টি-টোয়েন্টিতেও টাইগারদের শুভ সূচনা
ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করার পর আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে রয়েছে মাশরাফি বাহিনী। আর এই আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে প্রাণ আপ সিরিজের প্রথম টি-টোয়ান্টি ম্যাচেও জয় তুলে নিয়েছে অধিনায়ক মাশরাফি। তবে এই ম্যাচে জয়ের মূল ভিত্তিটা গড়ে দেয় বোলাররা। টাইগার বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ১৩১ আটকে রাখে বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ের দেওয়া ১৩২ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই এনামুল হক বিজয়কে হারায় বাংলাদেশ। প্রথম ওভারের শেষ বলে দ্রুততার সঙ্গে রান নিতে গেলে রান আউট হন এই ব্যাটসম্যান। এরপর সাব্বির রহমানকে নিয়ে ৩৯ রানের জুটি গড়ে দলকে প্রাথমিক চাপ সামলে নেন তামিম ইকবাল।
ষষ্ঠ ওভারে তেনদাই চিসোরোর বলে ক্রেইগ আরভিনের হাতে দুর্দান্ত ক্যাচে পরিনত হয়ে ফিরে যান সাব্বির রহমান। ১৬ বলে ৩টি চারে ১৮ রান করেন তিনি। সাব্বিরের বিদায়ের পর ক্রেমারের বোলিং তোপে পরে বাংলাদেশ। এরপর ৩৫ রান যোগ করতে মুশফিক, নাসির এবং তামিমকে সাজঘরে ফেরান ক্রেমার।
সপ্তম ওভারে সিকান্দার রাজার হাতে হাতে ক্যাচ দিয়ে ক্রেমারের প্রথম শিকারে পরিনত হন দেশ সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। এরপর ১১তম ওভারের দ্বিতীয় ও পঞ্চম বলে নাসির হোসেন এবং তামিম ইকবালকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে সাজঘরে ফেরান ক্রেমার।
তামিমের বিদায়ের পর ক্রেমারের বোলিং ঘূর্ণিতে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়েছে বাংলাদেশ। সেট ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে পঞ্চম আঘাত হানে সফরকারীরা। ফলে ৮০ রানে সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে দারুণ চাপে পড়েছে স্বাগতিকরা। ২৮ বল মোকাবেলা করে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন তামিম। আর নাসির হোসেন করেন ১৬ রান।
তামিমের বিদায়ের পর লিটন দাসকে নিয়ে দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৩৮ রান যোগ করে দলকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন এই দুই ব্যাটসম্যান। দলীয় ১১৮ রানে চিসোরোর বলে ক্রেমারের তালুবন্দি হয়ে আউট হন লিটন। লিটনের বিদায়ের পর অধিনায়ক মাশরাফিকে নিয়ে বাকি কাজ শেষ করেন মাহমুদউল্লাহ। ১৭ ওভার ৪ বলে চার উইকেট হাতে রেখে দলের জয় নিশ্চিত করেন তারা। ২১ বলে ২টি চারের সাহায্যে ২২ রান করে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ। এছাড়া ১২ বলে ২টি চার এবং ১টি ছাক্কায় ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন মাশরাফি।
জিম্বাবুয়ের পক্ষে ২৯ রান ৩ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার ক্রেমার। এছাড়া চিসোরো নেন ২টি উইকেট।
এর আগে ম্যালকম ওয়ালারের ব্যাটিং ঝড়ে বাংলাদেশকে ১৩১ রানের টার্গেট দিয়েছে সফরকারীরা। শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রাণ আপ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে টস জিতে জিম্বাবুয়েকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ব্যাটিং নেমে শুরু থেকেই চাপে পরে জিম্বাবুয়ে। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ওপেনার সিকান্দার রাজাকে হারায় সফরকারীরা। রাজাকে মিড অফে লিটন দাসের ক্যাচে পরিনত করে সাজঘরে ফেরান মাশরাফি।
পরের ওভারেই আবার আঘাত হানেন আল-আমিন হোসেন। ছন্দে থাকা এই পেসারের বলে স্কুপ করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে ধরা পড়েন রেগিস চাকাভা। তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফির এক দুর্দান্ত ইনসুইং বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে গেছেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক এল্টন চিগুম্বুরা।
১০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পরা জিম্বাবুয়েকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন শেন উইলিয়ামস এবং ক্রেইগ আরভিন। দলের হয়ে এই জুটি ৩৮ রান যোগ করে নাসিরের বলে আউট হন শেন উইলিউয়ামস। এগিয়ে এসে খেলতে গেলে বল ব্যাটে করতে না পারায় স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন এই ব্যাটসম্যান।
উইলিয়ামসের বিদায়ের পর ওয়ালারকে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরেন আরভিন। এই জুটির করা ৬৭ রানে ঘুরে দাঁড়ায় সফরকারীরা। মূলত ওয়ালারের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দারুণ সংগ্রহ পায় তারা। মাত্র ২০ বলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক করেন এই ব্যাটসম্যান। জুবায়ের হোসেনের করা দশম ওভারে ১টি চার এবং ২টি ছক্কা মারেন ওয়ালার। পরের ওভারে নাসির হোসেনের বলে ২টি চার এবং ২টি ছক্কা মারেন তিনি।
১৫তম ওভারে মাহমুদউল্লাহ আরভিনকে বোল্ড করে বিপদজনক হয়ে ওঠা পঞ্চম উইকেট জুটি ভাঙ্গেন। এরপর জুবায়েরের ঘূর্ণিতে দ্রুত ফিরে যান জংউই এবং মাদজিভা। দলীয় ১২৭ রানে বাংলাদশের হয়ে হুমকি হয়ে ওঠা ওয়ালারকে ফেরান হালের সেনসেশন মুস্তাফিজুর রহমান। লিটন দাসের হাতে ক্যাচে পরিনত হয়ে সাজঘরে ফিরে যান ওয়ালার। আউট হবার আগে ৪টি চার এবং ৬টি ছক্কার সাহায্যে মাত্র ৩১ বলে ৬৮ রান করেন এই ব্যাটসম্যান। শেষ পর্যন্ত ১৯ ওভার ৩ বল খেলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৩১ রানে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে উইকেট পান মুসাফিজুর, মাশরাফি, আল-আমিন ও জুবায়ের হোসেন। এছাড়া মাহমুদউল্লাহ ও নাসির একটি করে উইকেট নেন।
আরটি/এমআর