ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন বিজেএমসি’র চাকরিচ্যুত দুই নারী অ্যাথলেট

রফিকুল ইসলাম | প্রকাশিত: ০৯:১৩ এএম, ৩০ এপ্রিল ২০২০

দু’জনের বাড়িই নোয়াখালী সদরে। নাসরিন আক্তারের গ্রাম লালপুর আর শিউল আক্তারের সোনাপুর। দু’জনই হাজিরা কার্ডে (অস্থায়ী ভিত্তিতে) চাকরি করতেন বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনে (বিজেএমসি)। সংস্থাটির হয়ে জাতীয় পর্যায়ের অ্যাথলেটিকসে অংশ নিয়েছেন। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের শেষের দিকে আড়াইশজনের মতো ক্রীড়াবিদকে অস্থায়ী চাকরি থেকে বাদ দিয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন নোয়াখালীর এই দুই নারী অ্যাথলেটও।

৮০০, ১৫০০ ও ৩০০০ মিটার দৌড়ে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেয়া শিউলি আক্তারের বাবা-মা নেই। মাকে হারিয়েছেন চার বছর বয়সে, বাবা গোলাম মাওলা তাদের পুরোপুরি এতিম করেছেন বছর আটেক আগে। সাত ভাইবোনের (৫ বোন, ২ ভাই) মধ্যে শিউলি চতুর্থ। বড় ভাই আলাদা থাকেন। বাড়ির সামনের রাস্তার পাশে মুদি দোকান তার। ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু সহায়তা ও বিজেএমসির মাসে হাজার আটেক টাকাতেই চলতো শিউলিদের সংসার। কিন্তু ১০ বছর ধরে করা সেই চাকরি হারিয়েছেন। অন্যরা হারিয়েছেন গত ডিসেম্বরে। শিউলি সর্বশেষ সাপ্তাহিক মাইনে পেয়েছেন ২০১৭ সালে।

অভাবের সংসার। টানাটানিতেই চলছিল দিন; কিন্তু করোনার কারণে পুরোপুরি দিশেহারা তাদের পরিবার। অনেকটা অর্ধাহারেই দিন কাটাচ্ছেন এই নারী দৌড়বিদ। নোয়াখালীর সোনাপুর থেকে ফোনে নিজেদের অভাবের কথা বলতে গিয়ে বারবার মুখে কথা আটকে যাচ্ছিল তার ‘এখন আর পারছি না। খেয়ে, না খেয়ে আছি আর কি।’

২৪ বছর বয়সী নাসরিন আক্তার বাবা আব্দুল জব্বার মারা গেছেন ২০০৮ সালে। মা ঘরে অসুস্থ। কোনো ভাই নেই। চার বোন তাদের। বড় তিনজনের বিয়ে হয়েছে। সপ্তাহে ১৮৫০ টাকা করে মাইনে পেতেন বিজেএমসি থেকে। গত ডিসেম্বর থেকে চাকরি নেই। মাকে নিয়ে উঠেছেন সেজো ভগ্নিপতির বাড়িতে। কোনোমতে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন মাকে নিয়ে।

২০১০ সাল থেকে চাকরি করতেন বিজেএমসিতে। প্রতিষ্ঠানটির হয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। ২০১৬ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটার রিলেতে স্বর্ণ জিতেছেন বিউটি, ইভা ও সুমির সঙ্গে। ২০১৫ সালে ৪০০ মিটারে স্বর্ণ জিতেছেন। নোয়াখালীর লালপুর থেকে নাসরিন বলছিলেন, ‘মাকে নিয়ে সেজো বোনের বাড়িতে উঠছি; কিন্তু এখন আর দিন চলছে না। মায়ের চিকিৎসার টাকা, খাওয়ার টাকা কোথায় পাবো তা নিয়ে চিন্তিত। বলতে গেলে একবেলা খেলে আরেক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়।’

করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন মানুষদের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন নিজেদের মতো করে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। তবে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন তাদের অ্যাথলেটদের জন্য দারুণ এক উদ্যোগ নিয়েছে। অসহায় অ্যাথলেটদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন একটি তহবিল গঠন করেছে। ইতিমধ্যে ৩ লাখ টাকার বেশি জমা হয়েছে তহবিলে, প্রতিশ্রুতি আছে আরো চার লাখের মতো।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব মন্টু বলেন, ‘আমরা সারাদেশের অভাবী অ্যাথলেটদের খোঁজ নিচ্ছি। আমাদের নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা এবং কাউন্সিলরদের নিয়ে জেলায় জেলায় সমন্বয় কমিটি গঠন করে দিয়েছি। ওই কমিটি সংশ্লিষ্ট জেলার অসহায় অ্যাথলেটদের তালিকা করে আমাদের দিচ্ছে। সে মোতাবেক নোয়াখালী জেলা থেকে ১২ জনের তালিকা আমাদের দেয়া হয়েছে। সাবেক দ্রুততম মানবী নাজমুন্নাহার বিউটি, ফেডারেশনের সদস্য রফিকউল্যাহ মিলন, ওহাব খান আছেন নোয়াখালীর সমন্বয় কমিটিতে। পুরো দেশের তালিকা পাওয়ার পর আমরা আমাদের ফান্ড থেকে সবাইকে সহায়তা করা হবে। ঈদের আগেআগে আমাদের এই ফান্ড থেকে সহায়তা দেবো।’

আরআই/আইএইচএস/এসএএস/জেআইএম