রেকর্ড গড়ে টেস্ট সিরিজ জয়
সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করলো স্বাগতিক বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এ নিয়ে ৫ বছর পর টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পেলো টাইগাররা। সর্বশেষ ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয় পেয়েছিলো বাংলাদেশ। এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে এটি বাংলাদেশের ছয় নম্বর টেস্ট জয়ের ঘটনা।
টেস্টে সিরিজ জয়ের পাশাপাশি ইতিহাসে ঠাঁই করে নিলেন সাকিব আল হাসান। একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ম্যাচে দশ উইকেটের কীর্তি গড়লেন তিনি।
খুলনা টেস্টে জয়ের জন্য সফরকারী জিম্বাবুয়ে দলকে শেষ দিনে ৩১৪ রানে টার্গেট দিয়েছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু স্বাগতিক স্পিনারদের অসাধারণ পারফর্মেন্সে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৫১ রানেই গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। ফলে তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয়টিতে ১৬২ রানে বড় জয় পায় মুশফিকুর রহিমের দল।
দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের পক্ষে সাকিব আল-হাসান পাঁচটি উইকেট দখল করেছেন। ১৮ ওভার বল করে ৪৪ রান দিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৪তম পাঁচ উইকেট তুলে নেন সাকিব। এছাড়া অপর দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম তিনটি এবং জুবায়ের হোসেন দুটি উইকেট দখল করেছেন।
খুলনা টেস্টে বাংলাদেশের জয়ের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল-হাসান। প্রথম ইনিংসে দারুণ এক সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে দলের বিশাল সংগ্রহ এনে দিয়েছিলেন। এরপর বল হাতে প্রথম ও দুই ইনিংসে ৫টি করে মোট ১০ উইকেট নিয়ে প্রায় একাই ধসিয়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইন আপকে।
খুলনা টেস্টে অসাধারণ এই পারফর্ম্যান্সে ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা দুই অলরাউন্ডার ইয়ান বোথাম ও ইমরান খানের পাশে বসেছেন সাকিব আল-হাসান। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এই ২ জনই শুধু ১ টেস্টে সেঞ্চুরিসহ ১০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখাতে পেরেছিলেন। এবার বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল-হাসানও তাদের কাতারে যোগ দিলেন।
শুক্রবার খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ে দল জয়ের জন্য ৩১৪ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে শুরু থেকেই সফরকারীদের চেপে ধরে বাংলাদেশ। সাকিব আল-হাসানের পাশাপাশি তাইজুল-জুবায়েরের দুর্দান্ত বোলিংয়ে কখনোই বড় প্রতিরোধ গড়তে পারেনি জিম্বাবুয়ে। দলীয় মাত্র ১৫ রানেই ৩টি উইকেট হারিয়ে শুরুতেই বিপর্যয়ে পরে সফরকারীরা। এরপর হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও চাকাভর জুটিতে ঘুরে দারাতে চেষ্টা করলেও সফল হয়নি ব্রেন্ডন টেলরের দল। মাত্র ৩৪ রানের ব্যবধানে শেষ ৬টি উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত মাত্র ১৫১ রানেই গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। ফলে ১৬২ রানের বড় জয় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।
দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬১ রান করেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। এর আগে টস জিতে নিজেদের প্রথম ইনিংসে তামিম ইকবাল ১০৯ এবং সাকিব আল-হাসানের ১৩৭ রানের উপর ভর করে ৪৩৩ রান করে বাংলাদেশ দল। জবাবে হ্যামিল্টন মাসাকাদজার সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ৩৬৮ রান তুলে জিম্বাবুয়ে।
৬৫ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ২৪৮ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ফলে জয়ের জন্য জিম্বাবুয়ের সামনে টার্গেট ঠিক হয় ৩১৪ রান।
বাংলাদেশর ইনিংস
প্রথম ইনিংস- ৪৩৩ (সাকিব ১৩৭, তামিম ১০৯, মাহমুদুল্লাহ ৫৬, মমিনুল ৩৫; পানিয়াঙ্গারা ৪৯/২, চাতাড়া ৬১/২, ওয়ালার ৬৫/২)
দ্বিতীয় ইনিংস- ২৪৮/৯ডি. ( মাহমুদুল্লাহ ৭১, মমিনুল ৫৪, শুভাগত হোম ৫০; ওয়ালার ৫৯/৪, এম, সাঙগয়ে ৮২/৪)
জিম্বাবুয়ে ইনিংস
প্রথম ইনিংস- ৩৬৮ (মাসাকাদজা ১৫৮, চাকাভা ১০১; সাকিব ৮০/৫, তাইজুল ৯৬/৩)
দ্বিতীয় ইনিংস- ১৫১ (মাসাকাদজা ৬১, চাকাভা ২৭; সাকিব ৪৪/৫, তাইজুল ৪৪/৩, ৪২/২)
ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ- সাকিব আল-হাসান (বাংলাদেশ)