত মিলিয়ন ডলার মূল্যের এই প্রশ্নের উত্তর কারো কাছেই নেই।
তবে বেশির ভাগ বোদ্ধার বিবেচনায় ফাইনালে ফেবারিট জার্মানি। নব্বইয়ের পর দেশটির প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা নিশ্চিত বলেই ধরে নিয়েছেন অনেকে। জার্মানদের পক্ষে বাজির দরও বেশি হওয়ার কারণ রয়েছে। সেমিফাইনালে স্বাগতিক ব্রাজিলকে ঐতিহাসিক ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত করে ইউরো জায়ান্টরা রাতারাতি শিরোনাম দখলে নেয়। বর্তমানে নিখুঁত একটি দল জার্মানি। দলটির কোথাও সামান্যতম দুর্বলতা নেই। বড় আসরে প্রতিনিধিত্ব করার অভিজ্ঞতায়ও বহু এগিয়ে রয়েছে তারা। তাদের ফুটবলারদের স্নায়ুচাপ সামলে নেয়ার ক্ষমতা সবাইকেই মোহিত করল।
জার্মানদের রক্ষণভাগের অতন্দ্রপ্রহরী ফিলিপ লাম ও জেরেম বোয়েটং। মাতাসাকার ও হুমেলসের রসায়নও জমেছে দারুণ। মধ্যমাঠ জার্মানির সবচেয়ে শক্তিশালী বিভাগ। ও’জিল, শোয়াইন্সতিগার ও ক্রুস যেকোনো রক্ষণভাগেই ফাটল ধরাতে পারেন। ফ্রন্টলাইনে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা মিরোস্লাভ কোসাকে আজো প্রথম একাদশে রাখবে জার্মানি। দ্বিতীয় স্ট্রাইকার হিসেবে খেলবেন টমাস মুলার। ছয় ম্যাচে ৫ গোল করেছেন তিনি। সেটপিস থেকে মুলারের গোল করার ক্ষমতা অসাধারণ। ব্রাজিলের বিপক্ষে কর্নার থেকে তার গোলের পরই শুরু হয় জার্মানদের গোল-উৎসব।
গ্রুপের প্রথম ম্যাচে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালকে বিধ্বস্ত করে ফেবারিট তকমার প্রমাণ রাখে জার্মানি। দলটি ফাইনালে পা রাখল টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় বিস্ময় উপহার দিয়ে। ফলে শিরোপা জয়ে ইউরো জায়ান্টদের এগিয়ে রাখা ছাড়া কোনো বিকল্পও কারো সামনে নেই। তবে আর্জেন্টিনাও একেবারে ফেলনা নয়। দলটিকে লায়নেল মেসি-নির্ভর ভাবার উপায়ও এখন আর নেই! চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে বিধ্বস্ত করে আলোচনায় উঠে আসা নেদারল্যান্ডসকে হারিয়েই ফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে দলটিকে একাই এগিয়ে নেন বার্সেলোনা সেনসেশন মেসি। নকআউটের প্রতিটি ম্যাচে দল হিসেবে খেলেছে দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা। প্রতিটি ম্যাচেই তাদের পারফরম্যান্সের উন্নতি হয়েছে। দেখার মতো বিষয় হচ্ছে, নকআউটের দু’টি ম্যাচ অতিরিক্ত টাইমে গড়ানোর পরও কোনো গোল হজম করেনি আর্জেন্টিনা। দলটির রক্ষণভাগের সমন্বয় সমালোচকদেরও হতবাক করেছে। রহো, গ্যারাই, ডেমিকেলিস ও জাবালেতা অসামান্য দৃঢ়তা দেখাচ্ছেন প্রতিটি ম্যাচেই। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার মাসকেরানো প্রয়োজনের মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ট্যাকল করে দলকে বিপদমুক্ত করছেন। পরিশ্রমী মিডফিল্ডার লুকাস বিলিয়া দারুণ খেলছেন গাগোর পরিবর্তে প্রথম একাদশে সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই। ইনজুরির কারণে সেমিতে খেলতে পারেননি আক্রমণভাগের অন্যতম অস্ত্র অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। ফাইনালে তার খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রয়োজনে তাকে বদলি হিসেবেও মাঠে নামাতে পারে আর্জেন্টিনা। এ ক্ষেত্রে এনজো পেরেজ প্রথম একাদশে সুযোগ পাবেন। আর আক্রমণভাগের নেতৃত্ব লায়নেল মেসির হাতেই।
আজকের ফাইনালকে অনেকেই দেখছেন মেসি ভার্সেস জার্মানি হিসেবে। কারণও পরিষ্কার। মেসির বলপায়ে জাদু দেখানোর সক্ষমতা সম্পর্কে অবগত সবাই। মুহূর্তের ম্যাজিকে কিভাবে প্রতিপক্ষকে ডোবাতে হয় তা ভালোই জানা বার্সেলোনার এই সুপারস্টারের। নকআউটের তিন ম্যাচে তিনি গোল পাননি। ফলে আজ ফাইনালে কিছু একটা করার ভাবনা তার মধ্যে কাজ কারবেই। ডি মারিয়া পুরো ফিট হলে একমাত্র স্ট্রাইকার হিসেবে হিগুয়েনকেই খেলাবে আর্জেন্টিনা। অন্যথা সার্জিও অ্যাগুয়েরোকে দেখা যেতে পারে দ্বিতীয় স্ট্রাইকার হিসেবে দলটির প্রথম একাদশে।আর্জেন্টিনা-জার্মানি স্বপ্নের ফাইনাল ম্যাচ পরিচালনা করবেন ইতালিয়ান রেফারি নিকোলা রিজোলি।