রোমান সানার অলিম্পিকে খেলা অনিশ্চিত
টোকিও অলিম্পিকে খেলবেন রোমান সানা। গত বছর নেদারল্যান্ডসে ওয়ার্ল্ড আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে উঠে এ যোগ্যতা অর্জন করেছেন দেশসেরা এই আরচার। পরে তিনি ব্রোঞ্জও জিতেছেন। এগুলো সবারই জানা।
যদি অলিম্পিক গেমসে রোমান সানার পরিবর্তে অন্য কাউকে দেখা যায়? অবাক হবেন? না, অবাক হওয়ার কিছু নেই- রোমান সানার পরিবর্তে অন্য কাউকেও দেখা যেতে পারে আগামী অলিম্পিক গেমসে।
কারণ, রোমান সানা নয়, অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করেছে বাংলাদেশ। আরচারি ফেডারেশন দেশের সেরা পারফরমারকেই পাঠাবে টোকিওতে। হোক রোমান সানা বা অন্য কেউ। জানিয়েছেন বাংলাদেশ আরচারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল।
বুধবার শেষ হওয়া বিজয় দিবস আরচারিতে বাজে পারফরম্যান্স করেছেন রোমান সানা। দুটি ইভেন্টে অংশ নিয়ে কোনো পদকই পাননি তিনি। এ নিয়ে পরপর দুটি ঘরোয়া আসরে নিজের নামের সুবিচার করতে পারলেন না রোমান সানা। যে কারণে, ফেডারেশন তার পারফরম্যান্সে হতাশ। তবে নিজের পারফরম্যান্সে ফিরে এসে রোমান অলিম্পিকে খেলতে পারবেন- ফেডারেশন আছে সে প্রত্যাশায়।
‘আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে রোমান সানাকে উদ্বুদ্ধ করা, যাতে সে তার আগের পারফরম্যান্সে ফিরতে পারে। আমাদের এই যে ক্যাম্প চলছে (১৭ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটি) সেটাতো রোমান সানাকে কেন্দ্র করেই। সে যেন পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে সেজন্যই। বুধবার যখন টঙ্গী গিয়ে জানতে পারলাম রোমান কোনো পদকই পায়নি। তখন আমার খুবই খারাপ লেগেছে। আমাদের সব প্রচেষ্টা, কষ্ট, ব্যায়- সব তো রোমানকে ঘিরেই’-বলছিলেন বাংলাদেশ আরচারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক।
তাহলে কি রোমানের বিকল্প ভাবছেন? কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপলের জবাব, ‘এখনই আমরা সেটা ভাবতে চাই না। আমি আশাবাদী রোমান সানা তার পারফম্যান্সে ফিরে আসবে। আমরা চাই রোমানই পারফরম্যান্স ভালো করে অলিম্পিকে যাক। তবে এটাও ঠিক, আমাদের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেশের সেরা পারফরমারকেই পাঠাতে হবে। কারণ, অলিম্পিকে রোমান নয়, কোয়ালিফাই করেছে বাংলাদেশ। বিকল্প দরকার হলে ভাববো। সে অপসন দিয়েই রেখেছেন অলিম্পিকের আয়োজকরা।’
বিজয় দিবস আরচারিতে রোমানকে টপকিয়ে পদক জিতেছেন নতুনরা। যে কারণে কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপলের কষ্টও আছে, তৃপ্তিও আছে, ‘আমি চাই রোমান সানার মতো অন্তত ১৬ জন আরচার তৈরি হোক। এ জন্য নতুনরা ভালো করায় আমি খুশি। আবার রোমান খারাপ করায়ও কষ্ট আছে।’
আপনি বলছিলেন রোমানের মানের ১৬ জন আরচার চান। এখন কি ওর মানের আছেন কেউ যারা তাকে টপকে অলিম্পিকে যেতে পারেন? কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপলের জবাব, ‘অবশ্যই আছে। আমাদের ব্যাকআপ আছে ওর (রোমান) মানের। এই যে, বিজয় দিবস আরচারিতে রোমান সানা যে কেবল আবদুর রহমান আলিফের কাছে হেরেছে তা কিন্তু নয়, সে তামিমের কাছেও হেরেছে। তামিমের স্বর্ণ পাওয়ার ক্ষুধা আছে। স্বর্ণ পেয়েছেও কমনওয়েলথ ইয়ুথ গেমসে। শেষ কথা আমরা অলিম্পিকে সেরা পারফরমারকেই পাঠাবো।’
কবে নাগাদ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে যে, টোকিও অলিম্পিকে কে যাচ্ছেন আরচারিতে? কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপলের জবাব, ‘এখনো নাম পাঠানোর সময় আসেনি। আইওসি যখন এন্ট্রি বাই নেম পাঠাতে বলবে তখনই আমরা চূড়ান্ত নাম দেবো। তাই এখনই কিছু বলা সম্ভব না। তাছাড়া রোমানের মানসিক অবস্থা খারাপ হয় এমন কিছু বলা যাবে না।’
নিজের পারফরম্যান্স ধরে রেখে রোমান সানাই যদি অলিম্পিকে খেলতে যেতে পারেন তাতে বেশি খুশি হবেন কাজী রাজীবউদ্দীন আহমেদ চপলই। তার ব্যাখ্যাও দিলেন বাংলাদেশের আরচারিকে বিশ্বমানে তুলে আনা এই সংগঠক, ‘রোমান সানার কয়েকটি অ্যাডভান্টেজ হলো- তার অভিজ্ঞতা। সে যদি মানসিকভাবে সুস্থ্য থাকে তাহলে সে বুঝবে ওই দিনের আবহাওয়ায় কিভাবে তীরটা ছোড়া যেতে পারে। তারপর কোচের নির্দেশনা। যে খেলে সে কিন্তু অনেক সময় পুরোটা বুঝতে পারে না। পেছন থেকে একজন কমান্ড করে, কিছু সাংকেতিক বিষয় আছে। এটা বোঝার সক্ষমতা তার আছে।’
টোকিও অলিম্পিক আরচারিতে এ পর্যন্ত ৩৮ টি দেশ কোয়ালিফাই করেছে। এর মধ্যে এশিয়ার দেশ ১৪ টি। সুযোগ আছে আরো। বাংলাদেশও মেয়েদের এককে কোয়ালিফাই করার চেষ্টা করবে। আগামী ১৮ থেকে ২১ জুন ফ্রান্সের প্যারিসে হবে, ‘ফাইনাল ইনডিভিউজুয়াল কোয়ালিফিকেশন টুর্নামেন্ট’।
সেখানে বাংলাদেশ মেয়েদের কোয়ালিফাই করানোর চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক, ‘আমাদের তো পুরুষ ব্যক্তিগত ইভেন্টে কোয়ালিফাই করাই আছে। এখন মেয়েদের জন্য চেষ্টা করবো। হলে তো আমাদের জন্য আরো বিশাল অর্জন হবে।’
গত বছর জুনে ইতিহাস গড়ে অলিম্পিক আরচারিতে বাংলাদেশকে খেলার সুযোগ করে দিয়েছিলেন রোমান সানা। নেদারল্যান্ডসকে ওয়ার্ল্ড আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপের পুরুষ এককের সেমিফাইনালে উঠে অবিস্মরণীয় সাফল্য দেখিয়েছেন বাংলাদেশের সেরা এ আরচার।
পরে ব্রোঞ্জের লড়াইয়ে রোমান ৭-১ সেট পয়েন্টে হারিয়েছিলেন ইতালির নেসপলি মাওরোকে। ওয়ার্ল্ড আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপে রোমান সানাই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পদক জিতেছেন। তার কল্যাণেই বাংলাদেশ আরচারি ইভেন্টে অংশ নেবে টোকিও অলিম্পিকে।
টোকিও অলিম্পিক হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে। করোনাভাইরাসের কারণে গেমস পিছিয়ে নেয়া হয়েছে আগামী বছর (২৩ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট)। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে গেমস আর পেছাবে না। তখন বাতিলই করা হতে পারে অলিম্পিক ২০২০।
আরআই/আইএইচএস/জেআইএম